বাংলা৭১নিউজ,(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি: দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ নেই। কথা শুনেই যে কারও কাছে বিষয়টিকে পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে। কিন্তু পুরো বিষয়টি জানলে পাঠকের ভুল ভাঙবে নিশ্চয়।
গতকাল ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তগুলোতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিকারকদের সিদ্ধান্ত না জেনে পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না তারা। এর মাঝে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাফ দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলাজাতীয় আড়তগুলোতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। পেঁয়াজের আড়তগুলোর বাইরে সারি বেঁধে রাখা আছে কাজহীন ঠেলাগুলো।
বিক্রেতারা জানালেন, পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ পরিবর্তন নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো খাতুনগঞ্জ। কোনো আড়তদারই নিজের কাছে মজুত পেঁয়াজ নিয়ে কথা বলছেন না। এমনকি পাইকারি এ বাজারের বিক্রেতারা পেঁয়াজের দাম বলতেও নারাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরু থেকে ঊর্ধমুখী বাজারে পেঁয়াজের আমদানি ছিল কম। আবার অনেকে আড়তে মজুত করলেও তা বাজারে আনেননি। এর মাঝেই গতকাল দুপুরে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে বাজার থেকে পেঁয়াজ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্রায় সব ব্যবসায়ী। এমনকি ব্যবসায়ীরা আড়তেও রাখছেন না পেঁয়াজ।
সূত্র বলছে, বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গত কয়েকদিনে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারের বাইরে গুদামজাত করেছেন। মূলত ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে- এ খবর চট্টগ্রামে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেছে পেঁয়াজ।
ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল সকালেও খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যায় পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয় দেশের সবচেয়ে বড় এই পাইকারি বাজারের আড়তদাররা।
এদিকে সাংবাদিক পরিচয়ে বেশ কয়েকটি আড়তে দাম যাচাইয়ের চেষ্টা করা হলেও তারা পেঁয়াজ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে মুঠোফোনে খাতুনগঞ্জের জনতা ট্রেডার্সের ম্যানেজার ফিরোজ বলেন, ‘প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে।’
প্রায় একই ধরনের জবাব পাওয়া গেছে, আমীর স্টোর, ইনবাত ট্রেডিং, শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি বড় আড়ত থেকে। তবে কেউ পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়ে মুখ খোলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার বলেন, খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ ব্যবসায়ী সরাসরি পেঁয়াজ আমদানি করেন না। তাই পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্তও তাদের হাতে নেই। আমদানিকারকদের কাছ থেকে শতাংশ লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করেন তারা। তাই আমদানিকারকরা না চাইলে, যত দামই হোক তাদের পক্ষে পেঁয়াজ বিক্রি সম্ভব নয়।
তবে হামিদউল্লাহ খান মার্কেটের ব্যবসায়ী সোলতান মিয়া বলেন, ভারত রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ইতোমধ্যেই গতরাত থেকে ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন। বাজারে এ পেঁয়াজ আসতে অন্তত ১০ দিন সময় লাগবে। এছাড়া তারা চীন, মিসর, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন।
এদিকে নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ ও দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ খুচরায় ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ।
শাহ আমানত স্টোরের মালিক আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের গ্রাহকরা বাজারে এসেই ভারতীয় পেঁয়াজ খোঁজেন। তাই সুযোগসন্ধানীরা কালকের পর হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি আগের দামেই (৭০ টাকা) বিক্রি করছি। ক্রেতারা সচেতনভাবে মিসর ও তুরস্কের (সাদা পেঁয়াজ) পেঁয়াজ কয়েকদিনের জন্য ব্যবহার করলে দাম কমে আসবে।
এদিকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার খবর পেয়ে গতকাল থেকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর তদারকিতে নেমেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার দুপুরে অভিযান চালিয়ে আড়তে মূল্য তালিকা না থাকা এবং কেনা মূল্যের সঙ্গে বিক্রিমূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় তিনটি আড়তকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হাসান বলেন, ‘পাইকারি বাজার তদারকি করতে গিয়ে দেখেছি অনেক দোকানে মূল্য তালিকা নেই। আবার মূল্য তালিকা থাকলেও হালনাগাদ নেই। আবার অনেক আড়তদার কেনা দামের রসিদ দেখাতে পারেননি। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকেই সতর্ক করেছি; আর তিনটি প্রতিষ্ঠান- বার আউলিয়া কমিশন এজেন্ট, জে আই ট্রেডিং এবং আমিনুর রহমান ট্রেডিংকে নামমাত্র ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘রোববার দুপুরে আড়তে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ভারতের পেঁয়াজ ৫১ থেকে ৫৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারি আড়তের পর খুচরা বাজারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
জেলা প্রশাসনের অভিযানের পর বিকেলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬৫ টাকা হয়। এরপর বিকেলে ভারতে পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞার খবর খাতুনগঞ্জের বাজারে পৌঁছার পর হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। সন্ধ্যানাগাদ পেঁয়াজ বেচাকেনা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলা৭১নিউজ/পিআর