রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ০২:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

পাট চাষিদের হাহাকার, দেখার কেউ নেই

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

এ বছর পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ গাইবান্ধার পাট চাষীরা। জেলায় চলতি বছরে বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের ফলন যেমন কম হয়েছে, তেমন বেড়েছে উৎপাদন খরচও। বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় চাষীদের। এসবের পরে পাট বিক্রি করতে গিয়ে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায়, সোনালি আঁশ নিয়ে হতাশায় কৃষক। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা এবং সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন চাষিরা। 

গাইবান্ধার একমাত্র পাটের হাট কামারজানি বন্দর। সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবারে এই হাট বসে। সেখানে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের পাটচাষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাট কেনা-বেচা করেন। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের এক পাশে পাট নিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। সত্তর ছুঁই ছুঁই ওই ব্যক্তির নাম আব্দুল সাত্তার।

মোল্লারচর থেকে পাট নিয়ে আসছেন এই বর্গাচাষি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বিঘা জমিতে হাল, বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে পাট চাষে খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। আর পাট হয়েছে ৯ মণ। বাজার অনুযায়ী এর দাম এখন ১৮ হাজার টাকা। আমার লোকসান হলো চার হাজার টাকা। এই টাকা আমি কোথা থেকে পূরণ করবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা চরের মানুষ। চরে এ মৌসুমে পাট ছাড়া কোনো আবাদ হয় না, আর সেই পাট করে আমরা উল্টো লোকসান গুনছি। তাহলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো কীভাবে? পাট চাষ করে যে ক্ষতি হলো এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

হাটে পাট বিক্রি করতে আসা আরও কয়েকজন পাট চাষির সঙ্গে কথা হলো। তাদের সবার অভিজ্ঞতা একই। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। তাদের দাবি, কৃষক বাঁচাতে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের মনিটরিং করা উচিত। যাতে সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট ক্রয় করে।

কামারজানী হাটের পাট ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, নানা কারণে এ বছর বিদেশে পাট রপ্তানি হচ্ছে না। ফলে পাটের বড় পাইকাররা হাট থেকে এখনও পাট কেনা শুরু করেননি। বড় পাইকাররা হাটে আসছেন না তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাট কিনে গুদামজাত করে রাখছেন। তবে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা পাট তারা জুটমিলে বিক্রি করতে পারবেন কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

পাটের হাট ছাড়াও সরেজমিনে, গাইবান্ধা সদরের কামারজানি, দারিয়াপুর এবং ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাটচাষিদের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় চাষিরা জানান, এ বছর খরার কারণে খালবিলে পানি না থাকায় তারা সময়মতো পাট জাগ দিতে পারেননি। কোনো কোনো এলাকায় সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে করে বাড়তি খরচ হয়েছে তাদের।

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের পাটচাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, আমার ৪২ শতাংশ জমি থেকে পাট ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে পাট বিক্রি করেছি ১৮ হাজার টাকা। এ বছর পাটচাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আমি তো সাধারণ কৃষক। এই ৪ হাজার আমি কোথায় পাব। এ অবস্থায় পাট চাষের আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেলেছি।

একই এলাকার পাটচাষি মোন্নাফ মিয়া বলেন, দফায় দফায় পাট চাষে খরচ করেছি। পাট লাগানো থেকে শুরু করে পাট কাটা পর্যন্ত ৪০ শতাংশ জমিতে নিজের পরিশ্রম বাদে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। পাটের যে দাম তাতে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। এইভাবে চলতে থাকলে এক সময় পাট চাষ করা বন্ধ করে দিতে হবে।

উন্নয়ন সংগঠক সাদ্দাম হোসেন জানান, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পাট কেনা হচ্ছে না। ফলে লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়া-পাইকারেরা। হাটে-হাটে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কেনার আহ্বান করেন তিনি। অন্যথায় কৃষকরা পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, এ বছর কৃষক পাটের ভালো ফলন পেলেও বাজার দর নিয়ে হতাশায় আছেন। উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলে অনেক কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ফলে পাট চাষ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে এ বছর পাট চাষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হবে। পরে তাদের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হবে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার প্রায় ১৫ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে পাটের চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৮২ হেক্টর কম।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com