মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

বৃষ্টি হলেই খুলে যায় নীল বর্জ্যের দুয়ার, মিশছে হালদায়

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি: ২০১৮ সালের জুন মাস। চলতি সময়ের মতো ভরা বর্ষা তখন। মাত্রই এক-দেড় মাস আগে ডিম দেয়া মা-মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে হালদার বুকে। মৃত মাছে সাদা হয়ে গেল হালদার বুক, ডোবা জমিন। চারদিকে হইহই পরে গেল, কেন মরছে হালদার মাছ? পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও পরিবেশ অধিদফতরের একটি যৌথ দলের অনুসন্ধানে জানা গেল, নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতির জেরে হালদায় মারা যাচ্ছে মাছ। প্রশ্ন হলো নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া এলো কোথা থেকে?

দেরিতে হলেও সে প্রশ্নের উত্তর হাতেনাতে দিলেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন। সোমবার (৮ জুলাই) সকালে হাটহাজারীর এগারো মাইল এলাকায় গিয়ে তিনি দেখতে পান টানা বৃষ্টির সুযোগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে হাটহাজারীর ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের তরল বর্জ্য। যা সরাসরি গিয়ে মিশছে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘গত বর্ষায় হালদায় মা-মাছ মারা যাওয়ার ঘটনার জন্য নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতিকে দায়ী করেছিল কয়েকটি গবেষণা সংস্থা। তাই দীর্ঘ নয় মাস সতর্কতার সঙ্গে হাটহাজারীর পিকিং পাওয়ার প্লান্টসহ দুটি প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণে রাখি। সোমবার সকালে খবর আসে বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে পিকিং পাওয়ার প্লান্টের তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে স্থানীয় খালে, যা মিশছে হালদা নদীতে। সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে খালে বর্জ্য ফেলার প্রমাণও পাই। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের নামে প্রতারণা করে আসছে।’

এ ঘটনার পরপরই ছবি-প্রমাণসহ একটি প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদফতরে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এর প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপককে আগামী ১৭ জুলাই পরিবেশ অধিদফতরে শুনানিতে হাজিরের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।

halda

পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (জেলা) আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সরাসরি তরল বর্জ্য ফেলার প্রমাণ পেয়েছি। বিদ্যুৎকেন্দ্রেও গিয়েছিলাম। তাদের কোনো তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই। উন্মুক্ত পরিবেশে তরল বর্জ্য ফেলে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করায় ১৭ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সেই শুনানিতে তাদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে।’

শুধু যে হাটহাজারীর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট হালদায় বর্জ্য ফেলছে তা নয়। হালদাপাড়ের শিল্পকারখানাগুলোর বেশির ভাগেরই ইটিপি (তরল বর্জ্য শোধনাগার) নেই। যেসব কারখানার ইটিপি রয়েছে, সেগুলোও সবসময় চালু করা হয় না। তাই বৃষ্টি হলেই কারখানা ও ট্যানারির দূষিত বর্জ্য সরাসরি ছেড়ে দেয়া হয় নদীর পানিতে। হাটহাজারীর খন্দকিয়া, কাটাখালী, বাথুয়া, কৃষ্ণখালী, শাহ মাদারী ও চট্টগ্রাম নগরের বামনশাহী খাল বেয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য প্রতিদিনই পড়ছে হালদায়।

এমনই অভিযোগ আছে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে। বর্ষা এলেই পেপার মিলটি থেকে ছেড়ে দেয়া হয় ক্ষতিকর বর্জ্য। সম্প্রতি হালদা দূষণের অভিযোগে এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার।

halda

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এশিয়ান পেপার মিল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের শিল্পবর্জ্য প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীসহ আশপাশের পরিবেশকে ধ্বংস করছে। হালদার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে গিলে খাচ্ছে এই মিল। গত বছরও হালদায় ডিম ছাড়ার সময় এই মিল তাদের বিষাক্ত পানি ছেড়ে অসংখ্য মা-মাছ নিধন করেছে।

তিনি জানান, ২০১৮ সালের ১২ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত টানা বর্ষণে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। হালদা নদীও এই তিন উপজেলায়। ফলে বন্যার সময় খাল, বিল, ডোবা ও পুকুরের পানি একাকার হয়ে যায়। এ সময় সুযোগ বুঝে হাটহাজারীর পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও এশিয়ান পেপার মিলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানার বর্জ্য ছেড়ে দেয় হালদায়। এরপর থেকে মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এশিয়ান পেপার মিল, হাটহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য সরাসরি খালের মাধ্যমে হালদা নদীতে এসে পড়ছে। পানি বাড়ার কারণে নদী ছাড়াও এসব দূষিত পানি খাল-বিলে মিশে যাচ্ছে।’

halda

হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ১০টি কারণে প্রতিদিন দূষণের কবলে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্র হালদা। এর মধ্যে রয়েছে আবাসিক, শিল্প ও ট্যানারির বর্জ্যে প্রতিনিয়ত দূষণ, নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন, নদীর তীরে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটায় নদীর মাটি ও পানির ব্যবহার, ফটিকছড়ির চা-বাগানগুলোর জন্য নদীর পানি ব্যবহার, নদীতে রাবার ড্যামের (বাঁধ) প্রতিবন্ধকতা, নদীর অন্তত ১১টি স্থানের বাঁক সমান করে ফেলা, নদীর তীরে তামাক চাষ ও যন্ত্রচালিত নৌযান থেকে তেলের নিঃসরণ।

২০১৮ সালের এপ্রিলে হালদায় গাঙ্গেয় প্রজাতির বিপন্ন ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বাংলা৭১নিউজ/এআর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com