বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ঢাকায় দিনভর তাপমাত্রা থাকবে কম, অনুভূত হবে শীত গাজায় ৫ শিশুসহ আরও ৪৯ জনকে হত্যা করলো ইসরায়েল ‘পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ইইউ : রিজওয়ানা হাসান সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ উত্তেজনা রাজধানীতে পঙ্গু হাসপাতালে আগুন পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইইউর সহায়তা চাইলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত পণ্যের শুল্কে পরিবর্তন আনবে না সরকার অংশীজনরা কী চান তার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন কবে হবে ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া ২ লাখ ৩৮ হাজার বেকারের কর্মসংস্থান করবে বেজা খালেদা জিয়াকে বার্তা পাঠিয়ে যা বললেন জিএম কাদের ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন এলএনজি ও চাল আমদানি, ব্যয় ১০২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা নাঈমুল ইসলাম খান ও তার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বিমসটেক সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা কবে নাগাদ সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পাবে জানি না: শিক্ষা উপদেষ্টা ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধান বিচারপতি পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে আহত ১০০ জন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় শুনানি মুলতবি

ঢামেকের ফ্লোরে চলছে চিকিৎসা : স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রোগীরা

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ৫ মে, ২০১৮
  • ২১৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দু’হাতে সাদা কাপড়ের ব্যান্ডেজ। পাশে লোহার স্ট্যান্ডের ওপর ঝুলছে স্যালাইনের পাইপ। প্লাস্টিকের পাতলা একটা পাটি ফ্লোরের ওপর বিছিয়ে হাত দুটি উঁচু করে শুয়ে কাতরাচ্ছে অাকতার হোসেন (২৬)। তিনি এসেছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার চাঁদগাও বাজার এলাকা থেকে। বাসার ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে স্পৃষ্ট হয়ে দগ্ধ হন তিনি। অাগুনে ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে স্বজনরা তাকে প্রথমে নিয়ে যান চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে বার্ন রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা না থাকায় চিকিৎসকরা তাকে রেফার করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। পরে তাকে নিয়ে অাসা হয় ঢামেকের বার্ন ইউনিটে।

কিন্তু এখানে এসে এক সপ্তাহ ধরে তিনি চিকিৎসা নিলেও পাননি কোনো বেড। তাই বাধ্য হয়ে স্বজনরা অাকতারকে রেখেছেন ভবনটির ৫ম তলার রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত উন্মুক্ত স্থানের ফ্লোরে। যেখানে নেই কোনো বেড বা উপযুক্ত চিকিৎসা সেবার পরিবেশ।

এমন অবস্থা শুধু অাকতার হোসেনের ক্ষেত্রেই নয়, নরসিংদীর ফয়েজ মিয়া (৬৫) হবিগঞ্জের সিরাজুল (৩৫), নীলফামারীর হৃদয় (১৪) সহ একাধিক বার্ন রোগীর। যারা দিনের পর দিন ফ্লোরে শুয়ে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এদের কারো কারো শরীরে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বার্ন রয়েছে। অাবার কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়ায় এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন এখানে।

তবে তারা কতটুকু চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন জানতে চাইলে এসব রোগীদের স্বজনরা জানান, নিরুপায় হয়েই উপজেলা জেলা মাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এতো দূরে অাসতে হয়েছে তাদের। জেলা-উপজেলায় পোড়া রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মূলত এখানে এসেছেন তারা। বেড না পেলেও তারা যাতে চিকিৎসকদের সেবাটা পান সেই প্রত্যাশায় ফ্লোরে বিছানা পেতে অবস্থান নিয়েছেন।

তবে এই প্রতিবেদকের কাছে কেউ কেউ অভিযোগও করেছেন যে, এমন জায়গায় রাখায় তাদের রোগীর লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হচ্ছে। পোড়া স্থানের চিকিৎসার জন্য এসে মানসিক ও শারীরিকভাবেও অসুস্থ হচ্ছেন বলে জানান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢামেকের বার্ন ইউনিটে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় রোগীদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে চলাচলের করিডোর ও উন্মুক্ত ফ্লোরে। শুধু বার্ন ইউনিটে নয়। একই চিত্র ঢামেকের মূল ভবনের শিশু বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। যেখানে হাঁটার মতো জায়গা পর্যন্ত পাওয়া দুষ্কর। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যেতে হলে রোগীর গা ঘেষে কিংবা গায়ের ওপর দিয়ে পার হয়ে তারপর যেতে হয়। ফলে চিকিৎসা নিতে অাসা রোগীরা পাচ্ছে না উপযুক্ত সেবা। এতে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন রোগীর সুস্থতার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। সেক্ষেত্রে রোগীর জন্য রাখতে হবে নিরাপদ অাসন ও কক্ষ। বিশেষ করে যারা বার্ন রোগী তাদেরকে সর্বদা নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত স্থানে রাখতে হবে। যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।

অর্থাৎ সাধারণ মানুষ সচরাচর বিচরণ করতে পারবে না এমন স্থানেই রাখতে হবে তাদের। যাতে করে মানুষের শরীরে থাকা জীবণু সংক্রমণ সৃষ্টি করতে না পারে। কারণ অসুস্থ রোগীর শরীরে সাধারণ যেকোনো জীবাণু দ্রুত কার্যকর হয়ে যায়। এতে ছোট রোগও ভয়াবহ অাকার ধারণ করতে পারে। কিন্তু ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীই সংক্রমণ ঝুঁকিতে। তাদের চারপাশে মানুষজন অবাধে বিচরণ করছে। এমনকি তাদেরকে রাখা হচ্ছে চলাচলের স্থানে। যেখানে জীবণুর সংক্রমণ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশের দগ্ধ হওয়া রোগীরা অাসেন ঢামেকের বার্ন ইউনিটে। জেলা-উপজেলায় উপযুক্ত চিকিৎসক এবং পর্যাপ্ত উপকরণ সঙ্কটের কারণে সেসব স্থানের রোগীদের পাঠানো হয় এখানে। এ কারণে ঢামেক বার্ন ইউনিট প্রথমে ৫০ শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে রোগীদের প্রচণ্ড চাপে ১০০ ও পরে ৩০০ বেডে রূপান্তর করা হয়। তবুও সঙ্কট কাটেনি। উল্টো বেড়েই চলেছে রোগীর চাপ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার রোগী। যাদের বেশির ভাগই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা। তাদের মধ্যে অধিকাংশই চিকিৎসা নিয়েছেন গড়ে ১৫ দিন থেকে দেড় মাস ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা সেবার কারণে নতুন রোগীদের জন্য বেড সঙ্কট ক্রমেই বাড়ছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্তও প্রায় ২২ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে এখানে। প্রতিদিন ৩০০ বেডের এই ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় সাড়ে চারশ থেকে ৫০০ রোগী। ফলে দেড় থেকে দুইশ রোগীকে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

ঢামেকের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এখানে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী অাসছে এবং চিকিৎসা নিচ্ছে তাতে নিঃসন্দেহে রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বেড না থাকলেও তাদের ফ্লোরে হলেও জায়গা দিতে হচ্ছে তা কিন্তু নয়, ফ্লোরও খালি নেই এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। কী অার করার আছে। সারাদেশ থেকে এখানে ছুটে অাসে সবাই। তাই চাইলেও তাদেরকে বের করে দেয়া যায় না। অামাদের চিকিৎসকরা এ অবস্থায়ও সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বার্ন রোগীর শরীরে সংক্রমণ হয় খুব দ্রুত। তাই তাদের রাখতে হয় নিরাপদ স্থানে। কিন্তু অামাদের এখানে তো এক ইঞ্চি জায়গাও খালি থাকে না। প্রতিদিন অগ্নিকাণ্ড, গ্যাস বিস্ফোরণ এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দগ্ধ হয়ে যেভাবে দিনরাত অাসছে বার্ন রোগীরা তাতে মানুষ সচেতন না হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। মানুষ সচেতন হলে এসব অগ্নিকাণ্ডের মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হাসপাতালে রোগী হয়ে অাসতে হবে না।

তবে রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ১২ তলা বিশিষ্ট ৫ শ’ শয্যার শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হচ্ছে। অাগামী সেপ্টেম্বর মাসেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

বাংলা৭১নিউজ/জেড এইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com