জর্ডানের আছিল গার্মেন্টে কর্মরত ৪৫৪ বাংলাদেশি শ্রমিক বকেয়া বেতন ও সোশ্যাল সিকিউরিটির টাকা বুঝে পেয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ দূতাবাস আম্মানের প্রথম সচিব (শ্রম) উম্মে সালমার উপস্থিতিতে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় তাদের হাতে অর্থ তুলে দেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) উম্মে সালমা বলেন, জর্ডানের শ্রম মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে আগামী শনিবার থেকে শ্রমিকদের বাংলাদেশে পাঠানো শুরু হবে। তাদের বিমান টিকিট জর্ডানের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হবে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কয়েক ধাপে আলোচনায় বসে দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।
তিনি বলেন, প্রতি মাসেই একাধিকবার আছিল গার্মেন্ট পরিদর্শন ও নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছে দূতাবাস। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। অবশেষে আমরা সফল হয়েছি। জর্ডান শ্রম মন্ত্রণালয়, আইএলও, ট্রেড ইউনিয়নসহ যেসব সংস্থা ও কোম্পানি এই সমস্যা সমাধানে দূতাবাসকে সহযোগিতা করেছে তাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
আছিল গার্মেন্টের মেশিন অপারেটর মো. মোতাহার জানান, আমি ছয় মাসের বকেয়া বেতনসহ পাঁচ বছরের লিভের টাকা পেয়েছি। গতকাল সোশ্যাল সিকিউরিটির টাকাও পেয়েছি। আমাদের সব দাবি দাওয়া পূরণ হয়েছে। এজন্য আমি বাংলাদেশ দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের অক্লান্ত চেষ্টার ফলেই আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পেয়েছি।
আছিল গার্মেন্টের আরেক কর্মী কারিমা আকতার জানান, আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া বুঝে পেয়েছি। সোশ্যাল সিকিউরিটির টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। সালমা ম্যাডামকে জানালে তিনি তোলার ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল না। কারও কারও পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়েছিল। ম্যাডাম একদিনেই আমাদের দেশে ফেরার জন্য দরকারি কাগজপত্রের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
করোনা পরবর্তী আছিল গার্মেন্টে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আছিল গার্মেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা নানা ধরনের অভিযোগ ও অনিয়ম সম্পর্কে দূতাবাসকে অবহিত করে। দূতাবাস আছিল গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং জর্ডান শ্রম মন্ত্রণালয় ও ট্রেড ইউনিয়নকে জানায়।
পরে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান ও নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতির জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কোম্পানিটি লে অফ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, ওয়ার্ক পারমিট, পাসপোর্ট নবায়ন এবং গারামা মউকুফের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং।
শ্রমিকদের অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় তা দূতাবাস জর্ডানের অন্যান্য গার্মেন্ট কোম্পানির সহায়তায় বাস্তবায়ন করে। তাদের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের জন্য অনুদান সংগ্রহ করে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ দূতাবাস সমস্যা সমাধানকল্পে জর্ডানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পাঁচবার আলোচনায় বসেছে।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ট্রেড ইউনিয়ন, বেটার ওয়ার্ক জর্ডান, জর্ডান গার্মেন্ট আক্সেসরিজ ও টেক্সটাইল এক্সপোর্টার’স অ্যাসোসিয়েশনসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বায়ারদের সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে কয়েক ধাপে আলোচনায় বসা হয়। এই বছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে জর্ডান শ্রম মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। কিন্তু সোশ্যাল সিকিউরিটির অর্থ দেশে ফেরত যাওয়ার পর দেওয়া হবে।
শ্রমিকদের অনুরোধে দূতাবাস, মন্ত্রণালয় ও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জর্ডান ছাড়ার পূর্বেই সোশ্যাল সিকিউরিটির অর্থ পরিশোধে সম্মত করে। জর্ডান ছাড়ার দিন বিমানবন্দরে শ্রমিকদের সোশ্যাল সিকিউরিটির অর্থ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকরা জর্ডানে দায় দেনা পরিশোধ ও ব্যক্তিগত দেনা পরিশোধ করার জন্য ভ্রমণের পূর্বেই সোশ্যাল সিকিউরিটির অর্থ দেওয়ার দাবি জানায়।
জর্ডান শ্রম মন্ত্রণালয় সাধারণত শ্রমিকদের ভ্রমণের দিন বিমানবন্দরে সোশ্যাল সিকিউরিটির অর্থ পরিশোধ করে থাকে। দূতাবাসের হস্তক্ষেপে ও শ্রমিকদের অবস্থা বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় এই অর্থ ভ্রমণের পূর্বেই পরিশোধে সম্মত হয়। শ্রমিকদের বিপুল পরিমাণ বকেয়া বেতন পরিশোধে দূতাবাস আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ব্যায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিদেশি ব্যায়ারদের সহায়তায় এই বিপুল পরিমাণ বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে সকল শ্রমিক তাদের দেনা পাওনা বুঝে নিয়ে আগামী রোববার থেকে বাংলাদেশে যাওয়া শুরু করবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ