গ্রামীণ রাস্তার দুই পাশে সারি সারি শাকসবজির মাচা। মাচাগুলো ভরে গেছে সবজি গাছের সবুজ লতাপাতা, ফুল ও সবজিতে। এতে কোনটিতে ফুল এসেছে, আবার কোনটিতে ফল ধরেছে। খাওয়ারও উপযোগী হয়েছে কোনো কোনো সবজি। আর খাবার উপযোগী মাচাগুলো থেকে সবজি সংগ্রহ করছেন গ্রামের কিষান-কিষানি। সে সঙ্গে চলছে সবজি গাছের নানা রকম পরিচর্যাও। আর এ দৃশ্য দেখা যায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর ব্লকের পাখাতিপাড়া এলাকায়।
দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গ্রামীণ রাস্তার দুই পাশে পতিত জায়গায় সবজি ও ফলদ গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে। উপজেলার ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নে কামারপুকুর ব্লকের গ্রামীণ সড়কের উভয় পাশে ব্যাপক আকারে নানা রকম সবজির চাষাবাদ ও ফলদ গাছের চারা রোপণ করা হয়। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের কামারপুকুর বাজার থেকে পাখাতিপাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে লাগনো এ সব সবজির মধ্যে রয়েছে শিম, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চুন কুমড়া, ঝিঙ্গা, শসা, শজনে প্রভূতি।
পাশাপাশি লাগানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের আম, লিচুসহ নানা ফলজ গাছের চারাও। অবশ্য কিষান-কিষানিদের মাঝে এসব সবজির বীজ ও ফলদ গাছের চারা সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে বিতরণ করা হয়েছে।
মূলত রাস্তার পাশে পতিত জমিতে এলাকার সবজি চাষাবাদ ও ফলের গাছে চারা লাগাতে এলাকার কিষান-কিষানিদের উদ্ধুদ্ধ করেন সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামান আশা।
তিনিই সার্বক্ষণিক এলাকায় ঘুরে ঘুরে কিষান-কিষানিদের পাশে থেকে সব রকম সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাখাতিপাড়া যাওয়ার গ্রামীণ রাস্তায় রোপণকৃত বারি- ৪ ও হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আমের চারা গাছের পরিচর্যা করছেন এলাকার কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, আগে মূলত রাস্তার দুই পাশের জায়গায় পতিত অবস্থা থাকত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আমাদের রাস্তার দুই পাশের পতিত জায়গায় শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলে চারা লাগাতে উদ্ধুদ্ধ করেন। শুধু তাই নয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে আমাদের শাকসবজির বীজ ও উন্নত জাতের ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে।
একই দিন পাখাতিপাড়ার রাস্তার ধারের সবজির মাচা থেকে সবজি সংগ্রহ করছিলেন শাফিয়া বেগম নামে এক নারী।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ের অতিবৃষ্টিতে জমিতে লাগানো অনেক শাকসবজির ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে বাজারে শাকসবজি তুলনামূলক কম। তাই বাজারে চড়া দামে নানা রকম শাকসবজি বেচাবিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের গ্রামীণ সড়কে লাগানো সবজি বৃষ্টির কারণে কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাই আমরা রাস্তার দুই ধারে লাগানো সবজি দিয়ে বর্তমান সময়ে পরিবারের তরকারির দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারছি। ফলে আর আমাদের বাজার থেকে বেশি দামে শাকসবজি কিনতে হচ্ছে না। এতে আমাদের সংসারে শাকসবজি খরচ অনেকটাই সাশ্রয় হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কিষান-কিষানিদের রাস্তার পাশের পতিত জমিতে শাকসবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। তারাও আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু পরিমাণ রাস্তার দুই পাশে সবজি লাগিয়ে তারা ভালো ফলন পেয়েছে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারব আশা করি।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহিনা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকে। তাই তারই নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তার দুই পাশে পতিত জায়গায় সবজি চাষাবাদের জন্য কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন রকম শাকসবজি বীজ এবং উন্নতজাতের ফলদ গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে পতিত জায়গায় লাগিয়ে কৃষকদের সবজি বাগান থেকে আশানুরূপ ফলও পাচ্ছেন ইতোমধ্যে। এতে কৃষকরা নিজের সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বেচাবিক্রিও করতে পারছেন বরে জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এবি