♦সাখাওয়াত হোসেন বাদশা♦
আমি লজ্জিত, ব্যথিত। এই করোনা দু:সময়েও আলোকিত বাংলাদেশ, জিটিভি, এসএটিভি থেকে অনেক সাংবাদিকের চাকুরি খাওয়া হয়েছে। চাকুরিচ্যুতি এবং চাকুরী খাওয়ার হুমকির খবর পাচ্ছি বিচ্ছিন্নভাবে অনেক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল থেকে। অনেক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে করোনার অজুহাতে বেতন দেওয়া হচ্ছেনা। অনেক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেতন ও বকেয়া না দিয়েই। যাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের শ্রমের ন্যায্য পাওনাটা পর্যন্ত এসব সাংবাদিকদের দেয়া হচ্ছেনা। এই করোনাকালের কঠিন সময়টাতে এবং পবিত্র রমজান মাসে এসব অসহায় সাংবাদিকেরা তাদের পরিবারপরিজন নিয়ে কি খাবেন? কিভাবে এসব সাংবাদিকরা চলবেন? এতটুকু মানবতা যাদের ভেতর নেই, তারা মালিক নামের পাষন্ড।
আমার মনে পরে, ২০১৭ সালের এমনি একটি দিনে ৮৭ জন সাংবাদিক-কর্মচারিকে ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দীন চাকুরিচ্যুত করেছিল। তাদের অপরাধ ছিল তারা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ৩০ শতাংশ পাওনা বুঝে নিয়ে শতভাগ পেয়েছি মর্মে সই দেয়নি। পরবর্তিতে তাদেরকে ২৬ মাসের বকেয়া বেতন ও সাভিস বেনিফিট না দিয়েই ধর্মের নামে ভন্ডামি করা ওই মানুষটি চাকুরিচ্যুত করেছিল। একটি বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাওনা মেলেনি। অগত্যা ইউনিয়নের নেতাদের পরামর্শে সাংবাদিক-কর্মচারিরা মামলায় যেতে বাধ্য হয়।
কারো পেটে লাথি পড়লে আমি বুঝি- এটা কতটা কষ্টের। পরিবারপরিজন নিয়ে তারা কতটা নাজুক অবস্থার মুখে পড়ে তা আমি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। আমি জানি, শ্রমের ন্যায্য পাওনা মেরে দিয়ে যখন একজন অমানুষ দম্ভ করে-তখন আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে থেকেই একটি মহল নিকৃষ্ট মালিকটির পক্ষ নেয়। তারা ওই নিকৃষ্ট মালিকের বন্দনা করে বেড়ায়। আর অন্যদিকে, চাকুরিচ্যুত অভুক্ত শ্রমিকের সন্তানরা ক্ষুধায় কাতরায় নিজ ঘরে। এই নির্মমতার অবসান হওয়া উচিত।
সরকার গণমাধ্যমকে অষ্টম ওয়েজবোর্ডে সুবিধা দেয়- সাংবাদিকদের রুটিরুজির জন্য। নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধের জন্য। পত্রিকা কিম্বা টিভি চ্যানেলের আয়ের টাকা লুণ্ঠন করে বাড়ী, গাড়ী, বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য নয়। মালিকের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায় সাংবাদিকদের বলি হওয়ার জন্য নয়।
আমি বিএফইউজে ও ডিইউজের উভয় অংশের নেতাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ রাখবো, আসুন এই কঠিন দু:সময়ে যেসব ভাই ও বোনেরা চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন এবং যেসব টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় বেতন হচ্ছেনা- সেইসব সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াই। তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মালিকদের চাপ দেই। আপনারা সংগঠনের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রনালয়কে লিখিতভাবে বিষয়গুলো অবহিত করুন এবং এর প্রতিকার চান।
এটি একবারেই আমার ব্যক্তিগত মত। কেউ কষ্ট পেলে আমি আন্তরিকভাবে দু:খিত।
লেখকঃ
সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।