বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের অবদান প্রায় ৪ শতাংশ ভারতে পদদলনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৭ লিবিয়ায় ২ ভাইকে জি‌ম্মি, মুক্তিপণ নিতে এসে গ্রেপ্তার ২ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে ব্যারিস্টার সুমন দুর্নীতিবাজের রোষানলে পাঁচমাসে ৬১১ অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান: সংসদে পরিবেশমন্ত্রী মেয়ের পরকীয়ার জেরে খুন হন সাবেক এমপির স্ত্রী, ১৩ বছর পর রহস্য ভেদ চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা উন্নয়ন প্রকল্পে এডিবির বিনিয়োগ ২২ হাজার কোটি টাকা নেত্রকোনায় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে গাজীপুরে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ কুয়েতে বিশেষ অভিযানে বাংলাদেশিসহ ৭৫০ প্রবাসী গ্রেপ্তার মতিউর ও স্ত্রী-সন্তান‌দের সম্প‌দের হিসাব চেয়ে নো‌টিস শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে বহু গ্রাম প্লাবিত আনন শিশুসাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক রোহিঙ্গাদের জন্য ১.৫ মিলিয়ন ইউরো দিচ্ছে ফ্রান্স অবশেষে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের তথ্য জানালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যয় স্কিম বাতিলে শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক: অর্থমন্ত্রী সৌদি গমনেচ্ছুদের প্রতারণা থেকে রক্ষায় কাজ করবে যৌথ টাস্কফোর্স কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান

দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর রেলপথ: প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দীর্ঘদিন পরও শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭
  • ৮৫৭ বার পড়া হয়েছে
ফাইল ছবি

বাংলা৭১নিউজ, নুরুল আলম বাকু, চুয়াডাঙ্গা থেকে ঃ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দীর্ঘদিনেও শুরু হয়নি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মানের কাজ। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও দীর্ঘদিনে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্থান ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগরের গুরুত্ব বাড়াতে ও সেইসাথে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী।
জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন হয় বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলার একটি আম বাগানে। পরবর্তীতে এই বৈদ্যনাথতলার নামকরন করা হয় মুজিবনগর। এরপর ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্মৃতি ধরে রাখতে এই আমবাগানটিতে গড়ে তোলা হয় স্মৃতিসৌধ। যা বর্তমানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। আর ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে ঐতিহ্যবাহী করে তুলতে পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে নানা স্থাপনা সম্বলিত মুজিবনগর কমপ্লেক্স। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন মুজিব সরকার ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে অর্থবহ করে তুলতে দর্শনা থেকে মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহন করে। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট একটি কূচক্রীমহল দেশের তৎকালিন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। এসময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে না থাকায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। এঘটনার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। এরপর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এসময় পুর্বের শুন্যতা কাটাতেই পার হয়ে যায় সরকারের পুরো মেয়াদ। আবারও দেশ শাসনে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও আওয়ামীগ ক্ষমতায় আসে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
২০১০ সালের ৫ অক্টোবর একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার ঘোষনা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবনগরে এসে ঐতিহাসিক মুজিবনগরকে আরও ঐতিহ্যবাহী করে তুলতে আবারও দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর রেলপথ নির্মানের ঘোষনা দেন এবং এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেন। ফলে বাস্তবায়নের পথে আবারও উঁকি মারতে শুরু করে দর্শনা-মেহেরপুর ভায়া মুজিবনগর রেলপথ নির্মান প্রকল্পটি। এরপর বিগত ২০১৩ সালের নির্বাচনে আবারও আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দীর্ঘ দিনেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রেলপথ বিভাগের একটি টেকনিক্যাল টিম সরেজমিন এসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উল্লেখিত নতুন ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে দুই বছর আগে। প্রস্তুত করা প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্টে প্রস্তাবিত ওই ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটিতে মোট ৬টি রেলস্টেশন ও ৩টি ব্রিজ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত স্টেশনগুলো হলো চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা সদর, হাতিভাঙ্গা ও চন্দ্রবাস এবং মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা সদর, মোনাখালী ও মেহেরপুর জেলা সদর। সমীক্ষা রিপোর্টের ওই প্রস্তাবনায় এ রেলপথটিতে ৩টি ব্রীজের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর উপর দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা পয়েন্টে একটি, একই উপজেলার ভৈরব নদের উপর কানাইডাঙ্গা পয়েন্টে ১টি ও ভৈরব নদের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর পয়েন্টে ১টি ব্রিজ রাখা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা রেলপথের মাঝখানে গাইদঘাট ও জয়রামপুর স্টেশন থেকে নতুন সৃষ্ট ভিন্ন দুইটি নতুন লাইন মিলিত হবে দামুড়হুদা স্টেশনে। যেটি, মুজিবনগর স্টেশন হয়ে মেহেরপুরে পৌঁছাবে। সমীক্ষা রিপোর্টের ওই প্রস্তাবনায় ৬টি স্টেশনসহ ৫৩ কিলোমটার রেলপথ নির্মাণের জন্য চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা এবং মেহেরপুরের মুজিবনগর ও মেহেরপুর সদর উপজেলায় মোট ৫৪০ একর কৃষি জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে দেশের দক্ষিনাঞ্চালের খুলনা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালিসহ ১৫-১৬টি জেলার মানুষ রেলপথে ঐতিহাসিক মুজিবনগর যাতায়াতের সুযোগ পাবে। অপরদিকে এ রেলপথেই মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের মানুষ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাজারে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া সম্প্রতি শুরু হওয়া খুলনা-মংলা রেলপথের নির্মান কাজ ষে হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। আর এ রেলপথের কারনেই প্রসার ঘটবে এ এলাকায় ব্যাবসা-বানিজ্যের। দর্শনা থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মান সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে মেহেরপুর থেকে এ রেলপথটি কুষ্টিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারন কাজও সহজ হবে।
এছাড়া সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে পাস হওয়া একদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন অন্যদিকে ফরিদপুর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মানকাজ সম্পন্ন হলে এসমস্ত জেলার সাথেও মেহেরপুর জেলার রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে গুরুত্ব বাড়বে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্থান ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগরের। দর্শনা থেকে মুজিবনগর ও মেহেরপুর হয়ে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী উন্নয়নের সূচনা হবে। সেইসাথে দর্শনা রেলবন্দর ও মুজিবনগরে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক কাষ্টমস্ ও ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট স্থাপন করলে এ রেলপথটি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করবে। ফলে উন্নয়নের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে অবহেলিত চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫-১৬ জেলার।
প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শওকত আলীর সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রাইমারি সার্ভে হয়েছে। জমির দাম-দরের ব্যাপারে ডিসি সাহেব বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেটা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। তবে এখনও ফাইনাল সার্ভে হয়নি।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com