করোনার প্রাদুর্ভাব কম থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সব পর্যটন স্পটে পর্যটকের পদচারণা বাড়ছে। লোকারণ্য বালিয়াড়িতে উচ্ছ্বাস থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে চরম উদাসীন পর্যটকরা।
ঢেউয়ের সান্নিধ্যে আসা অনেকেই মানছে না সরকারের বেধে দেওয়া বিধিনিষেধ। কয়েক জন পর্যটক মাস্ক পরলেও সিংহভাগেরই মাস্ক নেই।
করোনা সংক্রামণরোধে দীর্ঘদিন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। গত ১৯ আগস্ট পর্যটন খুলে দেওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সৈকতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। দীর্ঘ সময় ঘরে বন্দি এবং শহরে যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে কক্সবাজার ভ্রমণে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। যাচ্ছেন সেন্ট মার্টিন, হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালীসহ সব পর্যটন স্পটে।
তবে, যে যার মতো করে সৈকতে ঘোরাফেরা করছেন, দূরত্ব মানা হচ্ছে না। সৈকতে সঙ্গীসহ নামা আহমদ সরকার (২৮) নামের এক পর্যটক বলেন, মাস্ক ছাড়া বালিয়াড়িতে নামতে দেয় না প্রশাসন। তাই ১০ টাকায় দুটি মাস্ক নিয়ে নেমেছি। কিন্তু, সৈকতে অনেকের মুখে মাস্ক না থাকায় আমরাটা পকেটে রেখেছি।
কুমিল্লার বিশ্বরোড পদুয়ার বাজার এলাকার সরোয়ার হাসান শামীম বলেন, সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি কারো লক্ষ্য নেই। নেই কোনো দূরত্ব। হয়তো লবণাক্ত হাওয়ায় ভাইরাস দুর্বল থাকবে এ চিন্তায় সবাই নির্লিপ্ত।
চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকার ফেরদৌস জাহান দম্পতি বলেন, দীর্ঘদিন পর সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজার সৈকতে এসেছি। কোথাও বের হলেই মুখে মাস্ক পরতে পড়তে ক্লান্ত। সৈকতে লবণ হাওয়ায় এসেও যদি মাস্ক পড়তে হয় তাহলে এখানে (সমুদ্র তীরে) আসার কী দরকার?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা একটা মহামারি। সরকারের চেষ্টায় আমরা অতিশয় ভোগান্তিতে এড়াতে পেরেছি। এখন ওমিক্রন বলে বিশ্বে আবার রূপ পালটাচ্ছে ভাইরাসটি। এ মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত আরো সচেতন হয়ে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা। একে বারে লকডাউনের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাঞ্ছনীয়।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, সরকারের দেওয়া সব শর্ত মানা হচ্ছে। সৈকতে পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেই দায়িত্ব আমাদের নয়। কক্সবাজারে পর্যটন জোনে যেসব হোটেল-মোটেল রয়েছে সবকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের রুম বুকিং দিচ্ছে।
হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, দীর্ঘদিন পর পর্যটন খাত খোলায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। প্রথম প্রথম জনমনে ভীতি থাকলেও এখন সেটা কাটিয়ে পর্যটকদের মোটামুটি সাড়া মিলছে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকলে পুরোনো ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে বল আশা করা যায়।
টুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হোটেলে ৫০ শতাংশের অধিক কক্ষ ভাড়া না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সঠিকভাবে স্বাস্হ্যবিধিসহ সরকারের দেওয়া নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর ঘোষণা থাকলেও পর্যটন কেন্দ্র বলে প্রশাসন একটু নমনীয়।
একে সম্মান জানিয়ে, পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার আহ্বান জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি সবার মানা প্রয়োজন। সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি স্যানিটাইজার ও মুখে মাস্ক পরা অবশ্য দরকার। সৈকত এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি সচেতনতায় নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তিনিও পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বালিয়াড়িতে নামতে অনুরোধ জানান।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে