বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

সৎ সাংবাদিকতার একাল-সেকাল

হাসান শান্তনু
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১
  • ৮০৩ বার পড়া হয়েছে

সারাজীবন সাংবাদিকতা করে প্রয়াত ফয়েজ আহমদের ঢাকায় মাথা গোঁজার কোনো জায়গা ছিলো না। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাঁকে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ঢাকার ধানমন্ডির একটা বাড়িতে অনেকটাই আশ্রিত হিসেবে থাকতে হয়। পুরো জীবনের সাংবাদিকতা দিয়ে ঢাকায় জমি, ফ্ল্যাট কেনা তো দূরের কথা, একটা কক্ষ পর্যন্ত কিনতে পারেননি সাংবাদিক, বামনেতা নির্মল সেন। শেষ বয়সে তাঁকে ঢাকা ছেড়ে গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়। সৎ সাংবাদিকতায় অনন্য বাতিঘর আতাউস সামাদ প্রায় ছয় দশকের দীর্ঘ সাংবাদিকতা দিয়ে ঢাকায় সামান্য জমি কিনতে পারেননি। তাঁর বাবার রেখে যাওয়া ঢাকার পুরনো পল্টনের বাড়ি বিক্রি করে তাঁকে একটা ফ্ল্যাটে শেষ নি:শ্বাসের আগের দিনগুলো কাটাতে হয়েছে।

আতাউস সামাদ, ফয়েজ আহমদ, নির্মল সেনদের সমকালের এমন সাংবাদিকও আছেন, যাঁরা এ জগতে পা রেখে ক্রমেই নিজের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে বেশ দক্ষতা, মেধার পরিচয়’ রেখে গেছেন! কয়েক বছর আগে প্রয়াত প্রবীণ এক সাংবাদিক, যাঁর সম্পাদনায় কথিত একটা দৈনিক পত্রিকা বের হতো; পাঠকের হাতে নয়, শুধু ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু এলাকার দেয়ালে শোভা পেতো। ওই পত্রিকার নাম ভাঙিয়ে তিনি প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ি অনেক কিছুই কামিয়ে ছিলেন। হিকি, বা কাঙাল হরিনাথের সময় সেই কবেই সাংবাদিকতা থেকে হারিয়ে গেছে! সাবেক পাকিস্তান আমল থেকেই এ দেশে অসৎ সাংবাদিকতার ভুরি ভুরি নজির আছে।

মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশের তরুণরা সাংবাদিকতায় আসতেন নেশা থেকে। মাসের পর মাস ‘সামান্য টাকাকড়ির বেতন’ না পেয়েও তাঁরা পেশায় থেকেছেন। তাঁরা জীবনবাজি রেখে, নিজের নাম গোপন করে সত্য প্রকাশ করতেন। তাঁদের কালেই এমন কতিপয় সাংবাদিকও ছিলেন, যারা পাকিস্তানি শাসকদের দালালি করে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতেন, এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াতেন। নিজের নাম প্রকাশ করে তারা সত্য গোপন করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা, মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করে পাকসেনাদদের নিরাপত্তায় ঢাকা থেকে কথিত পত্রিকা প্রকাশ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর সদ্য স্বাধীন দেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি। এমন সঙ্কটকালেও একশ্রেণির মালিক, সাংবাদিক মিলে পত্রিকার নামে সরকারি কাগজ নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিতেন। তারা ওই কাগজে পত্রিকা ছাপাতেন না। আবার ওই সময়েই দৈনন্দিন জীবনের টানাপোড়েনের কাছে পরাজিত হয়ে সাংবাদিকতা ছেড়ে একজন ঢাকায় ফলের ব্যবসা শুরু করেন। সম্ভবত এখনো মিরপুর এলাকায় তাঁর ফলের দোকান আছে। যা নি:সন্দেহে তাঁর সততার দৃষ্টান্ত। অথচ তিনি যখন পেশা বদল করেন, তখন তাঁর কালের; বা বয়সে, পেশায় জ্যেষ্ঠ কয়েকজন ছিলেন, যাদের কোনো পত্রিকায় চাকরি না থাকলেও দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলতেন ‘সাংবাদিক’ হিসেবে।

স্বৈরাচারী এরশাদের দেয়া লোভনীয় কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দেননি তখন বিবিসিতে কর্মরত আতাউস সামাদ, সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান। এরশাদের সরকার আতাউস সামাদকে গ্রেপ্তার করলে, শফিক রেহমানকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দিলেও তাঁরা সততার নীতিতে অটল ছিলেন। তাঁদের সমসাময়িক কোনো কোনো সাংবাদিক এরশাদ সরকারের কাছ থেকে কীভাবে, কী কী সুবিধা নিয়েছেন, সেসব কাহিনি গণমাধ্যমপাড়ার অনেকের মুখস্থ।

এ দেশে পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখে যে কয়েকজন পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিভুরঞ্জন সরকার। সাপ্তাহিক যায়যাদিনে তারিক ইব্রাহিম ছদ্মনামে তাঁর কলাম ব্যাপক পাঠকনন্দিত হয়। সাপ্তাহিক চলতিপত্র, মৃদুভাষণ, দৈনিক মাতৃভূমির সম্পাদক বিভুরঞ্জনের ঢাকায় এক টুকরো জমি নেই, ফ্ল্যাট নেই। তিনি এখনো ভাড়া বাসায় থাকেন। মিজানুর রহমান খানের মতো প্রাজ্ঞ সাংবাদিক শত বছর পরও এ বাংলায় একজন করে জন্ম নেন কী না, এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরো কতো বছর অপেক্ষা করতে হয়, তা কারো জানা নেই। সাংবাদিকতায় তাঁর সততাও প্রমাণিত।

‘আগে সাংবাদিকরা সৎ ছিলেন, এখন নেই’- এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য যথারীতি অজ্ঞতা। গত কয়েকদিন ধরে ‘সাংবাদিকতায় সততা’র বিষয়ে আলোচনার সঙ্গে ‘আজকালের সাংবাদিকতাকে’ যেভাবে ঢালাও দোষারোপ করা হচ্ছে, সেগুলো নি:সন্দেহে মতলববাজ কোনো রাজনৈতিক মগজের চিন্তা। ভালো-মন্দ বৈশিষ্ট্যের মানুষ সবকালের সব পেশাতেই থাকেন। এ দেশে এখনো অসংখ্য প্রবীণ, জ্যেষ্ঠ, তরুণ সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী আছেন, যাঁরা ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনে নিরেট সৎ। পেশাগত ক্ষেত্রে সত্য প্রকাশে আপোষহীন। তাঁরা কর্মরত আছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সবক্ষেত্রে জাতিগত চরিত্রে নৈতিকতার মান অনেক নিচে নেমেছে, এর ধাক্কা সাংবাদিকতায়ও এসে লেগেছে। সে কারণে এ সময়ের গোটা সাংবাদিকতা নষ্ট হয়ে গেছে বলে, বা সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ একেবারেই অযৌক্তিক।

কৃতজ্ঞতা: লেখাটি সাংবাদিক Hasan Shantonu এর ফেইসবুক পেইজ থেকে সংগৃৃহিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com