শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

পাবনায় ৯ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ

পাবনা প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

পাবনার চাষিরা পেঁয়াজ চাষে এখন মহাব্যস্ত। গত মৌসুমের শেষ দিকে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবারে হালি পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। যদিও জ্বালানি তেল, সার ও মজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তারপরও পেঁয়াজ লাগানো চলছে উৎসবের আমেজে। গতবারের তুলনায় এবার জেলায় ৯ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। চাষিরা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানি না হলে তারা এবারও লাভের মুখ দেখবেন। তবে চাষ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বেশি হবে। এতে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। আমদানি হলেও তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

গত মৌসুমের শেষ দিকে হালি পেঁয়াজে এবং এবার কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় চাষিরা হালি বা চারা পেঁয়াজ বেশি করেছেন। যারা গতবার পেঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন; তারাও এবার লাভের আশায় পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। কৃষি শ্রমিকরা সূর্যোদয়ের আগেই মাঠে হাজির হচ্ছেন। সাত-সকালেই শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর গ্রামের সড়ক কিংবা মেঠোপথ। সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যার আগে। কৃষি শ্রমিকরা ভালো মজুরিও পাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫-২৬ লাখ মেট্রিক টন। পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ। পাবনা জেলার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় পৌনে ৫ লাখ টন। সে হিসেবে সারাদেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হয় পাবনার এ দুটি উপজেলা থেকে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, জেলার চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করেন। একটি কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও অন্যটি চারা (হালি) পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ও হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। মূলকাটা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ ডিসেম্বর মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে ওঠে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার বিল গ্যারকাপাড়, বিল গাজনাপাড়, কুমিরগাড়ী, বামনডাঙ্গা, বামনদি, ইসলামপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় এলাহি কাণ্ড। এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ পেঁয়াজের মাঠে। বাড়ির নারীরাও কাজে সহায়তা করছেন। পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এ সময় কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। সূর্য ওঠার আগেই মাঠে হাজির হওয়া শ্রমিকরা জানান, তারা প্রতিদিন পেঁয়াজ লাগিয়ে ৭০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। পাশের গ্রাম আবার কেউ দূরের গ্রাম থেকে পেঁয়াজ লাগাতে আসছেন।

দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট সাঁথিয়ার বনগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ কন্দ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৭০০-২৮০০ টাকা দরে। চাষিরা জানান, আগামী ৩ মাসের মধ্যে নতুন হালি পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করবে। সরকারি আমাদনি শুরু করলে আরও দাম কমার আশঙ্কা আছে। আমদানি করলে চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন আর লাভবান হবেন মধ্যসত্ত্বভোগীরা।

সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি আফতাব উদ্দিন, কুমিরগাড়ী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আরশেদ খাঁন, কানু খাঁন জানান, জমি চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন; তাদের বিঘাপ্রতি বাৎসরিক ২০-২৫ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দিতে হয়। এজন্য তাদের খরচ হয় আরও বেশি। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন।

পেঁয়াজ চাষ প্রধান এলাকা সাঁথিয়ার বিল গ্যারকাপাড়ের চাষি ইয়াজ উদ্দিন খাঁন জানান, এক বিঘায় পেঁয়াজের গড় ফলন হয় ৪০-৫০ মণ। সে হিসেবে ১৫০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বেচলে চাষির উৎপাদন খরচ ওঠে মাত্র। এবার চাষ বেশি হয়েছে। তাই উৎপাদনও বাড়বে। এতে মৌসুমে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

সাঁথিয়ার পদ্মবিলা গ্রামের চাষি রতন আলী জানান, তারা অন্যের জমি বাৎসরিক লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষ করে কোনো বছর লাভ আবার কোনো বছর ক্ষতি হয়। ক্ষতি হলে বছরে অন্য দুটি ফসল চাষ করে সে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করেন তারা।

বাংলাদেশ ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পাবনা জেলার চাষি শাহজাহান আলী বাদশা জানান, চাষিদের লাভবান করতে হলে মৌসুমের সময় ভালো দাম নিশ্চিত করা দরকার। আবার ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারের দায়িত্বশীল বিভাগগুলোর সুষম বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে উৎপাদনও বাড়ছে। উন্নত জাতও উদ্ভাবিত হয়েছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার উজ্জীবিত। এজন্য জেলায় এবার গত বছরের চেয়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হবে এবং চাষিরা এ বছরও লাভবান হবেন।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com