বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুযোগ বহাল চান জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। পাশাপাশি বিভাগীয় কমিশনারের পদকে প্রথম গ্রেডে উন্নীত চান তারা।
অন্যান্য বাহিনীর মতো প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারাও বিদেশে শান্তি মিশনে যেতে চান। এছাড়া সরকারি মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দ ও সোর্সমানি বাড়ানো, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা, হাওর এলাকার জন্য ‘হাওর ভাতা’সহ নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।
সারা দেশের ডিসিদের পাঠানো ৩৪৯টি প্রস্তাব নিয়ে আজ মঙ্গলবার তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন মাঠপ্রশাসনের ৬৪ ডিসি ও আট বিভাগীয় কমিশনার। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে মাঠপর্যায়ে নানা প্রতিবন্ধকতা তারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবেন। উদ্বোধনের পর বাকি অধিবেশনগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত। ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত ৩৪৯টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন বিভিন্ন জেলার ডিসিরা। এগুলো নিয়ে তিন দিনে ২২টি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রস্তাবগুলোর উল্লেখযোগ্য কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হল-
সম্মেলনকে সামনে রেখে মোবাইলকোর্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন একাধিক ডিসি। তারা এ কোর্টের বিচারিক ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসির) অন্তত ৮টি ধারা সংশোধনসহ আইন ও বিচার সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছেন তারা।
সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেছেন ডিসিরা। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়নের সময় কর্মকর্তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮-এর ১০(২) ধারার বিধান অনুযায়ী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করাসহ এ আইনের আরও কয়েকটি ধারা পরিবর্তন চান তারা।
কয়েকজন জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা বাড়াতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার বলেছেন, বিভাগীয় কমিশনারের পদটি প্রশাসন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। কমিশনাররা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের যাবতীয় কাজের সমন্বয় করে থাকেন। কর্মপরিধি ও কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় এ পদটিকে প্রথম গ্রেডে উন্নীত করা দরকার।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক প্রস্তাব করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয়সহ যে কোনো পরিস্থিতিতে সিভিল প্রশাসন সবার আগে আত্মনিয়োগ করে। প্রশাসন ক্যাডারের এসব কর্মকর্তাকে বিদেশে শান্তি মিশনে কাজের সুযোগ দেয়া হলে দেশের সুনাম রক্ষায় কাজ করতে পারবেন।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানি তেলের পরিমাণ মাসে ১৮০ লিটার থেকে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক হাওর এলাকার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ‘হাওর ভাতা’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন।
সরকারি মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক বলেছেন, সরকারি স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে ডিসি ও ইউএনওদের প্রায়ই বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন হতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার দায়ে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হতে হয়।
এক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দ দেয়া হলে কর্মকর্তাদের কাজের স্পৃহা বাড়বে।
সোর্সমানি দেয়ার প্রস্তাব করে দিনাজপুরের ডিসি বলেছেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ড যেমন- সন্ত্রাস, জঙ্গিতৎপরতা, সহিংসতা, চোরাচালান, মাদকের অপব্যবহার ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমনে জেলা প্রশাসকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়। এজন্য ডিসিদের অনুকূলে সোর্সমানি বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক গাড়ি মেরামতের জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করার প্রস্তাব করেছেন। পাশাপাশি তিনি পরিবহন পুলের চালক নিয়োগের ক্ষমতা দেয়ারও প্রস্তাব করেছেন। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের মোবাইল ফোন ভাতা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন ডিসি ইন্টারনেট ভাতা চালু করার প্রস্তাব করেছেন।
তিন দিনের ডিসি সম্মেলন নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, সরকারের নীতিনির্ধারক ও ডিসিদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বছর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে ৩৪৯টি প্রস্তাব এসেছে। এগুলো ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত।
শফিউল আলম বলেন, মুক্ত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মাঠ প্রশাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে শুনবেন ও নির্দেশনা দেবেন। প্রথম দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে এ অধিবেশন হবে। এরপর ২৬ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করবেন ডিসিরা। এটা হবে বঙ্গভবনের দরবার হলে।
তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ১৮টি কার্য অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। কার্য অধিবেশনগুলোয় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শফিউল আলম জানান, ডিসি সম্মেলনে ২২টি অধিবেশন, ৫২টি মন্ত্রণালয়ের ১৮টি কার্য অধিবেশন থাকবে। এতে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা অংশ নেবেন। ২৭ জুলাই বেলা ৩টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অধিবেশন।
গত বছরের ডিসি সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত বছরের ডিসি সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৯৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাস্তবায়নের হার সাধারণত এমনই হয়।’
বাংলা৭১নিউজ/বিকেএম