বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর আজ সোমবার ‘মিনি পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন।সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়। একটানা বেলা দুইটা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।
সকাল আটটায় বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন। ঠিক আটটার দিকে ভোটকক্ষে উপস্থিত প্রার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স খুলে দেখান নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা।খালি ব্যালট বাক্স সবাইকে দেখানোর পর তা সিলগালা করা হয়।
বিজয় একাত্তর হল সংসদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও হল প্রাধ্যক্ষ এ জে এম শফিউল আলম বলেন, প্রার্থীদের সামনেই ব্যালট বাক্সগুলো খুলে দেখানো হয়েছে। কেউ যেন এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করতে না পারে। আবার ভোট গ্রহণ শেষে আবার সবার সামনে সেটি খোলা হবে। তিনি বলেন, এর স্বচ্ছতা নিয়ে আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ নেই।
এরপরই শুরু হয় বহু প্রতীক্ষার ভোট।নিয়ম অনুযায়ী, আবাসিক হলগুলোয় এই ভোট গ্রহণ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাঁর যাঁর হলে ভোট দিচ্ছেন।
ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে ফজলুল হক হলে ছাত্রদের ভোটের লাইন। ফজলুল হক হল, ঢাকা, ১১ মার্চ।
বিজয় একাত্তর হলে ভোট দিয়ে বের হয়ে এসে এস এম লতিফুল খাবির নামের এক প্রার্থী বলেন, ভোট নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো সমস্যা দেখেননি। তিনি এই হল সংসদে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের ব্যানার থেকে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। তবে ৩৮টি (ডাকসু ও হল সংসদ মিলে) ভোট দিতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগছে বলে তিনি জানান। এ কারণে বেলা দুইটার মধ্যে সব ভোটারের ভোট নেওয়া শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
এই নির্বাচনে প্রচার পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও শেষ মুহূর্তে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে (স্টিলের বক্স) ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো, ভোটকক্ষে প্রার্থীদের এজেন্ট না রাখাসহ বেশ কিছু অভিযোগের কারণে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য প্রায় সব প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্যানেল ও স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন ২১ জন শিক্ষার্থী। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন।
ছাত্রলীগ থেকে ভিপি পদে রেজওয়ানুল হক ও জিএস পদে গোলাম রাব্বানী, ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে মোস্তাফিজুর রহমান ও জিএস পদে আনিসুর রহমান খন্দকার, প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য থেকে ভিপি পদে লিটন নন্দী, জিএস পদে ফয়সাল মাহমুদ, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি পদে নুরুল হক ও জিএস পদে রাশেদ খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ডাকসুর মেয়াদ এক বছর হলেও সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর কখনো কখনো নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া এলেও বাস্তবে তা হয়নি। অবশেষে মামলা-মোকদ্দমা ও আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ এই নির্বাচন করতে যাচ্ছে।
রোকেয়া হলে ছাত্রীদের ভিড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১১ মার্চ।
নির্বাচনে প্রায় সব ছাত্রসংগঠন অংশ নিচ্ছে। ডাকসুতে ১৩টি প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করছে বিভিন্ন সংগঠন। এগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, কোটা আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মুক্তিজোট, জাতীয় ছাত্রসমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। এর বাইরে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচন করছেন।
ডাকসুতে মোট ২৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচন করছেন মোট ২২৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে লড়ছেন ২১ জন, জিএস পদে ১৪ ও এজিএস পদে ১৩ জন। এ ছাড়া একেকটি আবাসিক হলে ১৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই হিসাবে ১৮টি আবাসিক হলে ২৩৪টি পদে নির্বাচন হবে। এগুলোতে মোট প্রার্থী ৫০৯ জন। মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ছাত্রী এবং হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ভোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক বিবরণী অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৫৪ হাজার ৬৯৪ জন। এর মধ্যে আবাসিক ২২ হাজার ৬৬৬ শিক্ষার্থী। এর সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী হলে থাকেন।
তবে এখনো বড় একটি অংশ হলের বাইরে থাকে। আর মোট ভোটের মধ্যে ছাত্রী ১৬ হাজার ৩১২ জন। ছাত্রীদের হলে এবং যাঁরা বাইরে থাকেন, তাঁদের ওপর ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই দুই ধরনের শিক্ষার্থীই জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন।
বাংলা৭১নিউজ/একে