এনার্জি ড্রিংকসের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। আড্ডা, পার্টি কিংবা পিকনিক সবখানেই এই পানীয়ের ব্যবহার এক ধরনের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু-কিশোরদেরও হরহামেশাই এনার্জি ড্রিংকস পান করতে দেখা যায়। কিন্তু এসব এনার্জি ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা অনেকেরই অজানা। তাই এর বিকল্প হিসেবে চা পাতা থেকে স্বাস্থ্যসম্মত এনার্জি ড্রিংকস তৈরির গবেষণায় সাফল্য লাভ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল গবেষক।
জানা গেছে, দেশে চা নিয়ে এই ধরনের গবেষণা এটিই প্রথম। দুই ধরনের উপাদান ‘ব্ল্যাক টি’ এবং ‘গ্রিন টি’ নিয়ে টি-কার্বোনেটেড ড্রিংকস ‘টি-কোলা’ তৈরি করেছেন শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (এফইটি) বিভাগের তিন সদস্যের গবেষক দল।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গবেষক দলের প্রধান এফইটি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ কাছে এই গবেষণার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
গবেষণা দলের অন্যরা হলেন- এফইটি বিভাগের থিসিস গবেষক নাবিল নওরোজ বৈশাখ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. আল ইমরান জাকারিয়া।
এই ‘টি-কোলা’ উদ্ভাবনের ধারণা কোথা থেকে আসলো- জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ‘চা প্রদর্শনী-২০১৮’ তে চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চা থেকে কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস (টি-কোলা) তৈরি করতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা গবেষণা শুরু করি। প্রায় তিন বছর গবেষণা শেষে এবছর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ‘চা থেকে চা ছাড়াও বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, টি-কোলা, চায়ের আচার প্রভৃতি উৎপাদনের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
গবেষণায় ব্যবহৃত কাঁচামাল সম্পর্কে ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, এই ‘টি-কোলা’ তৈরি করতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তার অধিকাংশ আমাদের দেশেই রয়েছে। এতে পণ্যটি তৈরি করতে অন্যান্য বেভারেজের চেয়ে কম খরচ হবে। তাই এর দামও সীমিত থাকবে।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, গবেষণা সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে আমরা নিজেদের গবেষণাগারে কিছু টেস্ট সম্পন্ন করতে পারিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা আমাদের এই গবেষণাটি আরও বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এতে এ উদ্ভাবনটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
গবেষক নাবিল নওরোজ বৈশাখ বলেন, দুই ধরনের উপাদান ‘ব্ল্যাক টি’ ও ‘গ্রিন টি’ নিয়ে একটি মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর এবং আকর্ষণীয় ‘টি-কোলা’ প্রস্তুত করতে সক্ষম হই। আমাদের তৈরি ড্রিংকসে কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস করে দেখা যায়- সেখানে চায়ের উপকারী উপাদান পলিফেনল, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি খাদ্যগুণ রয়েছে। এছাড়া ভোক্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য আমরা সেনসরি অ্যানালাইসিস টেস্ট করে আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছি।
আরেক গবেষক আল ইমরান জাকারিয়া বলেন, আমরা যে ড্রিংকস তৈরি করেছি তার মেয়াদ তিনমাস পর্যন্ত থাকবে। তবে এ মেয়াদ আরও বাড়াতে কাজ চলছে। এছাড়া সুগারের পাশাপাশি এর সমগুণসম্পন্ন নন-সুগার প্রোডাক্ট ডেভেলপ করেছি যাতে করে ডায়াবেটিস রোগীরাও ‘টি-কোলা’ গ্রহণ করতে পারেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ