বাংলা৭১নিউজ,সাখাওয়াত হোসেন বাদশা: সফলতার নানা ধাপ অতিক্রম করে এবার “হয়রানিমুক্ত বিদ্যুতের অঙ্গীকার” নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এরই মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক সেবার মানকে আরও উপরে নিয়ে যেতে চায়।
ইতোমধ্যেই সফলতার মাপকাঠিতে বিদ্যুৎখাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে আরইবি অনেক এগিয়ে রয়েছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল- সব খানেই পল্লী বিদ্যুতের বিচরন। এই বিশাল কাঠামো ও ২ কোটি ৩৪ লাখ গ্রাহকের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করে বিআরইবি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন স্বপ্ন দেখছে- মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি রোধ করে গ্রাহক সেবার মান আরও বৃদ্ধি করা।
এজন্য প্রয়োজন গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আরইবি’র জেনারেল ম্যানেজার সন্মেলন থেকে মাঠ প্রশাসনে এমন নির্দেশনা দেয়াও হয়েছে। কিন্ত এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সঞ্চালন ও বিতরন লাইন নির্মাণ, সাব-স্টেশন নির্মাণ ও ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই সম্ভব গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অবঃ)। গ্রাহক সেবার মান আরও বৃদ্ধি, দূর্নীতি প্রতিরোধ, অভিযোগ দ্রুত নিস্পত্তি, সরকারের অঙ্গিকার মোতাবেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং “হয়রানিমুক্ত বিদ্যুতের অঙ্গীকার” এর শ্লোগানটি বাস্তবায়ন করার গুরু দায়িত্ব এখন তারই কাঁধে। আরইবিকে আজকের এই অবস্থানে আনার পেছনে তার নিরলস শ্রমের বিষয়টিও অনস্বীকার্য।
আর সে কারণেই সরকার তাকে বিআরইবি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রেখেছেন দীর্ঘদিন। মূলত তার কারনেই এখন দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। মাসে গড়ে ৩ লাখ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন। সরকার মনে করে, বিদ্যুতে তাদের অনেক সাফল্য। কিন্তু কোন কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে সব সাফল্য ম্লান হয়ে যায়।
একথা ঠিক যে, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে নতুন এলাকা বিদ্যুতায়ন ও নতুন সংযোগ দেয়ার কাজ। কিন্তু তাতে কমছে না গ্রাহকদের ভোগান্তি। অনেক এলাকাতেই বিদ্যুৎ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। যদিও লোডশেডিং মানতে নারাজ বিআরইবি।
এ ব্যপারে বিআরইবি চেয়ারম্যান জানান, বিদ্যুতের সমস্যা কোন কোন এলাকায় হতে পারে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ঝড়-বৃষ্টির কারণে, ডাল-পালা ভেঙ্গে বৈদ্যুতিক লাইন ছিঁড়ে যাওয়ার কারনে, পুরানো বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে, ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সার্বিক অর্থে মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। আমরা এই সুবিধাটা আরও বেশি মাত্রায় নিশ্চিত করতে চাই।
মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অবঃ) বলেন, দেশে মোট গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি তিন লাখ। এর মধ্যে শুধুমাত্র আরইবি’র গ্রাহক সংখ্যাই ২ কোটি ৩৪ লাখ। মাসে তিন লাখ পরিবারকে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছি। সেই সাথে গ্রাহকরা যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পায় এজন্য বিআরইবি মাঠ পর্যায় থেকে আগত সকল জেনারেল ম্যানেজারগণকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্যুৎখাতে বিআরইবি’র সাফল্যকে তিনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন জানতে চাইলে মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অবঃ) বলেন, পার্থক্যটা একেবারেই চোখে পড়ার মতো। তিনি বলেন, ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ সাল নাগাদ ৩০ বছরে বিআরইবি’র গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। বর্তমান সরকারের ৯ বছরে আরও ১ কোটি ৫৯ লাখ নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন বিআরইবি’র গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৩৪ লাখ।
চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে বিআরইবি’র বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ৪ লাখ কিলোমিটার, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী গ্রাহক শতকরা ৮৭ ভাগ, ৮৪০টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের মোট ক্ষমতা ৯৮০০ এমভিএ, সিষ্টেম লস ১০.৭৫ শতাংশ এবং বকেয়া ১ দশমিক ১০ মাস। এছাড়া, ইতোমধ্যে ২৪০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ২২০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ৩০ বছরে বিআরইবি’র গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। সেখানে আমরা মাত্র দুই বছরে গ্রাহক সংযোগ করেছি ৭৬ লাখ।
বিআরইবি চেয়ারম্যান বলেন, এগুলোতো সরকারের দৃশ্যমান সফলতা। বিআরইবি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, গ্রাহক সেবার মান আরও বৃদ্ধি, দূর্নীতি প্রতিরোধ, অভিযোগ দ্রুত নিস্পত্তি, সরকারের অঙ্গিকার মোতাবেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং “হয়রানিমুক্ত বিদ্যুতের অঙ্গীকার” এই শ্লোগানটি বাস্তবায়ন করতে আমরা পরিকল্পনা সাজিয়েছি। আর এই পরিকল্পনা তৈরী হয়েছে সাব-স্টেশন নির্মাণ ও ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার পরিবর্তন, যথাসময়ে রাইট অব ওয়ে নিশ্চিত করাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের লোড বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই।
মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অবঃ) বলেন, ইতোমধ্যেই আরইবি গ্রামাঞ্চলে ট্রান্সফরমার চুরি প্রায় শূন্যতে নামিয়ে এনেছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫৫ হাজার কিঃমিঃ লাইন নির্মাণ ও ১৮০০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র স্থাপন করে ৩৯ লাখ গ্রাহককে নতুন সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, ই-জিপি এর আওতাভূক্ত ক্রয়কার্যের শতভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরইবিসহ ৪৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আইএসও সনদ অর্জন করেছে।
বিআরইবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৫০ হাজার কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ ও ২২০০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র নির্মাণ করে নতুন আরও ২৫ লাখ নতুন গ্রাহক/পরিবারকে সংযোগ প্রদান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইনশাআল্লাহ এসব পরিকল্পনাও আমরা দৃশ্যমান করবো।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি