ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্যাপসিকাম চাষ। চলতি মৌসুমেও বেড়েছে এই চাষ। গত মৌসুমের চেয়ে ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ বেড়েছে। তবে গত মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাজারদর কম হওয়ায় তেমন লাভবান হননি চাষিরা। এ মৌসুমে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। বর্তমানে বাজারদরও গত বছরের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি হওয়ায় অধিক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।
ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়ার ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মাঝের চর এবং দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠে ক্যাপসিকামের ফলনে ভরপুর। কেউ কেউ দলবল নিয়ে ক্ষেত পরিচর্যা ও ক্যাপসিকাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকদের মুখে ছিল হাসি এবং অধিক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন।
সদরের কাচিয়া মাঝের চরের ক্যাপসিকাম চাষি মো. সিদ্দিক ও মনির জানান, এ মৌসুমে তাদের ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। এ ছাড়া নেই তেমন কোনো রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণও। তাই তেমন সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি। এজন্য তাদের খরচও আগের চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে।
তারা আরও জানান, গত মৌসুমে ক্যাপসিকাম রোপণের কিছু দিনের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টির হানায় নষ্ট হয় ফসল। ফলে নতুন করে আবাদ করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বাজারে তেমন দামও পাননি তারা।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুরের ক্যাপসিকাম চাষি মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. নিরব ঢালী জানান, এ বছর তারা শুরু থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে ১০০-১২০ টাকা কেজি দাম পাচ্ছেন। এবার ক্যাপসিকাম বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
তারা আরও জানান, পৃথক ভাবে দুজন ৩ একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। এতে জমি লগ্নি, বীজ, সার, ওষুধ ও শ্রমিকের খরচ মিলে একরপ্রতি প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সিরাজুল ইসলাম ২০ লাখ ও নিরব ঢালী ১৮ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন ঢাকার পাইকারি বাজারে। বর্তমানে ক্ষেতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম আছে, তাতে সিরাজুল ইসলাম ২৫ লাখ ও নিরব ঢালী ৩০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও আবু কামাল জানান, গত মৌসুমে তারা পাইকারি বাজারে ২০ টাকা বা সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কেজি দাম পেয়েছেন। এতে তেমন লাভবান হননি। অনেক কৃষক লোকসানও গুনেছেন। এ মৌসুমে তারা আগের চেয়ে ২-৩ গুণ দাম বেশি পাচ্ছেন। বেশি লাভবান হবেন বলেও আশা করছেন।
তারা আরও জানান, ক্যাপসিকাম লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলে প্রতি বছরই আবাদ ও কৃষকের সংখ্যা বাড়ে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ২-৩ একর বেশি জমিতে চাষ করেছেন। তাদের দাবি, পাইকারি বাজারের সর্বনিম্ন ৫০ টাকা কেজি দাম পেলেও লাভবান হবেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, জেলায় ক্যাপসিকামের আবাদ বৃদ্ধি ও কৃষকদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সব সময় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, গত মৌসুমে ভোলার ৭ উপজেলায় ৭৪ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম আবাদ হলেও চলতি মৌসুমে হয়েছে ৮৯ হেক্টর। এর মধ্যে ভোলা সদরে ২৮, দৌলতখানে ৪২, চরফ্যাশনে ১৫ এবং বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন ও মনপুরায় ১ হেক্টর করে আবাদ হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস