বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা : আজ মঙ্গলবার ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এই দিনে আরবের মরু প্রান্তরে শুভাগমন করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)।
মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশিকা নিয়ে মানবজাতির কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ওপর নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ আল-কোরআন মানবজাতির মুক্তির একমাত্র পথ নির্দেশিকা। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে তৌহিদের মহান বাণী নিয়ে এসেছিলেন এই মহামানব। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। আবার এ দিনেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
তাই মুসলমানদের কাছে আজকের দিনটি বিশেষ গুরুত্ববহ। যথাযথ মর্যাদায় এই দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে মুসলমান সম্প্রদায়। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
বিশ্বনবী এমন এক সময় পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হয়েছিলেন যখন আরবের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা অধঃপতনের চরম সীমায় নেমে গিয়েছিল। তাঁর আগমনে শিরক, পৌত্তলিকতা, জাহেলিয়াত ও বর্বরতা দূরীভূত হয়। তাঁর শুভাগমনে বিশ্বের সৌভাগ্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়। তাঁর আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির ললিত বাণীর প্রচার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠা পায় সব ধর্মের ওপর ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব।
মহান আল্লাহ পাক তাঁর পেয়ারা হাবিব বিশ্বনবী (সা.)-কে বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিঁনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছিলেন তিঁনি। এরপর মহানবী (সা.) দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর এ বার্তা প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়। পবিত্র ঈদে-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দেশবাসীসহ বিশ্বের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর অফুরন্ত কল্যাণ ও সফলতা নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকের অশান্ত ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত মুখর বিশ্বে প্রিয়নবী (সা.)-এর অনুপম শিক্ষার অনুসরণের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।’
কর্মসূচি : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, সমাবেশ, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ইত্যাদি। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
এ উপলক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া সরকারি, আধা সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তাইয়্যিবা’ লেখা ব্যানার ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাতে সরকারি ভবনসমূহ ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সন্ধ্যায় হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা সভা, মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার যথাযোগ্য গুরুত্বসহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস