বাংলা৭১নিউজ, মমিনুল ইসলাম মুন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধূরী কৃষিক্ষেত্র ও বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদানের জন্য ইতমধ্যে রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। বিগত ২০১১-১২ অর্থবছরে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মরুময়তা রোধে তাল-খেজুর বীজ পোরণ ও সাজিনা গাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং বিনামূল্য দুই কোটি খেজুর বীজ, এক লাখ তাল বীজ ও বিপুল পরিমাণ সাজিনা গাছ সরবরাহ করেন। তিনি জানতেন তাঁর নির্বাচনী এলাকা প্রচন্ড খরাপ্রকণ বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নাই। কিšত্ত একটি মোহে পড়ে তাচ্ছিলতা করে সাধারণ মানুষ তাঁর সেই আহবানে তেমন কোনো সাড়া দেননি। অথচ আজ বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত তাল ও খেজুর গাছ বজ্রপাত ও মরুময়তা ঠেকাতে কাজ করে এবং সাজিনা গাছ বিষাক্ত সাপের উপদ্রব কমায় বলে বৈজ্ঞাতিক ভাবে স্বীকৃত। এ খবর জানাজানি হবার পরই এবার সরকারি ভাবে এসব গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এমপি ফারুক চৌধূরীর দেখানো পথ অনুসরণ করেই নির্বাচনী এলাকায় তাল. খেজুর ও সাজিনা গাছ গালানো শুরু হয়েছে। অথচ ওই সময়ে এমপি ফারুকের কথা মতো এসব গাছ লাগানো হলে এখন এই নির্বাচনী এলাকার পুরোচিত্রই পাল্টে যেতো।
জানা গেছে, প্রচন্ড খরাপ্রবণ তানোরসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চল তাল, খেজুর ও সাজিনা গাছ চাষের উপযোগী। ফলে এসব এলাকার রাস্তার দুই ধারে পরিকল্পিত ভাবে তাল, খেজুর ও সাজিনা গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি এলাকার কৃষকরা সহজেই আয় করতে পারেন হাজার হাজার টাকা। তাল ও খেজুর গাছের রস, খেজুর, তালকুর (কাঁচা তাল) ও সাজিনা ডাটা বিক্রি করে স্বাবলম্বি হতে পারেন হাজার হাজার কৃষক। কারণ এসব এলাকায় তাল ও খেজুর গাছের ডাল থেকে জ্বালানী এবং তাল গাছ থেকে ঘরের তীর, পাইড়, ডুঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য সামগ্রী বানিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও তাল ও খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী করে দেশের বিভিন্ন এলাকা এমনকি বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কৃষিবিদগণ।
স্থানীয় কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালের আদিবাস মধ্যে আফ্রিকায়। এর ইংরেজি নাম প্লামইয়ারা প্লাম। তালের বৈজ্ঞানিক নাম বারোসাস ফ্ল্যাবিলিফার। এটি প্লামী পরিবারের খেজুর, নারিকেল,সুপারি, বাহারি পাম পরিবারভুক্ত গাছ। তাল গাছ আঁটি বা বীজ থেকে হয়। একটি তাল গাছ কমপক্ষে বারো বছর পর ফল দেয় ও প্রায় একশ’ বছর পর্যন্ত বাঁচে। একটি তাল গাছ একশ’ থেকে দুশটি ফল দেয় ও প্রায় মৌসুমে এক হাজার লিটার রস পাওয়া যায়। যেখান থেকে প্রায় ১২০ কেজি থেকে ১৩০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। পাকা তাল বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় কৃষক ও তাল গাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজারে তালকুর (কাঁচা তাল) বিক্রি হয় একটাকা চোখ হিসেবে। পাকা তাল বিক্রি হয় ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকায়। তালের রস বিক্রি হয় ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। তালের গুড় বিক্রি হয় ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর তাল গাছ বিক্রি হয় সাইজ অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক জৈষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তাল গাছ রয়েছে। এখান থেকে তাল উৎপাদন হয় প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন। সব থেকে বড় কথা তাল গাছ গরু-ছাগলে খায় না। প্রায় অযতœ ও অবহেলার মধ্যে তাল গাছ বড় হয়। তাল গাছের ডাল, তালের রস,তাল ও তালকুর সব কিছুই কৃষক সহজে বিক্রি করতে পারে। তাল গাছের ডাল কৃষকরা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তালের রস থেকে গুড় তৈরী করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি ও বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। চিনি ও আখের গুড়ের চেয়ে তালের গুড় সস্তায় বিক্রি করা সম্ভব। এই অঞ্চলের রাস্তার দুই ধারে পরিকল্পিত ভাবে তাল ও খেজুরগাছ লাগিয়ে কৃষকরা হাজার হাজার টাকা আয় করে স্বাবলম্বি হতে পারেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস