রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ বের করতে হবে: তারেক রহমান স্পেন্ড অ্যান্ড উইন : বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে মুইজ্জুর আসন্ন ভারত সফর কী বার্তা দিচ্ছে? হবিগঞ্জে থানা চত্বর থেকে পরিত্যক্ত শটগান উদ্ধার গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যা নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা-শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে মামলা মাঝ রাস্তায় যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধের নির্দেশ সোনার দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১৩৩০৫১ টাকা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ সেনা নিহত বাংলাদেশের ইলিশ পাঠানোর ঘোষণায় পশ্চিমবঙ্গে খুশির জোয়ার সাজেকে আটকা পড়েছে ৮ শতাধিক পর্যটক সিলেটে বজ্রপাতে একদিনে ৪ জনের মৃত্যু ইতিহাসে প্রথমবার ২৬০০ ডলার ছাড়ালো সোনার আউন্স আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে হাত ভেঙে দেওয়া হবে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ মুখোমুখি, যা বললেন জাতিসংঘ প্রধান কাশিমপুর থেকে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া: ফখরুল ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতের মধ্যে নতুন যুদ্ধাস্ত্র সামনে আনলো ইরান সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে বৃদ্ধের মৃত্যু কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না: নজরুল ইসলাম খান

আগ্রাসী পদ্মার ভাঙনে নদীর তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আবাদি জমিসহ বসতঘর বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙন আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে পদ্মার তীরবর্তী মানুষ। 

সাধারণত বর্ষাকালে পদ্মার পানি বাড়লে স্রোতের গতি বেড়ে যায়। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এছাড়া নদীর তলে পলি জমা, নতুন চর তৈরি ও নদীর প্রশস্থতা বেশি হলে নদী ভাঙনের শঙ্কা বাড়ে। 

স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহ খানেক ধরেই পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের খলিফাচর থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দশরশিয়া পর্যন্ত ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

যার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এসব এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সবচেয়ে এখন বেশি ভাঙন হচ্ছে নারায়নপুরের দেবীপুর ও পাকা ইউনিয়নের ছাব্বিশরশিয়ায়। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো রয়েছে হুমকিতে।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা শামিম রেজা মিলন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষায় পদ্মার পানি বাড়ায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে আশপাশের জেগে ওঠা চরগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। গত এক বছরের মধ্যে পদ্মার তীরবর্তী প্রায় ৬শ পরিবারের ভিটামাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের নদী ভাঙনে আমাদেরই প্রায় ৪০ বিঘা আবাদি জমিসহ ভিটামাটি বিলীন হয়েছে। ছোট বেলার সব স্মৃতি এখন নদীতেই। 

নারায়নপুরের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ, আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পদ্মার দূরত্ব মাত্র একশ-দেড়শ মিটার। হুমকিতে আছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। 

শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়নের দফাদার মো. মতিউর রহমান বলেন, পদ্মায় তীব্র ভাঙনে ভিটামাটিসহ আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে। 

চরেও কষ্টে ভাঙন কবলিতরা: পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচতে বেশি পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া ও নারায়নপুর কালুপুরের চর এলাকায় স্থান্তরিত হচ্ছে মানুষ। ভিটামাটি হারিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে চরে এসেও অনেক উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন তারা। 

স্থানীয়রা বলছে, পদ্মার নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরগুলোয় মানুষ বসবাসের অযোগ্য। পদ্মার তীরবর্তীর নিম্ন আয়ের মানুষরা বছরের পর বছর নদীর একুল-ওকুলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বাধ্য হয়েই তারা সেখানে বসবাস করেন। কিন্তু সেখানে খাবার পানি, সরকারি স্বাস্থ্য সেবাসহ অনেক কিছু থেকে তারা বঞ্চিত। তাছাড়া নতুন করে ‘সাপ আতঙ্কও’ বেড়েছে।

গত বুধবার (১০ জুলাই) সকালে বাড়ির কাজ করার সময় বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান নিশিপাড়া চরের সায়েম আলীর স্ত্রী জিয়াসমিন। বসতবাড়িতে ইঁদুরের গর্ত থেকে একটি সাপ বের হয়ে জিয়াসমিনের হাতে ছোবল দেয়।

এরপর পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে নৌকাতেই মারা যান তিনি। ওই গৃহবধূর স্বজন আব্দুল অহেদ বলেন, সকালে বিষাক্ত সাপে কামড় দিলে দেড় ঘণ্টা পর মারা যান জিয়াসমিন। এই সময়ের মধ্যে অ্যান্টিভেনম দেওয়া গেলে বাঁচানো সম্ভব হতো। 

নাজমুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, চরাঞ্চলে সাপের আতঙ্ক অনেক বেশি। নিশিপাড়া চরে অনেক ভাঙন কবলিতদের বসবাস। কিন্তু এখানে কোনো অস্থায়ী স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র না থাকায় মানুষ আতঙ্কে আছেন। সেবার ভরসা কেবলমাত্র গ্রাম্য ডাক্তার। 

পদ্মায় বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দুই ইউনিয়নে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুরের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে।

২০২০ সালের ৩ মার্চ একনেকে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হলে কাজ শুরু ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ৩৭ কোটি ব্যয় বেড়ে হয় ৬০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৩ সালের জুনে। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পের অধীনে ২৯টি প্যাকেজে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার নতুন নদী তীর সংরক্ষণ, চারটি প্যাকেজে আগের বাস্তবায়ন হওয়া ৪ কিলোমিটার জুড়ে পুনর্বাসনসহ আগে নির্মাণ করা ৮ কিলোমিটার সংস্কার কাজ চলছে। 

সংশ্লিষ্টরা যা বলছে: নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, দুটি ইউনিয়নজুড়ে পদ্মায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। প্রতি বছরই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আলোচনা করা হলেও বাস্তবায়ন হয় না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হলে পদ্মার তীরবর্তীর মানুষ উপকৃত হবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, নারায়নপুর ও পাকায় নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। এলাকাগুলোতে অস্থায়ী বাঁধ কোনো কাজে আসে না। তাই ২৩ কিলোমিটার জুড়ে পদ্মায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ হয়েছে। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। একনেকে পাস হলে দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকার বাঁধ রক্ষার কাজ ৭৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে আরও সময় প্রয়োজন। সেজন্য ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। 

জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি চিকিৎসা। নিশিপাড়া চরে অস্থায়ী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে কাজ শুরু হবে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএম

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com