জাল সনদ ব্যবহার করে ৩৪ বছর ধরে আইন পেশা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জের একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। তিনি জাল সনদেই সাত বছর দখল করে ছিলেন জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার (সরকারি কৌঁসুলি বা পিপি) পদ।
বুধবার (৩০ আগস্ট) তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি (অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি) সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরী বলেন, ‘জাল সনদের যে বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে, এখানে আমাদের সরাসরি কিছু করার সুযোগ নেই। তার সনদ জাল কি না সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সনদ যাচাই করি না। এটি যাচাই করে বার কাউন্সিল। সেখান থেকে নিবন্ধিত হওয়ার পর আমাদের এখানে চিঠি দেয়। সে অনুযায়ী আমরা সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজুল হকের দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পাস সনদে পাসের সন হিসেবে লেখা আছে ১৯৮০। এতে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের সই রয়েছে। অথচ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান ১৯৯২ সালে। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী। এছাড়া সনদে ওপরের বাম পাশে রোল নম্বর, ডানপাশে সিরিয়াল নম্বর রয়েছে; যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রে ব্যবহার করা হয় না।
সিরাজুল হক ১৯৮৫ সালে ঢাকা ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেছেন বলে সনদ দেন। কিন্তু ঢাকা ল কলেজে যোগাযোগ করে জানা যায়, এ সনদটিও জাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র একজন আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতা বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং সিরাজুল হকের সনদ জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে এখন কী পর্যায়ে আছে তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।’
আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব (জিপি/পিপি) মো. আব্দুছ ছালাম মণ্ডল সই করা এক পত্রে বুধবার সিরাজুল হকের পিপি পদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, জনস্বার্থে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তাকে অনতিবিলম্বে মামলার নথিপত্রসহ যাবতীয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সিরাজুল হককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হবিগঞ্জ আদালতের কয়েকজন আইনজীবী জানান, সিরাজুল হক জাল ও ভুয়া সনদে গত ৩৪ বছর ধরে জেলা জজ কোর্টে আইন পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুয়া সনদধারী আইনজীবী হয়েও ২০১৬ সালে তিনি পিপি হিসেবে নিয়োগ পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না। তবে আমার বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জে একটি এবং ঢাকায় একটি গ্রুপ কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, সরকার যখন যাকে খুশি এ পদে (পিপি) নিয়োগ দিতে পারে, আবার যাকে খুশি বাদ দিতে পারে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ