বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: রাজধানীর ৩৮টি বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন’ সঠিকভাবে অনুসরণ করছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শক দল বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে এ তথ্য পেয়েছে।
এ তালিকায় নামিদামি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এদিকে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৭৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এ সময় চট্টগ্রাম, যশোর, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ায় চার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৬৫ জন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ৩৪ দিনে ১২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের সঠিক ও মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা তদারকি করতে ২৫ জুলাই ১০টি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর দুই দফায় পরিদর্শক দল রাজধানীর ৭৯টি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে।
৩৮টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় গাইডলাইন সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে তারা দেখতে পান। এ তালিকায় নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে।পরিদর্শন টিমের একাধিক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ডেঙ্গু চিকিৎসায় ঠিকভাবে গাইডলাইন অনুসরণ করার পরও রোগীর মৃত্যু হলে সে দায় অধিদফতর বহন করবে।
কিন্তু এটি অনুসরণ না করলে দায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, প্রথম দফায় পরিদর্শনের পর যেসব হাসপাতাল গাইডলাইন মানছে না বলে প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফা পরিদর্শনে দেখা গেছে, গাইডলাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখন তৃতীয় দফায় পরিদর্শন করা হচ্ছে। এ পরিদর্শনের পর একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ‘হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম’ ডা. আয়শা আক্তার জানান, ১ জানুয়ারি থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭২ হাজার ৭৪৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
এর মধ্যে শুধু আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। আক্রান্তদের ৬৮ হাজার ৮১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ৭৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ১১১ জন এবং অন্য বিভাগে এক হাজার ৬৩৫ জন ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৩৪৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৩৯ জন।
১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ১৮৮টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ৯৬ মৃত রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে ৫৭ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
চারজনের মৃত্যু : মঙ্গলবার চট্টগ্রাম, যশোর, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গুজ্বরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বিপ্লব দাস (২৫) নামে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগী হিসেবে ওই যুবক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ছিলেন। চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকার সন্তোষ দাসের ছেলে বিপ্লব স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে চাকরি করত।
রোগীর আত্মীয় পলাশ বিশ্বাস জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় বিপ্লবকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) তাকে রাখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেড খালি না থাকায় আইসিইউতে রাখা যায়নি।
যশোর ব্যুরো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত শাহজাহান আলী বিশ্বাস (৭০) মঙ্গলবার সকালে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে মারা গেছেন। যশোরের সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার রায় বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে শাহজাহানের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া তিনি কিডনিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। বাঘারপাড়া উপজেলার ভাঙ্গুড়া গ্রামের হাজের আলীর ছেলে শাহজাহান ৩০ আগস্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ হাসপাতালের ডা. ওবাইদুল কাদের উজ্জ্বল জানান, শাহজাহানের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। কিন্তু স্বজনরা সোমবার তাকে বেসরকারি কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করে।
সাতক্ষীরা ও কলারোয়া প্রতিনিধি জানান, কলারোয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহিমা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলাম জানান, ১০ আগস্ট থেকে সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে রহিমার চিকিৎসা চলছিল।
কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত জোসনা খাতুন (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বিকাল ৬টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
উপজেলার খলিষাকুন্ডি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের আসাদুজ্জামান মন্ডলের স্ত্রী জোসনাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হলে রোববার তাকে ঢাকায় নেয়া হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে তিনি মারা যান। জোসনার ছেলে সেলিম জানান, শুক্রবার তারা জানতে পারেন তার মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত।
জেলায় ৫০ দিনে চার হাজার ১০৫ জন রোগী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে চার হাজার রোগী। এ সময়ে ১১ জন মারা গেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস