জেনেক্স ইনফোসিসসহ বিভিন্ন কম্পানিকে অবৈধ দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কারো সম্মতি ছিল না। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার বসানো পরিচালকদের চাপে ইউসিবি এসব ঋণ দিতে বাধ্য হয়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
খুব শিগগির এই ঋণ খেলাপিতে পরিণত হবে।ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিদর্শনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। শুধু ঋণই নয়, শেয়ার কারসাজির মাধ্যমেও ইউসিবিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী। এরই মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিসসংশ্লিষ্ট শেয়ার কিনে ৭৮ কোটি টাকার লোকসান করেছে ব্যাংকটি।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইউসিবি কর্তৃপক্ষ। সেখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে থাকা বোর্ড সদস্যদের মাধ্যমে হওয়া ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তের অনুরোধ জানায় ব্যাংকটি। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘ডি ফ্যাক্ট’ চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুজ্জামান। বোর্ড সদস্য না হলেও আড়াল থেকেই ইউসিবি লুটেছেন সাবেক ওই ভূমিমন্ত্রী।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে অঢেল সম্পত্তি নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি ইয়োইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ২০১৮ সালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ব্যাংকটির পূর্ববর্তী বোর্ড সদস্যদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন এবং নিজ পরিবার ও সহযোগীদের ইউসিবি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন। স্ত্রী রুখমিলা জামানকে চেয়ারম্যান এবং ভাই আনিসুজ্জামানকে নির্বাহী কমিটির প্রধান নিযুক্ত করেন সাইফুজ্জামান। কিন্তু এখন তিনি পলাতক।
৫ আগস্টের পর সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যায় সাইফুজ্জামানসহ তার পরিবার।গত ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে দায়িত্ব নেয় নতুন পরিচাল পর্ষদ। এরপর বিগত পরিচালকদের অনিয়মের আংশিক অনুসন্ধান করে নতুন পর্ষদ, যা লিখিতভাবে জানানো হয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে। এতে বলা হয়, অর্থ লুট করতে অসংগতি থাকা সত্ত্বেও হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে সাইফুজ্জামানের বোর্ড।
নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট জেনেক্স ইনফোসিস, জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার, এ অ্যান্ড পি ভেঞ্চার এবং এডব্লিউআর রিয়েল এস্টেটের নামে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের সুপারিশ ছাড়াই নীতিমালা লঙ্ঘন করে এই ঋণগুলো অনুমোদিত হয়, যা দ্রুত সময়ের মধ্যেই খেলাপিতে রূপ নেবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর সিআইডির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ৪৮ লাখ ডলার (প্রায় পাঁচ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা) ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬২০টি বাড়ি কেনেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ