সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী আটক শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারত সরকারের প্রতি জি এম কাদেরের ত্রাণ সহায়তার আহ্বান ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২২৫ বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠন হচ্ছে : আসিফ ভারত থেকে এলো ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম, পিস ৭.৫ টাকা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই, নির্বিঘ্নে পূজা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সুদ মওকুফ করে ঋণ রিশিডিউল করার দাবি চামড়া ব্যবসায়ীদের ১০০০ আইটি ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিতে চায় জাইকা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিডি দুই জাহাজে অগ্নিকাণ্ড: নৌ-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত, প্রত্যেক পরিবার পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা ক্রিকেটার ছদ্মবেশে শ্রমিক নেওয়ার অভিযোগে ২১ বাংলাদেশি আটক ইসরায়েলি হামলা হলে জবাব দিতে পরিকল্পনা প্রস্তুত ইরানের সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব আমিনুল গ্রেপ্তার অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলতে চাই না: সাখাওয়াত হোসেন

কয়েক বছর ধরে অনেক ক্ষতিকর বস্তুকণা উড়ছে দেশের বাতাসে

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা:
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

বেঁচে থাকার জন্য বাতাস থেকে অক্সিজেন খোঁজে মানুষ। কিন্তু দেশের বিভিন্ন শহরের মানুষ অক্সিজেনের সঙ্গে এমন কিছু ক্ষতিকর বস্তুকণা পাচ্ছে, যা বাঁচানোর বদলে শেষ করছে তিলেতিলে। বাতাসে প্রতি মুহূর্তে উড়ছে সবচেয়ে মারাত্মক বস্তুকণা পিএম ২.৫। এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দৈনিক আদর্শ মানমাত্রায় বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫ থাকার কথা ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। অথচ কোনো কোনো এলাকার বাতাসে এর উপস্থিতি ৫০০ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি।

বাতাসের মান নিয়ে গবেষণারত দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল ও গ্রিনপিসের গবেষণা বলছে, সাধারণত ছয়টি উপাদানে বাতাস দূষিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর কণাটি হচ্ছে পিএম২.৫। দীর্ঘদিন এই উপাদান নির্গত করেছে চীনের বেইজিং। এরপর চীনকে টপকে যায় ভারতের দিল্লি। সম্প্রতি এ জায়গায় দাপুটে দখল নিয়েছে ঢাকা। কয়েক বছর ধরে দেশে বাড়ছে বাতাসের এই দূষিত বস্তুকণা। ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আরও কিছু শহর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিএম২.৫ হলো সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির কণা; যা মানুষের চুলের প্রস্থের প্রায় ৩০ ভাগের এক ভাগের সমান। এই ধূলিকণাগুলো এতটাই ছোট যে তা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে মিশে যেতে পারে রক্তের সঙ্গে। এর কারণে হতে পারে অ্যাজমা, ফুসফুস ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক ব্যাধি।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম­লীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস) অতি সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছে, ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বায়ুমান বাংলাদেশের আদর্শমানের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। এসব জেলায় বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো।  

ঢাকার ৭০টি এলাকার বাতাসে দূষিত বস্তুকণার মারাত্মক উপস্থিতি দেখা গেছে ক্যাপস-এর আরেক গবেষণায়। সেখানে দেখা যায়, শহরের বাতাসে ক্ষতিকর বস্তুকণার উপস্থিতি গড়ে ৩০৭ মাইক্রোগ্রাম; যা স্বাভাবিকের চেয়ে পৌনে পাঁচগুণ বেশি। সংবেদনশীল এলাকায় ক্ষতিকর এই বস্তুকণার উপস্থিতি গড়ে ২৯৪ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় ২৯০, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩০৮, মিশ্র এলাকায় ২৯৩ এবং শিল্প এলাকায় ৩৩৬ মাইক্রোগ্রাম।  

ক্যাপসের নীরিক্ষা মতে, ২০২১ সালে দেশের ৬৪ জেলার সর্বমোট ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম; যা দৈনিক আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১.৫৭ গুণ বেশি। অন্যদিকে, এয়ার ভিজ্যুয়াল ও গ্রিনপিসের গবেষণা অনুযায়ী এর আগের বছরগুলোতেই ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে ছিল বাংলাদেশ।

সংস্থা দুটি’র তথ্য বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের বাতাসে ক্ষতিকর বস্তুকণাটির উপস্থিতি ছিল গড়ে প্রতি ঘনমিটারে ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৯ সালে ছিল ৮৩.৩ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৮ সালে ৯৭.১ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ছিল যথাক্রমে ৮১ ও ৭৬ মাইক্রোগ্রাম।  

এদিকে, এয়ার ভিজ্যুয়ালের নিয়মিত তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছর শুরু থেকে দেশের বায়ুমান মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। কখনো কখনো দূষণ পৌঁছে যায় পরিবেশগত ‘জরুরি অবস্থায়’। বিশেষ করে গবেষণায় ঢাকা শহরের বাতাসে যে পরিমাণ দূষিত বস্তুকণার উপস্থিতি মিলেছে, তাতে শহরবাসীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিয়ে বেশ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।  

গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব দ্রুত বায়ুদূষণ বাড়ছে এমন দেশের তালিকা করলে বাংলাদেশ শীর্ষে থাকবে। ক্রমেই এশিয়া অঞ্চলের বায়ুমান খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৯০ সাল থেকে পিএম২.৫ মাত্রার মধ্যে বসবাস করছে। তবে পরিস্থিতি খুবই নাজুক হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।  

জানতে চাইলে ক্যাপস পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার  বলেন, ঢাকার বাতাসে বস্তুকণা পিএম-১০-এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই ক্ষতিকর পিএম-২.৫। নীরিক্ষায় শহর ও গ্রামের তথ্য সমন্বয় করার ফলে গড় বায়ুমান অনেকটাই কমে এসেছে। শুধু শহরকেন্দ্রিক তথ্য প্রকাশ করলে দেখা যাবে কোনো কোনো এলাকায় বায়ুমান আদর্শ মানমাত্রার চেয়ে পাঁচ-সাতগুণ বেশি। প্রতিবছর দেশের বায়ুমানের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে এ ধরনের বস্তুকণা আসে বেশি। অর্থ্যাৎ যানবাহন, শিল্পকারখানা ও বর্জ্য পোড়ানো থেকে নির্গত ধোঁয়ায় এ ধরণের কণা বেশি থাকে। দেশে সাধারণত শীত মৌসুমের শুরু থেকে বায়ুদূষণের পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করে। এ ছাড়া বছরজুড়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং বিশেষ মৌসুমে ঢাকার চারপাশে থাকা অগণিত ইটভাটায় দূষণ বাড়াচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এক প্রতিবেদনে জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণযুক্ত পরিবেশে কোনো শিশু বেড়ে উঠলে তার গড় আয়ু ৩০ মাস পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
দূষণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করলেও তা বন্ধে কার্যক্রমে স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি সময়ে ঢাকার রাস্তায় পানি ছিটাতে দেখা যায়নি। মেট্রোরেলসহ আরও সেসব নির্মাণ কাজ চলমান, তারাও বায়ুদূষণ বন্ধে নির্লিপ্ত ভূমিকায়।  

পরিবেশ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জনবল সংকটের কারণে বায়ুদূষণ বন্ধে নেয়া পদক্ষেপে স্থবিরতা বিরাজ করছে। একই জনবল দিয়ে নানা রকমের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যখন যে ইস্যুটি বেশি আলোচনায় আসে, মনযোগ সেদিকেই যাচ্ছে। বায়ুদূষণের বিষয়টি এখন আলোচনায় নেই বললেই চলে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com