টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সোমবার (২৯ জুলাই) থেকে বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে ৯ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। নদী ও খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকেছে। চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, সদর ও উখিয়া উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে এসব এলাকার তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘর-বাড়িতে পানি ঢোকায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র চলে গেছে। দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে ভেঙে গেছে। ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরীর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছে। দ্রুত ত্রাণসামগ্রী সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে হলদিয়া ইউনিয়নে ২০ গ্রামের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এতে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের সহযোগিতায় নৌকা নিয়ে রাতে ও দিনে মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শহরের প্রধান সড়কগুলোতেও জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের গোলদিঘীরপাড়, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, কলাতলী, সদর ইউনিয়নের ঝিলংজা ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রাম। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা উখিয়া উপজেলা। সেখানে দেড় শতাধিক গ্রামের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাক পাড়া, নাজিরারটেকসহ আট গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকায় ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার বসবাস।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, তার ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে কক্সবাজার অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী তিনদিনও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে জেলার কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উখিয়া উপজেলায় তাদের সংখ্যা বেশি। সেখানে ৫টি ইউনিয়নের কমবেশি মানুষ পানিবন্দি। দুর্গতদের সহযোগিতা করতে সব ধরনের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এআরকে