বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভারত৷ ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহণ সহজ ও সাশ্রয়ী হবে৷ প্রশ্ন উঠেছে– এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে? বাংলাদেশকেও কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দ্বীপ ও উপকূলবর্তী এলাকায় নৌ পরিবহন বাড়াতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হয়েছে৷ এসব চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের নৌ পরিবহন সচিব আবদুস সামাদ ও ভারতের জাহাজ মন্ত্রণালয়ের সচিব গোপাল কৃষ্ণ৷
নদী ও সমুদ্র যোগাযোগবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রোটোকল অনুযায়ী, ১২তম স্ট্যান্ডিং কমিটির দুই দিনের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মোট তিনটি চুক্তি এবং আরো কিছু বিষয়ে ঐক্যমতের কথা জানানো হয়৷ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’-এর (পিআইডাবলিউটিটি) এই বৈঠক হলো দুই বছর পর৷
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশ চুক্তি করেছে৷ এছাড়া দুই দেশের মধ্যে নদী সংযোগ বাড়িয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য অভিন্ন নদীর সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আসামের গুয়াহাটি ও জোরহাটের মধ্যে নদীপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে৷ ভারতের চেন্নাই থেকে জাহাজে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যন্ত পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে৷
বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতকে কত খরচ দিতে হবে? সেই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের নৌ পরিবহন সচিব আবদুস সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) ঠিক করার সময় এসব চূড়ান্ত হবে৷’’
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র (এমওইউ) সই হয়৷ এরপর গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেয়৷ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, পণ্য সামগ্রী পরিবহণে শুধু বাংলাদেশের নৌ-যান ব্যবহার করা যাবে৷
আরো যত প্রটোকল:
বাংলাদেশ ও ভারতের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের গেঁওখালি ও কোলাঘাটের মধ্যে রূপনারায়ণ নদীকে এবার প্রটোকল রুটের মধ্যে আনা হবে৷ আর সে কারণে পশ্চিমবঙ্গের কোলাঘাট ও বাংলাদেশের চিলমারীকে নদীবন্দরে উন্নত করা হবে৷ এই নদী পথে পণ্য পরিবহন চালু হলে খুব সহজেই বাংলাদেশ ফ্লাই-অ্যাশ ও অন্যান্য সিমেন্ট নির্মাণ সামগ্রী কম খরচে আনতে পারবে৷
এছাড়া আসামের বদরপুরে এবং বাংলাদেশের আশুগঞ্জের পাশে ঘোড়াশালে নদীবন্দর তৈরি করা হবে৷ কলকাতা থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত প্রটোকল রুটের আওতায় এনে পণ্য পরিবহন ও ক্রুজ চলাচলের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে এই বৈঠকে প্রস্তাব দেয়া হয়৷ কলকাতা থেকে ঢাকা, গুয়াহাটি হয়ে জোরহাট পর্যন্ত রিভারক্রুজ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়৷
প্রটোকল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেডের আওতায় ভারতের ধুবড়ি ও বাংলাদেশের পানগাঁওকে নতুন বন্দর হিসেবে ব্যবহার করার চুক্তি সই হয়েছে৷ প্রটোকল রুটের সম্প্রসারণের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো সরাসরি কলকাতা, হলদিয়া ও বাংলদেশের মংলা বন্দরকে ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে৷ এতে অবকাঠামোগত ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমবে৷
দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী হয়ে আরিচা বন্দর পর্যন্ত প্রটোকল রুট চালুর বিষয়ে প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে৷ ভাগীরথী নদীতে জঙ্গিপুরে নেভিগেশন লক পুনর্গঠনের বিষয়টি ফারাক্কা দিয়ে গঙ্গার পানি বণ্টনের চুক্তি অনুসারে খতিয়ে দেখবে৷ এই প্রটোকল রুট চালু হলে আসামের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জলপথে দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার কমে যাবে৷