বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ বাজেট পেশ করেছেন। উনি বলেছেন, ওনার কাছে এই বাজেট শ্রেষ্ঠতম বাজেট। আমি বলবো, জনগণের কাছে এই বাজেট নিকৃষ্টতম বাজেট।
বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৭- ২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এরশাদ এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত বলেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমার সঙ্গে ছিলেন। আমি সৈনিক। বাজেট বুঝি না। উনি বোঝেন। আমি ওনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বাজেট নিয়ে তিনি যতোই আত্মতুষ্টিতে ভোগেন না কেন- বাস্তবতা হচ্ছে, ছোট ব্যবসায়ী বা বড় ব্যবসায়ী, কামার-কুমার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক সবাই এক বাক্যে এই বাজেটকে দুঃসহ বাজেট বলেছে।
এরশাদ বলেন, আমি বুঝি না বিনিয়োগ ছাড়া, কর্মসংস্থান ছাড়া সত্যিকার উন্নয়ন কী করে সম্ভব? অথচ বাজেটে বিনিয়োগের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রবৃদ্ধিই উন্নয়নের মূল সূচক না।
ব্যাংকিং খাত এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, ব্যাংকগুলো লুটপাটের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। শিল্পায়নের জন্য বেসিক ব্যাংক করেছিলাম। সেই ব্যাংক লুটেরাদের কবলে পড়ে শেষ। বাকি ব্যাংকগুলোর অবস্থাও একইরকম।
তিনি বলেন, আমার সময় ৭টি ব্যাংক দিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাংক লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।
এরশাদ বলেন, বেশিরভাগ ব্যাংক তহবিল সঙ্কটে ভুগছে। অথচ ব্যাংক লুটেরারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রশ্ন রেখে বলেন, ব্যাংক লুটেরাদের কি আদৌ বিচার হবে না? কারা ব্যাংক লুটপাটের সঙ্গে জড়িত জনগণ তা জানতে চায়। তাদের নাম কি আমরা কখনোই জানতে পারবো না?
অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকখাতের লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করুন। তাদের নাম প্রকাশ করুন। বিচার করুন। তা না হলে এভাবে লুটপাট চলতেই থাকবে।
তিনি বলেন, শেয়ার মার্কেট, মানি মার্কেট টালমাটাল। দেশের একটি অবাক করা ঘটনা ঘটল। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। রিজার্ভ চুরি হল। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিল। কিন্তু আমরা জড়িতদের নামও জানতে পারলাম না। এর চাইতে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে।
বিমানে বেহাল অবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিমানে উঠি না ২৫ বছর। প্রধানমন্ত্রীর বিমানও খারাপ হয়। এটা কী করে সম্ভব? প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, বিমানের দিকে নজর দিন।
এদিকে বক্তৃতার শুরুতেই রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এরশাদ বলেন, আমার কোনো দোষ ছিল না। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। আমি নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ ওই নির্বাচনে অংশ নেননি।
নিজের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এরশাদ বলেন, বিচারপতি সাত্তার নির্বাচন করবেন। আমি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম, নির্বাচনের জন্য তাকে সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু এক বছরের মাথায় তিনি বললেন, আমার মন্ত্রিসভার সকল সদস্য দুর্নীতিপরায়ণ। আমি দেশ পরিচালনায় অপারগ। সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই।
এরশাদ বলেন, আমাকে মাঝে মাঝে বলা হয় স্বৈরাচার। আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। কিন্তু এ জন্য আমাকে ৬টি বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। চাঁদ-তারা দেখতে পারিনি। একটা মিষ্টি খেতে চেয়েও পাইনি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস