মাগুরা সদর উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের মাটি ও কৃষিপণ্যের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত হারে সিসার উপস্থিতি পাওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য খাদ্য তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
প্রাণঘাতী সিসার বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় ‘অজানা’ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৯টি গবাদিপশু মারা যায়। এ নিয়ে শুরু তোলপাড়, কোনো কারণ ছাড়া গবাদিপশু মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা। পরে চলতি মাসের শুরুতে ওই এলাকায় একটি অবৈধ সিসার মণ্ড তৈরির কারখানার সন্ধান পায় প্রশাসন।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বারাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনঅবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে জানানো হয়, মাগুরা সদরের বগিয়া ইউনিয়নের বারাশিয়া গ্রামের উত্তর পাড়ার মাঠের মধ্যে ইটভাটার পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠে একটি সিসার মণ্ড তৈরির কারখানা। সেখানে পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা গলিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। এতে ওই এলাকার বায়ুমণ্ডলে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯টি গবাদিপশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসীর মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানানো হয়, বারাশিয়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় একের পর এক গবাদিপশু মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। আশপাশের মাটি, ধান, গম, ঘাসসহ ১১টি বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষার পর ওই এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত হারে সিসার উপস্থিতি মিলেছে যা প্রাণহানিকর।
নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, সুস্থ ধানগাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য সিসার মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ২ পিপিএম সহনীয় হলেও বারাশিয়া গ্রামের নমুনা পরীক্ষায় ৮ দশমিক শূন্য ৫ পিপিএম থেকে ১৬৬ দশমিক ৪১ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া যায়। একইভাবে ধানগাছের খড়ে পাওয়া যায় শূন্য দশমিক ৭৮ পিপিএম থেকে ২৬ দশমিক ৪৬ পিপিএম। ঘাসে পাওয়া যায় ৩৬ দশমিক ৫২ পিপিএম থেকে ২০২২ দশমিক ৪৭ পিপিএম। ওই গ্রামের মাটি পরীক্ষায় ৩৬ দশমিক ৫২ পিপিএম থেকে ৫৬ দশমিক ৬৮ পিপিএম পর্যন্ত সিসার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। অথচ এসব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ২ পিপিএম।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সিসার কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ায় আপাতত ক্ষতিকর সিসা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমেছে। তবে সেখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় এখনো ক্ষতিকর দ্রব্য আছে সেগুলো নিরাপদে অপসারণ করা না গেলে বৃষ্টিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গত দুই ডিসেম্বর কারখানাটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান।
কারখানাটি সিলগালা করে স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় দেওয়া হয়। সেখানে জব্দ করা মালামাল ক্ষতিকর রাসায়নিক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা যায়নি। পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে নিরাপদে সেগুলো সরানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এমএন