বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: একদিবসী ক্রিকেটে যতটা ঝলমলে বাংলাদেশ, বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচে ততটা নয়। এর কারণ অনভ্যস্ততা। ১৪ মাস পর যারা টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে তাদের তো এই সমস্যা হবেই। ইংল্যান্ডের দিকে তাকান। ২০১৬-এর শেষ নাগাদ তারা ১৭টি টেস্ট খেলে ফেলবে। এরমধ্যে উপমহাদেশেই আট সপ্তাহের ব্যবধানে সাতটি। বাংলাদেশে দুটি এবং পাঁচটি ভারতে, যার সূচনা হচ্ছে আজ চট্টগ্রামে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের আটটি টেস্টের সবগুলোতেই জেতা ইংল্যান্ড এবারও ফেভারিট। তবে যতই দীর্ঘ বিরতির পর বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে নামুক না কেন, তারুণ্যে উদ্ভাসিত এবারের দলটা লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখল দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে।
চট্টগ্রামে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছিলেন, বাংলাদেশ এত লম্বা সময় ধরে টেস্ট খেলে না জেনে যারপরনাই বিস্মিত তারা। ১৪ মাসেরও বেশি টানা টেস্ট ম্যাচ না খেলার কথা জানলে তাদের আকাশ থেকেই পড়ার কথা। ইংল্যান্ড টেস্ট খেলে সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্যারিয়ারে তিন দফায় পড়েছেন লম্বা বিরতির মধ্যে। কিছু করার নেই। আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন, ক্যারিয়ারের তিন বছর বসে থেকেই শেষ হল।
২০১০ সালের জুনের পর বাংলাদেশ টেস্ট খেলে ২০১১ সালের আগস্টে। প্রায় ১৪ মাস পর। বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের কাছে হার। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান সিরিজের পর বাংলাদেশ আবার খেলল পরের বছর নভেম্বরে। এর আগে লম্বা বিরতি ছিল ২০০৬-০৭ সালে। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই স্মরণীয় সিরিজ। ফতুল্লায় রিকি পন্টিংয়ের দলকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস সঙ্গে নিয়ে কোথায় এগিয়ে যাবে দল, উল্টো এরপরই ১৩ মাসের বিরতি।
২০০৬ সালের এপ্রিলের পর আবার টেস্ট ২০০৭ সালের মে মাসে! তবে সবচেয়ে দীর্ঘ এবারের বিরতি। টেস্টে বরাবরই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের উন্নতি দৃশ্যমান হচ্ছিল। পায়ের নিচে জমিনটা শক্ত অনুভূত হচ্ছিল একটু হলেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় তামিম-ইমরুলের রেকর্ড জুটিতে বীরোচিত ড্র, বৃষ্টির অবদান থাকলেও ভারতের বিপক্ষে ড্র, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে লিড নেয়ার পর বৃষ্টিতে ড্র, সিরিজও ড্র। সেখান থেকে কোথায় পরের ধারে এগিয়ে যাবে দল, হল উল্টোযাত্রা।
সবচেয়ে সুসময়ের পরই সবচেয়ে লম্বা বিরতি! বাংলাদেশের এই লম্বা বিরতিগুলোয় আইসিসির ভবিষ্যৎ সূচির দায় বা দুর্বলতা তো ছিলই, তবে সবচেয়ে বেশি দায় বিসিবিরই। ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আগের সময়টুকু ইচ্ছে করেই টেস্ট বাদ দিয়ে ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এবারের বিরতির সময়টাতেও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেলার সুযোগ না নিয়ে টি ২০ বিশ্বকাপের জন্য খেলা হয়েছে শুধু টি ২০। বাংলাদেশই সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র দেশ, যারা বিশ্বকাপের আগে পারলে আর সব খেলা বাদ দিয়ে দেয়। সেটার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ খেলার অপ্রতুলতায়। আর কে না জানে, টেস্টে উন্নতি করতে হলে বেশি খেলার বিকল্প নেই!
এবার তো টি ২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি, ফিটনেস ক্যাম্প মিলিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট প্রস্তুতির অবস্থা আরও করুণ। সাকিব আল হাসান মনে করতে পারেন না, শেষ কবে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলেছেন!
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, জাতীয় লীগে একটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সেটিও বৃষ্টিতে পুরো হয়নি। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহরা বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে। এই সময়টায় ইমরুল খেলেছেন কেবল একটি ম্যাচ। অথচ তারা সবাই দলের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য সদস্য।
এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতা। টেস্ট ক্রিকেট আর এর প্রস্তুতিতে সবসময়ই সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিসিবি। সীমিত ওভারের সাফল্য যেন আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে টেস্টকে। ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাই বাংলাদেশের টেস্ট প্রস্তুতি বলতে গেলে স্মরণকালের সবচেয়ে কম!
বাংলা৭১নিউজ/এন