গার্মেন্টকর্মী নারী মৃত স্বামীর লাশ গাজীপুর থেকে গ্রামে শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে আসেন দাফন করতে। এ সময় লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর। একপর্যায়ে পুলিশে খবর দিলে ধরা পড়েন স্ত্রী ছাড়াও লাশের সঙ্গে আসা আরো পাঁচজন।
আজ রবিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর এলাকার যাদুয়ার চর গ্রামে।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ওই গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (২৮) গত প্রায় চার বছর আগে বিয়ে করে পাশের ঘাগড়া গ্রামের কসম উদ্দিনের মেয়ে মোসা. হাজেরা আক্তার (২২) কে। বিয়ের পর আয়-রোজগারের আশায় দুজনই চলে যান গাজীপুরের কোনাবাড়ির মইলা পুকুরপাড় এলাকায়। সেখানে থেকে হাজেরা একটি গার্মেন্টে ও দেলোয়ার বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের কাজ করছিলেন।
দেলোয়ারের পরিবারের লোকজন জানান, কিছুদিন পর হাজেরার বেপরোয়া চলাফেরায় বাধা দেন দেলোয়ার। এতে নিজের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে মনে করে স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিবাদে জড়ান হাজেরা। কোনোমতেই হাজেরাকে বাগে আনতে পারছিলেন না দেলোয়ার। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করায় কয়েকমাস আগে দেলোয়ার বাড়িতে চলে আসে। পরে স্ত্রী হাজেরা শ্বশুড়বাড়িতে এসে বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বেশি দিন পার হয়নি। আবারো ঝগড়া শুরু হয়।
নিহত দেলোয়ারের মা মিনু খাতুন জানান, গত শনিবার রাত ১২টার দিকে ছেলে দেলোয়ার তাঁকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জানায় এ মাসের বেতন পেয়ে একেবারে গ্রামে চলে আসবে। তার (ছেলের) আর কিছুই ভালো লাগে না। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই হাজেরা ফোন করে জানায়, তাঁর স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে নিলে সেখানেই মারা যায়। কয়েক ঘণ্টা পর লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে বলেও জানায় হাজেরা।
আজ রবিবার দুপুর ১২টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে আসেন হাজেরা। সঙ্গে আসনে দুই বোন, এক বোন-জামাই, ভাবি ও ভাই। এ সময় লাশ খুলে দেখা যায় লাশের বুকে, মাথায় ও মুখে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।
নিহতের এক আত্মীয় রতন মন্ডল জানান, তিনি মরদেহের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে এগুলো কীসের আঘাত প্রশ্ন করলে হাজেরা যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি। ফলে পাড়া-প্রতিবেশীসহ পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে লাশের সঙ্গে আসা সকলকেই আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. রেজাউল করিম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহালকালে দেখতে পান শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অনেক আঘাতের চিহ্ন। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় এটি রহস্যজনক মৃত্যু। তা ছাড়া লাশের সঙ্গে কোনো মৃত্যু সনদ নেই। এ অবস্থায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ