সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সেতু বিভাগের সচিব হলেন ফাহিমুল ইসলাম ইসরায়েলি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ প্রথম মাসের বেতন ত্রাণ তহবিলে দিলেন আসিফ মাহমুদ ধামরাইয়ে ৯ দাবিতে আকিজ ফুড শ্রমিকদের বিক্ষোভ নারায়ণগঞ্জে বাজারে আগুন, ৩০ দোকান পুড়ে ছাই পদ্মার চরে পানি, হতাশ চাষিরা এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান গ্রেফতার সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা আজ থেকে শুরু হচ্ছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ব্রাজিলের ‘হেক্সা’ দিল্লির সুপারশপে দেখা মিললো সাবেক এসবিপ্রধান মনিরুলের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ৭৩৫ জনের খসড়া তালিকা প্রকাশ শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি শিশুর বিকাশের অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে সমাধানে বদ্ধপরিকর সরকার ৭ অক্টোবর বিশ্ব বসতি দিবসে সরকারের নানা কর্মসূচি গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী আটক শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে…

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

১৬ ফেব্রুয়ারির দুপুর। রাস্তায় বেরিয়ে দেখি গাড়ি কম। স্ট্যান্ডে যাত্রীশূন্য কয়েকটি অটো। স্তব্ধ। ভাবছি, এক বাসে সোজা নন্দন চত্বরে চলে যাব। বাস এলো না। অটোয় চাপতে হলো। সহযাত্রী তিন। সবাই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। নিঃশব্দ আমি। চারদিক দেখছি। দোকানপাট খোলা। ভিড় নেই। খদ্দের নেই। নেই চেনা কোলাহল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালীঘাট।

অটো থেকে নেমে দ্রুত অতি দ্রুত টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। মেট্রো স্টেশন প্রায় ফাঁকা। ওপরে টিভি স্ক্রিন ঝুলছে। পর্দায় বারবার ভেসে উঠছে দুটি মুখ। সন্ধ্যা মুখ্যাপাধ্যায় আর বাপ্পী লাহিড়ির। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রয়াত উপমহাদেশের দুই মহান সংগীতশিল্পী। আজ সন্ধ্যার শেষকৃত্য। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে বিদায়বেলার শ্রদ্ধা জানাবে শোকগ্রস্ত, সন্ধ্যামগ্ন কলকাতা।

মেট্রো সামনে দাঁড়াল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। উঠে পড়লাম। বহু আসন ফাঁকা। বসতেই নজরে পড়ল, হাতে হাতে মোবাইল ফোন ঘুরছে। ভেসে উঠছেন সন্ধ্যা-বাপি। মোবাইল ফোন খুলে খবর খুঁজছি। বিদেশে একজন বন্ধুকে ফোন করলাম। খ্যাতিমান সাংবাদিক। অনেকক্ষণ কথা আর কথা—বাপিকে নিয়ে। সন্ধ্যাকে নিয়ে। কখন যে রবীন্দ্রসদনের দোরগড়ায় পৌঁছে গেছি, খেয়াল নেই। নেমে, স্টেশন চত্বর পেরিয়ে, শিশির মঞ্চের দিকে ঢুকে পড়লাম। প্রত্যাশিত ভিড়। ভিড়ের হইচই নেই। শীতল মুখ, বিষণ্ন চোখ সামনে এগোচ্ছে।

পুলিশ ব্যারিকেডভরা নন্দন এলাকা। ইউনিফর্ম পরে, না পরেও পুলিশের বড় কর্তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিক নির্ণয়ে ব্যস্ত। যথাসম্ভব চুপ। গোটা চত্বর জুড়ে স্তব্ধতা। সন্ধ্যা তখন গাইছেন, গানের পর গান—আমি যে জলসাঘরে/ এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার…নিঃশব্দে এসব অনিঃশেষ গান শুনতে শুনতে নবীন-প্রবীণ সবাই রবীন্দ্রসদনের মেইন গেটের দিকে এগোচ্ছেন। সুশৃঙ্খল। নিয়মনিষ্ঠ। লম্বা লাইন। ঠেলাঠেলি নেই। তাড়াহুড়ো নেই। হাতের ফুলের তোড়ার মতোই সবাই নিঃশব্দ, বিহ্বল।

বাইরে ভিড়। ভেতরেও ভিড়। ভিড়ের মাঝখানে শুয়ে আছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত নিথর দেহ। বন্ধ চোখ। ঈষত্ খোলা ঠোঁট। সেই ধারালো নাক, সেই শানিত মুখাবয়ব। বিরামহীন স্রোতের মতো সমুদ্রগামী। ছবিতে হাসছেন। পাশেই ঝাঁকড়া চুলের উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল বাপ্পী লাহিড়ি। অনুরাগীদের, সহগামীদের ফুল আসছে, ভরে উঠছে ব্যারিকেড-ঘেরা দেহের আচ্ছাদন।

ঠিক এরকম মুহূর্তেই আমাদের মনে পড়ে যায়, ফুলে ঢাকা মানিক বন্দ্যােপাধ্যায়ের শবদেহ নিয়ে কবি সুভাষ মুখ্যাপাধ্যায়ের মর্মভেদী উচ্চারণ—ফুল সরাও, বড়ো লাগছে। আজ ফুলের জলসায় শুয়ে আছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। স্তরে স্তরে ফুল জমছে, মালা তার দেহে লাগছে না, সশ্রদ্ধায় সরিয়ে রাখা হচ্ছে। অশ্রুসিক্ত, নিঃস্তব্ধ শিল্পীরা, গুণমুগ্ধরা, গানের সহযাত্রীরা গীতশ্রীর নিঃশব্দ স্মৃতিচারণে মগ্ন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তরবঙ্গ থেকে সোজা রবীন্দ্রসদনে চলে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যােপাধ্যায়। সব ব্যবস্হা পাকা। উত্তরীয় পরিয়ে, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন তার আপনজনকে। তিনিই ২০১১ সালে, ‘সন্ধ্যাদিকে’ বঙ্গবিভূষণ সম্মান দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সমাজ তার কণ্ঠ শুনেছে, সম্রাজ্ঞীর স্বর আর গানের মুগ্ধতাকে জড়িয়ে থেকেছে বুকে, কিন্তু রাষ্ট্র তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি।

দেওয়া উচিত ছিল। রাষ্ট্রের এই কার্পণ্যের শৃঙ্খল ভেঙে দিয়েছেন মমতা। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। বাংলা গানের এই ঐশ্বর্যের প্রয়াণের খবর পেয়েই মমতা বলেছেন, সন্ধ্যাদি ভারতের রত্ন। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আমরা তাকে বিদায় জানাব।

‘ভারতের রত্ন’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন মমতা? চিরস্রোতা গানের অজেয় মনীষাকে ভারত রত্ন দেওয়া যেত না? দেওয়া যেত না ফালকে পুরস্কার? দেওয়া যেত না সারা জীবনের সাধনার স্বীকৃতি? দেওয়া হয়নি। এ এক গভীর, বিস্ময়কর দুঃখ। বরং তাকে শেষ প্রহরে পদ্মশ্রী খেতাব দিয়ে হেয় করা হলো। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় খেতাব প্রত্যাখ্যান করে মোক্ষম জবাব দিয়েছেন।

আমরা জানি, এই অপমান অসহ্য, গীতশ্রীর বুকে লেগেছে। এরপরেই অসুস্হ হয়ে পড়লেন। হাসপাতাল থেকেই বিদায় নিলেন। এমন একজন মহান শিল্পীর অবমাননা আর কয়েক দিনের মধ্যেই তার মৃতু্যতে মমতার মতো স্পর্শকাতর নেত্রীর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। জ্বলে উঠল তার জেদ, তার শোকাতুর ভাবাবেগ। উত্তরবঙ্গ থেকে সরাসরি ছুটে এলেন রবীন্দ্রসদনে।

প্রিয় শিল্পীর শায়িত দেহের পাশে দাঁড়ালেন। ভাষাহীন। আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে তারই উদ্যোগে জড়ো হলেন বহুদলীয় নেতাকর্মী, প্রশাসনিক কর্তারা, বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরা। সম্ভমের এও এক কাঙ্ক্ষিত, অমূল্য নজির, যা আমাদের জাগিয়ে রাখবে। বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে, মহান শিল্পীর প্রয়াণের পর জাতীয় শোকযাপনের সুপরিকল্পিত, স্বতঃস্ফূর্ত দিকদর্শী অভিমুখ।

এক সন্ধ্যায় রুদ্ধঘরে শিল্পীর জীবনাবসান। আর এক সন্ধ্যালগ্নে কলকাতার খোলা রাজপথে শুরু হলো জনস্রোতের শোক উদ্যাপন। হাজার কণ্ঠের গানে আর নিঃস্পন্দ পদচারণে মিছিল শ্মশানের দিকে এগোচ্ছে। নিয়ম মেনে, শৃঙ্খলা বজায় রেখে—অগ্রভাগে এই তো মমতা বন্দ্যােপাধ্যায়। এই তো মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, এই তো দেবাশিস কুমার।

কিছুক্ষণ আগেই রবীন্দ্রসদনের শোকবাসরে এসে সবার সঙ্গে মিশে গেলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যসহ অসংখ্য পরিচিত মুখ।

সুর ছোঁয়া মিছিলেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মিলিয়ে দিলেন রাজনীতির, সমাজনীতির ভিন্নমতের বহুমুখকে। সাধারণ জনতা আর পরিচিত মুখও এখানে একাকার। মিছিলের ভিড় বাড়ছে। মাইকে সন্ধ্যার গান। গণকণ্ঠেও তার গান। নিঃশব্দে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী। সামনে গাড়িতে প্রয়াত শিল্পী ।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নির্দিষ্ট রাজনীতি ছিল না। গানই ছিল তার রাজনীতি, মঞ্চ আর ময়দান। ভাষা তার আলাদা। সুর তার স্বতন্ত্র, চিরন্তন, সর্বজনীন। তার বিদায় মিছিলেও এই দর্শন ভেসে উঠেছে। নিথর দেহ ছুঁয়ে নীরব মিছিলকে মাতিয়ে দিচ্ছে তার কণ্ঠস্বর—‘এ গানে প্রজাপতি পাখায় পাখায় রং ছড়ায়’, গানের পর গান, ‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো?’

গানে গানে এরকম শোকযাত্রা আমরা বহুদিন দেখিনি। কলকাতার বাইরে বেঙ্গালুরুতে মান্নাদের দেহাবসান হয়েছিল। তার শেষযাত্রায় মহানগর যোগ দিতে পারেনি। ভূপেন হাজারিকার প্রয়াণ ঘটে গুয়াহাটিতে। আসাম তখন শোকস্তব্ধ, ঘরে ঘরে কয়েক দিন জুড়ে প্রদীপ জ্বলল। অবশ্যই জাতীয় গায়ককে যথাযোগ্য মর্যাদা কিন্তু আমরা বঙ্গবাসীরা ভূপেন স্মরণ থেকে দূরে পড়ে রইলাম। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃতু্যতে কলকাতার স্তব্ধতা ভুলবার নয়। শোকযাপনের মহিমা, গাম্ভীর্য, অস্তরাগের সংরাগ জেগে ওঠেনি কেন? জবাব অজ্ঞাত।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রচলিত নিয়ম—মৃতু্যশোকে কেবল শোকগ্রস্ত হয়ে থাকার—অশ্রুভেজা উচ্চারণের রেওয়াজ ভেঙে দিলেন। এর কারণ কী? তার জনপ্রিয়তা? সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা? তার প্রতি সমাজের সম্ভম বোধ? নিশ্চয়। একই সঙ্গে সরকারের আবেগতাড়িত উত্সাহ আর উদ্যোগের নির্মলতাও গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা দরকার। শিল্পীর মৃতু্যতে এরকমই হওয়া চাই।

এটা গণমনের দাবি। সমূহেরই প্রত্যাশা। নির্ধারিত সব কাজ ছেড়ে, মমতা জনতার পাশাপাশি হেঁটেছেন, ভেতরের কান্নাকে বাইরে আসতে দেননি, শেষকৃত্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত শ্মশানচত্বর ছাড়েননি, গান আর গান স্যালুটে প্রয়াত সংগীতশিল্পীকে বিদায় জানানোর মুহূর্তে স্বেচ্ছাসেবীর মতো দাঁড়িয়ে থেকেছেন, যা সাধারণত সর্বোচ্চ প্রশাসকদের ক্ষেত্রে আমাদের নজরে পড়ে না।

মমতা মমতার মতোই এখানে আলাদা, অনন্য শিল্পীকে অনন্য ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায়, তার নেতৃত্বে সম্মান জানাল কলকাতা। এই গর্ববোধ ক্ষণিকের নয়, সন্ধ্যার গান আর সুরের মতোই কালজয়ী হয়ে থাকবে।

আমাদের শৈশব, আমাদের বয়ঃসন্ধি, আমাদের যৌবন আর এখনকার যৌবনবোধকে, স্পর্শময় স্পর্শহীন প্রেমকে—সুরসাধক সন্ধ্যা যেভাবে ছুঁয়ে আছেন, তার শেষ নেই। অমর ভাষা অন্দোলনের মাসে, ২১-এর প্রাক্কালে তার দেহত্যাগ আর স্মৃতি প্রবেশের মহিমাকে কালের সীমা পেরিয়ে আমরা ধরে রাখব। তার মৃতু্যতে, শোকমিছিলে, তার শেষকৃত্যে এই অঙ্গীকার মুখরিত।

এ কথাও আজ সুস্হাপিত যে, যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, গান থাকবে, ততদিন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান আর সুরের রোমান্টিকতা ব্যক্তিবিশেষ আর নির্বিশেষকে সঙ্গ দিয়ে যাবে। তার গানের প্রতিভা বাঙালির আবহমান মনন আর প্রেমের অভিব্যক্তিকে বরাবর উদ্বুদ্ধ করেছে, প্রকাশের সুললিত ভাষা জুগিয়েছে। তাকে তারই গানের ভাষায় বারবার বলতে ইচ্ছে করছে, কিছুকাল, ‘কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে…’।

কাছাকাছি থাকার উপায় নেই আর। তবু মৃতু্যহীন সন্ধ্যা তার গান দিয়ে, সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে চিরদিন ভরে দেবেন বাঙালির স্বপ্ন আর জাগরণকে। এমনকি দুর্যোগেও জাগিয়ে দেবেন জাতির অখণ্ড সত্তাকে। প্রসঙ্গত, ’৭১-এর কথা ভাবুন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ পূর্ববঙ্গ থেকে ত্রিপুরা, আসাম আর পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নিচ্ছে।

সন্ধ্যা তখন সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পী। প্রবল ব্যস্ত। তার ব্যস্ততা বাড়িয়ে দিল মুক্তিযুদ্ধের আবহ আর গৃহহারাদের হাহাকার। রুটিন কাটছাঁট করে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য অর্থ জোগাড়ে গানের শিল্পীদের সঙ্গে জড়ো হলেন। পরপর অনুষ্ঠানে। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র স্হাপনেও তিনি তখন একজন মুক্তিযোদ্ধা। বেতারে গাইছেন। উদ্বুদ্ধ করছেন বিশ্বের সব বঙ্গভাষীকে, গড়ে তুলছেন জনমত। পরের ঘটনা, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি জেল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন।

তার মুক্তিতে চঞ্চল ভারত আর বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শুধু মুক্তি আন্দোলনের প্রতীক নন; হাজার বছরের বাঙালির আকাঙ্ক্ষা আর আত্মনিয়ন্ত্রণেরও প্রথম রূপকার। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে গীতশ্রী উদ্বুদ্ধ হয়ে গাইলেন, বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে। চিত্তপ্রিয় চিরকালের গান। গানে গানে, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বদরদ কর্মকাণ্ডের, অসাধারণ দায়িত্ববোধের স্মৃতি, আজ শুধু স্মৃতি নয়, স্মৃতির চেয়েও বেশি ।

লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক, সম্পাদক, আরম্ভ পত্রিকা

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com