নরসিংদীর শিবপুরে মাদক কারবারির আধিপত্য ও টাকা লেনদেনের বিরোধেই রুবেল মিয়া ও জাহিদ হোসেন রাজু খুন হন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। রোববার ভোরে রায়পুরা থানার দৌলতকান্দি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-১১, সিপিএসসি, নরসিংদী।
এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ কেজি গাঁজা ও ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। রোববার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার হাসিমপুর কলাবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আবু সাঈদের ছেলে উমেদ আলী (৩৫) ও সদর উপজেলার মাধবদী থানার নওয়াপাড়া ভগিরতপুর গ্রামের মৃত হাজী ফিরোজ মেম্বারের ছেলে আকরাম হোসেন (৩৪)।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১, সিপিএসসি, নরসিংদীর একটি চৌকস অভিযানিক দল জেলার রায়পুরা থানার দৌলতকান্দি গ্রামে অভিযান চালায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শিবপুরের ক্লুলেস জোড়া খুনের অন্যতম প্রধান আসামি উমেদ আলী ও তার সহযোগী আকরাম হোসেনকে গ্রেফতার করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবপুরের শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাত দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াও অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে কিছু সময় পরই পুলিশ নিশ্চিত হয় নিহত দুই যুবক হলেন, পলাশ উপজেলার খানেপুর গ্রামের রুবেল মিয়া (২৫) ও নরসিংদী সদর উপজেলার শাহেপ্রতাব এলাকার জাহিদ হোসেন রাজু (৩০)।
পরিচয় শনাক্তের পরপরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে র্যাব। পরে নানা তদন্ত ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে জোড়া খুনের অন্যতম মূল আসামি উমেদকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদক কারবারের সহযোগী আকরাম হোসেনকে রায়পুরার দৌলতকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আকরামের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে র্যাব নিশ্চিত হয় যে, রাজু, রুবেল ও শাহাজালাল ৩ জনই পেশায় গাড়িচালক। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে বুধবার রাতে রুবেল মিয়া রেন্ট-এ-কারের চালক শাহজালালকে ফোন করে মাধবদীতে একটি ট্রিপ থাকার কথা বলে।
পরে রুবেল, শাহজালাল ও রাজু ৩ জন শাহাজালালের বাসায় একত্রিত হন। এ সময় শাহাজালালের বাসায় সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী উপস্থিত ছিল। এ সময় মাদক বিক্রয় অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে রাজু ও রুবেলের সঙ্গে সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাদের সহযোগীদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।
সোহেল, উমেদ ও তার সহযোগীরা নিহতদের কাছ থেকে তাদের সঙ্গে থাকা ২টি প্রাইভেটকার নিয়ে নেয়। এরপর শিবপুরের বড়ইতলা মনিরের বাড়িতে যায়। সেখানে মাদকের অর্থের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে উমেদ, সোহেল ও তার সহযোগীরা পুনরায় তিনজনকে মারধর করে। একপর্যায়ে উমেদ ও তার সহযোগীরা শ্বাসরোধে রুবেল ও রাজুকে হত্যা করে।
হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আকরাম ও আলমগীর নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সময় শাহজালাল ও কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে র্যাব উমেদকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে উমেদ ও সোহেলের সঙ্গে রাজু ও রুবেলের মাদক কারবারের পূর্বের বিরোধ ছিল।
আকরাম মূলত তাদের মাদক কারবারের সহযোগী এবং যে মাদকের কারণে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে, সেটি আকরামের কাছে আছে, যার প্রেক্ষিতে আকরামকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জোড়া খুনের মূল আসামি সোহেলকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, ৫২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি প্রাইভেটকারসহ রায়পুরা থানার তার শ্বশুরবাড়ি অলিপুরা পশ্চিমপাড়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ