বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার! হাইকোর্টের নতুন রেজিস্ট্রার হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী লামায় অগ্নিসংযোগ: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে উপদেষ্টা-প্রশাসন নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি তিন উপদেষ্টাকে বিপ্লবী হতে বললেন সারজিস আলম জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা কোরিয়া থেকে ৬৯৩ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার সাভারে বন্ধ টিএমআর কারখানা চালুর নির্দেশনা উপদেষ্টার দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ায় কোহলিকে আইসিসির শাস্তি শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি ফখরুলের ১১ বছর পর দেশে ফিরছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক যারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত প্রাণ এএমসিএলের ৩২ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বাদ যাচ্ছে ১১১৮৬ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বিমানের সিটের নিচে মিলল ২০ সোনার বার, যাত্রী আটক ‘পিলখানা হত্যায় নিরপেক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করা হবে’ চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস

ঘনঘন বিদেশ সফর: পাউবো’র শ্যামল কী ‘র’ এর এজেন্ট!

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি পাউবো পরিকল্পনা অধিদপ্তরে থেকে ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন এবং যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) এর পরিকল্পনা সম্পর্কীয় ও ৫৪টি অভিন্ন নদীর উপর বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় গোপনীয় তথ্য ভারতের কাছে পাচার করছেন।

এ সংশ্লিষ্ট একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর কাছে। অভিযোগটি দায়ের করেছেন পাউবো’র সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। অভিযোগে তার ঘনঘন বিদেশ সফর নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা এই গুরুতর অভিযোগটি অনতিবিলম্বে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে পাউবো’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন। অভিযোগের অনুলিপি পানি সম্পদ মস্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা, পাউবো মহাপরিচালক এবং সকল অতিরিক্ত মহাপরিচালককে দেওয়া হয়েছে।

শ্যামল চন্দ্র দাস এর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। রয়েছে মুখরোচক নানা গল্পও। অভিযোগ রয়েছে- তার কারণে পাউবো’র গতি আরও মন্থর হয়েছে। লোকসান হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তিনি একক কর্তৃত্বে যতগুলো সমীক্ষা করেছেন তার অধিকাংশই এখন বস্তাবন্দী হয়ে পড়ে আছে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হওয়ার কারণে তার কর্মকান্ড নিয়ে কেউ মুখ খুলেনি। তদুপরি, তার ভারত কানেকশন এতটাই বেশি ছিল যে- পাউবো’র কোন কর্মকর্তা তাকে ঘাটানোর সাহস দেখাতো না। শুধু তাই নয়, তিনি ছাড়াও তার দপ্তরে কর্মরত যথাক্রমে তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলী রবিন কুমার বিশ^াসকে নিয়েও রয়েছে নানাবিধ আলোচনা। তাদের কর্মকান্ডে বোর্ড ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ব্যক্তিগতভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামল চন্দ্র দাসের মাঠ পর্যায়ে কাজের কোন সম্মুখ অভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের দিয়ে করানো সমীক্ষাগুলো বোর্ড পর্যায়ে গৃহিত হচ্ছে না এবং এসব সমীক্ষা দেশ ও জাতির জন্য কোন সুফল বয়ে আনছে না। এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প প্রনয়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা এবং ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে সম্মুখ জ্ঞান না থাকলে উক্ত প্রকল্প কোনভাবেই বাস্তবায়ন হবে না; আর হলেও তা ফলপ্রসু হবেনা।

শ্যামল চন্দ্র দাসের তত্ত্বাবধাণে বর্তমানে ১৩টি সমীক্ষা কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে তার অধিনে কর্মরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পরিকল্পনা -১ রবিন কুমার বিশ^াস ৪টি সমীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। ইতিপূর্বে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১১টি সমীক্ষা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। যার মধ্যে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-১ এবং বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী পরিকল্পনা দপ্তর ৪টি সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। এই ৪টিসহ আরও ২টি প্রকল্প মোট ৬টি প্রকল্পের সমীক্ষা কাজ শেষ হলেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। মূলত এগুলো কাগজে-কলমে বস্তাবন্দী হয়ে বোর্ডেই পড়ে রয়েছে।

বিদেশ সফর:
বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের জন্য বিদেশ ভ্রমণের কথা বলা হলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট না থেকেও দেদারছে বিদেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন পাউবো’র পরিকল্পনা দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. শ্যামল চন্দ্র দাস। পাউবো জুড়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- কাদেরকে ম্যানেজ করে তিনি ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। তার এই সফরের অভিজ্ঞতাইবা পাউবো’র ফিন্ড পর্যায়ে কতটুকু কাজে আসছে।

শ্যামল চন্দ্র দাসের বিদেশ সফর প্রসঙ্গে বলা হয়, তিনি গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ হতে চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ বার বিদেশ সফর করেছেন। তিনি আগামী ৬ অক্টোবর আবার ফ্রান্স সফরে যাচ্ছেন। তিনি গড়ে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ বার বিদেশ সফর করেন। যার প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি ২০ বারের অধিক বিদেশ সফর করেছেন। চাকুরী জীবনের প্রথমদিকে কিছুদিন নকশা দপ্তরে কাজ করার পর অধিকাংশ সময় তিনি প্রভাব খাটিয়েই পরিকল্পনা উইংয়ে রয়েছেন। অনেক অভিজ্ঞ ও মেধাবী প্রকৌশলীকে কোন প্রকার সুযোগ না দিয়ে তাকেই কেন বারবার বিদেশ সফরের জন্য মনোনীত করা হচ্ছে- এ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগকারী তার ফ্রান্স সফরের জিও বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের স্বার্থে তার সকল কর্মকান্ডের তদন্ত হওয়া উচিত।

বস্তাবন্দী যে ৬টি প্রকল্প:
পাউবো’র স্থাপনাসমূহে প্রয়োজনীয় আবাসিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ। এই প্রকল্পটি ২০২১ থেকে শুরু করে জুন ২০২২ এর মধ্যে সম্পন্ন করার তারিখ নির্ধারণ করা ছিল। বরিশাল সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন। জুলাই ২০২১ সালে শুরু করে জুন ২০২২ সালের মধ্যে এটি সম্পন্নকরার তারিখ নির্ধারণ ছিল। টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলার প্রস্তাবিত অর্থণৈতিক অঞ্চল বিনির্মাণে ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরক্ষাকল্পে নিমিত্ত প্রস্তাবিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। এই প্রকল্পের কাজ আরম্ভের তারিখ ছিল অক্টোবর ২০২১ এবং সমাপ্তির তারিখ ছিল ২০২২ এর জুন। চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার কৃুমিরা ছড়া এবং মীরসরাই উপজেলার খেয়া ও গোভানিয়া ছড়ায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব জলাধার নির্মাণের সম্ভাব্যতা। প্রকল্পটির ভৌত কাজ আরম্বেও তালিখ ছিল নভেম্বর ২০২১ এবং সমাপ্তির তারিখ জানুয়ারি ২০২৩। মানিকগঞ্জ জেলার যমুনা নদীর বাম তীর ভাঙ্গন রক্ষার্থে বঙ্গবন্ধু সেতু এর ভাটিতে মরফোলজিক্যাল প্রক্রিয়া অনুসন্ধানসহ পরিবেশ ও সামাজিত প্রভাব নিরূপণ সংক্রান্ত সমীক্ষা। ভৌত কাজ আরম্ভের তারিখ ডিসেম্বও ২০২১ এবং সমাপ্তির তারিখ সেপ্টেম্বর ২০২২। তিস্তা ব্যারেজের উজানে ড্রেজিং এর মাধ্যমে ভূ-পরিস্থ পানি সম্পদ সংরক্ষণ ও যথার্থ ব্যবহার এবং কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। প্রকল্পের ভৌত কাজ আরম্ভের তারিখ জানুয়ারি ২০২২ এবং সমাপ্তি ২০২২ অক্টোবর।

২০২১-২২ অর্থ বছরের ছাড়াও অন্যান্য অর্থ বছরেরও অসংখ্য প্রকল্প বস্তাবন্দী হয়ে আছে। অধিক ব্যয়ে চালানো এসব সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় সরকারের শুধু অর্থেরই অপচয় হয়েছে। তবে লাভবান হয়েছে পাউবো’র কতিপয় কর্মকর্তা।

চলমান ১৩টি সমীক্ষা প্রকল্প:
যেসব প্রকল্পের সমীক্ষা কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের নদনদীসমূহের তথ্যাদি হালনাগাদকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, নাফ নদীর মোহনার উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং শাহ পরীর দ্বীপের ভূমি উন্নূনের নিমিত্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নোয়াখালী জেলার আওতাধীন হাতিয়া উপজেলাস্থ পোল্ডার নং ৭৩/১(এ+বি) এবং ৭৩/২এর সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের নিমিত্ত সম্ভব্যতা সমীক্ষা, কীর্তনখোলা-সুগন্ধা-বিষখালী নদী অববাহিকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত সম্ভব্যতা সমীক্ষা, ঢাকা জেলার গোড়ান চটবাড়ী রিটেনশন পন্ডের সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ডিটেইল্ড স্টাড ফর রিভারব্যাঙ্ক ইরোশন এন্ড সাসটেইনেবল মিটিগেশন স্ট্রাটেজিক ফর দি মিডিয়াম রিভারসইন বাংলাদেশ সংক্রান্ত সমীক্ষা. খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় অবস্থিত পোল্ডার ৩১ এর পানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের বিস্তারিত সম্ভাবতা সমীক্ষা, যমুনা নদীর চর স্থিতিশীল ও জীবীকায়ন প্রকল্পের বিস্তারিত সম্ভব্যতা সমীক্ষা, বর্ণি বাওর এলাকার পানি-পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্রের সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিস্তারিত সমীক্ষা, পাবনা জেলার পদ্মা নদীর বেসিন ব্যবস্থাপনা এবং পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাস্থ মহানন্দা নদী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী ও নাটোর জেলাস্থ পদ্মা নদীর বেসিন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের সমীক্ষা এবং পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের সম্ভব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প।

এ ব্যপারে শ্যামল চন্দ্র দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ৬ অক্টোবর তার ফ্রান্স সফরের কথা রয়েছে। তবে জিও হলেও এখনো তিনি তার সফরের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। জিও জারির পরও কেন নিশ্চিত নয়? জানতে চাইলে বলেন, কিছু বুঝতে পারছি না। প্রকল্পের বিষয়াদি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com