শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুলসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লিফলেট বিতরণ এবার কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করলে অসুবিধা হবে : কর্মকর্তাদের সিইসি অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল ইসলামী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি শেখ হাসিনার দুর্নীতি খুঁজে বের করতে টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি ‘বৃহত্তর ইসরাইলের’ মানচিত্র প্রকাশ, আরব দেশগুলোর কড়া প্রতিবাদ বিমানবন্দরে রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা, হতে পারে জেলও ৩০ জুনের আগেই মহার্ঘভাতা ঘোষণা মানিকগঞ্জে ডিসির রুমের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান দাবি মানার আল্টিমেটাম দিয়ে ‌‌শাহবাগ ছাড়লেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা শরীয়তপুরে থানা থেকে ওসির মরদেহ উদ্ধার নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন শহীদ মিনারের পর শাহবাগ অবরোধ বিডিআর সদস্যের স্বজনদের জেনেভা ক্যাম্পের আলোচিত সন্ত্রাসী চুয়া সেলিম গ্রেপ্তার মা‌র্কি‌নিদের হয়ে ঢাকায় বিশেষ দা‌য়িত্ব সামলাবেন ট্র্যাসি জ্যাকবসন বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন রাশিয়ায় বিমানবাহিনীর তেলের ডিপোয় ইউক্রেনের হামলা হাইভোল্টেজ ম্যাচে টস জিতে বরিশালকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো রংপুর

অহিংস আন্দোলন মোকাবিলায় ভয়ঙ্কর বার্তা

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসি’র পদত্যাগের দাবিতে ১৬৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট অনশন করে দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। পুঞ্জীভূত অন্যায় ও বেদনাকে দূর করার জন্য, সংগ্রামের অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘আমরণ অনশন’, কোনো সহিংসতা বা অরাজকতা নয়। ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিরন্তর যন্ত্রণাদগ্ধ হয়ে সত্যকে অবলম্বন করে অসাধারণ প্রজ্ঞার সঙ্গে অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

কারও ওপর হামলা নয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংস নয়, কারও জীবন বিপন্ন করার ঝুঁকি নয়, প্রতিশোধ নয়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার ঝুঁকি নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা মহৎ অনুভূতি লালন করে জীবনকে চিরদিনের মতো সমর্পণ করতে চেয়েছিলেন অধিকার আদায়ের বেদিতে। খোলা আকাশের নিচে, শীতের তীব্রতায়, মাটির শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করার মতো অপরাজেয় মনোবৃত্তি লক্ষ কোটি মানুষকে অভিভূত করেছেন, তারা মানুষকে সংগ্রাম ও প্রতিরোধ পুনরুজ্জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছেন।
এই অনশনের অভূতপূর্ব সমারোহ আমাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন নৈতিক সংকটগ্রস্ত সমাজে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের ছাত্র আন্দোলন ও সংগ্রামের পাটাতনে নবতর এক ঐশ্বর্যের যোগান দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
পরিশেষে অবসান হয়েছে একশ’ তেষট্টি ঘণ্টার উদ্বেগ এবং টানা আটদিনের অনশন ও চাপা উত্তেজনা। ঘটনার দৃশ্যপটে জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিশ্বাস আছে, অন্তত ড. জাফর ইকবাল ছেড়ে যাবেন না।’

শিক্ষার্থীরাই বলেছেন- আমরা কাউকে বিশ্বাস করি না। আমাদের রাজনীতিবিদরা কোমলমতি সন্তানসহ সমগ্র দেশবাসীর আস্থা এবং বিশ্বাস বিনষ্ট করে ফেলেছেন, তাও তাদের উপলব্ধিতে নেই। এটা সরকার এবং রাজনীতির জন্য কত ভয়াবহ বার্তা, এরপরও আত্মতুষ্টিতে আত্মম্ভরী সরকার ও রাজনীতিবিদদের সম্বিৎ ফিরে কি না, নাকি সরকার নিরোর ন্যায়  বাঁশি বাজাতে থাকবে তাই এখন দেশবাসীর দেখার বিষয়।

অনশন এবং আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থায় শাবি’র ৫ জন সাবেক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে একটি ভয়াবহ দৃশ্যের মঞ্চায়ন করা হয়। হাবিবুর রহমান খান, রেজানুর মুইন, এএসএম নাজমুল সাকিব, একেএম মারুফ হোসেন এবং ফয়সল আহমদকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করা হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি জানিয়েছেন- আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা এই ক্যাম্পাসের সাবেক ছাত্র। আন্দোলনে অর্থের যোগানদাতা বলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

এই পাঁচজনের একজন মাত্র ১০০০ টাকা দিয়েছিলেন। মানবিক এবং সহানুভূতিশীল হয়ে সহযোগিতা করায় তাদের কপালে দুর্ভোগ নেমে আসে। ভিন্নমতকে শায়েস্তা করার জন্য অজুহাত খুঁজতে সরকারের কাল বিলম্ব হয়নি। গত ৫০ বছরেও উপনিবেশিক সংস্কৃতির কোনো অবসান হয়নি। উপনিবেশিক রাষ্ট্র আর রক্ত দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্রের পার্থক্য দিনদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

কর্তৃত্ববাদী সরকারের দৃষ্টিতে আন্দোলন হচ্ছে বড় ধরনের অপরাধ। আন্দোলন মানে হচ্ছে নাশকতা, রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত। আন্দোলনের এই নতুন ‘ডিসকোর্স’ গত এক দশকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ডিসকোর্স অনুসরণ করলে এ দেশে কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হতো না। আন্দোলন মানেই ষড়যন্ত্র বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমকক্ষ বলে ভয়ের ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহ্‌রু, সুভাষ বসুকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য বহুবার গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছে কিন্তু সেসব আন্দোলনে যারা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করার কোনো ইতিহাস আমাদের জানা নেই।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারান্তরীণ অবস্থায় এবং বঙ্গবন্ধুর চলমান সংগ্রামে অগণিত আর্থিক সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলার খবর শোনা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ প্রতিম শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত এবং দুঃখ-কষ্টে বিপন্ন বিধায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক কর্তব্যবোধ থেকে যারা কিছু অর্থ পাঠিয়েছেন তাদেরকেই বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে ঢাকা থেকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া কি রাষ্ট্রীয় জরুরি কর্তব্য ছিল? অহিংস আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশেই জালালাবাদ থানায় তাদেরকে আটক করে রাখা হয়। কী নির্মম, কী নিষ্ঠুর আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা।

দেশবাসীর প্রশ্ন, ছাত্রলীগের যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে, জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে তাদের একাউন্টে কেউ টাকা পাঠালে তাকেও কি গ্রেপ্তার করা হতো?
বিবেকের তাগিদ থেকে যারা সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করেছে কোনো ধরনের পর্যালোচনা করা ছাড়াই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলো। যে হাত সহযোগিতা করেছে সে হাতেই হাতকড়া পরানো হলো। যারা প্রশংসিত হওয়ার কথা, যারা সংবর্ধিত হওয়ার কথা, তারাই রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হলো।

অন্যদিকে, একই অনশনরত ছাত্রদের অ্যাকাউন্টে ড. জাফর ইকবাল নগদ ১০,০০০ হাজার টাকা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানান। জাফর ইকবালকে গ্রেপ্তার না করায় প্রমাণ হয়, অন্যায়ভাবে সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাদের প্রতি প্রচণ্ড অবিচার এবং আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে! এতে কি প্রমাণ হয় না রাষ্ট্র নিজেই নিজেকে আইন অমান্যকারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে?

যারা অর্থ পাঠিয়েছেন তারা কি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকাকালীন সময়ে অস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ছিল, নাশকতায় জড়িত ছিল? আর যেখানে টাকা গিয়েছে সেখান থেকে কি টাকা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রের হাতে স্থানান্তর হচ্ছিল? কোনো কিছু তদন্ত ছাড়াই একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে গোপন অভিসন্ধির অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় কি? সরকার ক্রমাগতভাবে রাষ্ট্রকে নির্দয় রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত এই ৫ জনের যে আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে তা কি পুনরুদ্ধার যোগ্য? তাদের পরিবারের হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে, যে বেদনার বিস্তার করা হয়েছে, যে ক্ষতির শিকার তাদের হতে হয়েছে তা কি কোনোদিন পূরণ হবে? এই অপুরণীয় ক্ষতির দায় কার?

যে পাঁচজন দুঃসময়ে নৈতিক শক্তির তাগিদে আমাদের সন্তানদের সহমর্মিতা জানায় রাষ্ট্র তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলো। এই গ্রেপ্তারকৃতদের পক্ষে কোনো মানবাধিকার সংগঠন এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলও দাঁড়ায়নি।সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষকে নিকৃষ্ট পথে শায়েস্তা করার সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ রাষ্ট্রের কাছে ‘করুণার’ পাত্র হয়ে যাচ্ছে।

আজ ইচ্ছা করলেই রাষ্ট্র নাগরিকের মর্যাদা কেড়ে নিতে পারে, দণ্ড দিতে পারে, এমনকি জীবনও নিতে পারে। রাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই ব্যক্তির গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকিতে ফেলতে পারে। অথচ রাষ্ট্র কোনোক্রমেই একজন নাগরিকের মর্যাদা হরণ করতে পারে না। মানুষের মর্যাদা হরণ রাষ্ট্রের এখতিয়ার বহির্ভূত। কিন্তু এখন রাষ্ট্র নাগরিকের মর্যাদা অহরহ হরণ করছে।

গ্রামসি বলেছেন ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে- আইনের চোখে সকলের সমতা অর্জন, যা অর্জন করতে কমপক্ষে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রয়োজন।’

শাহ্‌জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিয়েছে অহিংস আন্দোলনের আলোকবর্তিকা আর রাষ্ট্র দিয়েছে ভয়ঙ্কর বার্তা। আমাদের অন্যায়ের মাত্রা যত বাড়বে, অন্যায্যতা যত বাড়বে ততোই ন্যায় বিচারের মাটি, নৈতিকতার মাটি, মানবিকতার মাটি আমাদের পায়ের তলা থেকে সরে যাবে। পরবর্তীতে প্রজাতন্ত্রের যেখানেই আমরা পা রাখবো সেখানেই আমরা চোরাবালিতে তলিয়ে যাবো আরও সংকটের গভীরে ডুবে যাবো। আন্দোলন ছাড়া, সংগ্রামী মানুষের উত্থান ছাড়া সমাজ বিকাশের আর কোনো পথ নেই। আন্দোলন-সংগ্রাম স্তব্ধ করে দিয়ে জাতির সার্বিক বিকাশকেই যে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হচ্ছে এইটুকু বিবেচনাবোধ সরকারের নেই।
কনফুসিয়াস বলেছেন- তুমি যদি অন্যের ক্ষতি করতে চাও তাহলে দু’টো কবর খুঁড়ো। প্রথমটি তোমার অন্যটি শত্রুর।’

২৯.০১.২০২২
লেখক: গীতিকার

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com