বাংলা৭১নিউজ, মো: নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ী : ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পরের বছরই তার জন্ম। পৈত্রিক বাড়ী ঝিনাইদহ জেলার রাউতরা গ্রামে। বাবা পতিত পবন সাহা পেশায় ছিলেন একজন ক্ষুদ্র হলুদ ব্যবসায়ী। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চলতো তাদের ৭ সদস্যের সংসার। অর্থের অভাবে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুতে পারেনি। ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর তার বাবা মাত্র ১৪ বছর বয়সে আরেক দরিদ্র পরিবার রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের বাঙ্গরদাহ গ্রামে নিতাই চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ভবেন চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে বিয়ে দেন। নতুন সংসারে এসে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তার স্বামী ধান কিনে চাল বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন। ধানের কুড়াগুলো স্থানীয় রাইচমিলে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে তা দিয়ে কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে চলতো তাদের সংসার। দারিদ্রতা তার মনটাকে সব সময় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। কিভাবে সচ্ছলতা আনা যায়। টানাটানারির সংসারেও সামান্য সামান্য করে স্বামীর অজান্তে জমাতে থাকেন কিছু টাকা। এভাবে আর কত চলবে, তা ভাবতেই হতাশ। আশায় বুক বাধি এ ভেবে যে তার জন্মস্থান রাউতরা গ্রামের অনেক পরিবার গাভীর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে। যেই ভাবা সেই কাজ, স্বামীকে বলে একটি গাভী কেনার জন্য। কিন্তু টাকা ! স্বামীর অনইচ্ছা। জমানো ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি উন্নত জাতের বকনা বাাছুর কিনে পুরোদমে সংসারের হাল ধরেন। এ গরুর খাবার দিতো শুধুই নিজের উৎপাদিত কুড়া ও ক্ষুদ। এ অভাবের সংসারে কেটে যায় ৫টি বছর। এ দিকে বিয়ের ৫ বছরের মধ্যেই ২ছেলের মা হন। পাশাপাশি গরু হতে ১০-১২ লিটার দুধ আসতে শুরু করলো। শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু দুধ রেখে অবশিষ্ট দুধ বাজারে বিক্রি করায় অভাব ঘুচতে শুরু হয়। নিজের খামারে নিজেরা কাজ করায় উন্নতির ঘাটতি নেই একটুও। আগে ছনের ঘর ছিল, সেটি ভেঙ্গে পাকা ঘর নির্মান করেছি। এমনকি রান্না ঘরও পাকা হয়েছে। তার দুদ্ধ খামারের আয় দিয়ে ৩ বিঘা জমি কিনে গরুর কাচা ঘাসের চাহিদা পুরনে নেপিয়ার ঘাসের আবাদ করছে। অতীতের কষ্টের কথা গুলো বলতে বলতে জীবন যুদ্ধে জয়ী চন্দনা রাণীর নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে চন্দনা রাণীর খামারে ৬টি ফ্রিজিয়ান গাভি, ১টি অষ্ট্রেলিয়ান গাভী, ১টি ইন্ডিয়ান গাভী, সেন্দি গাভি ২টি, এ ছাড়াও তার বর্তমানে ১৬টি বিদেশী ছাগল রয়েছে। প্রতিদিন ৩ টি গাভী ১১০ লিটার দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন খরচ হয় গাভীর জন্য গমের গুড়া, ডালের গুড়া, ভুট্টা, ধানের গুড়া বাবদ ৯ শত টাকা। এছাড়াও ১৫০ টি কবুতর আছে। তার খামারের উন্নতি দেখে তার পরামর্শে আরও ৫টি খামার স্থাপন করেছে পার্শ্ববর্তী লোকজন। তার দুই ছেলে মিন্টু বিশ্বাস, রিন্টু বিশ্বাস। মিন্টু বিশ্বাস বি এ পাস করে স্কয়ার কোম্পানীতে চাকুরী করে। আর ছোট ছেলে রিন্টু বিশ্বাস নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজের এইচ এস.সি দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করে। তার অভাব এখন দুর হয়েছে। জীবন যুদ্ধে একজন সফল উদ্যোক্তা চন্দনা রানী।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস