বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দিনাজপুরের সুমন মাহবুব জীবন ও জীবিকার তাগিদে যান্ত্রিক শহর ঢাকায় পাড়ি জমান ২০১২ সালে। স্বল্প বেতনে কর্মজীবন শুরু করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বাবা না থাকায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে মা ও দুই ভাই-বোনের দায়িত্ব তুলে নিতে হয় তার নিজ কাঁধে।
এরপর একে একে চলে গেছে সাতটি বছর। তিনটি প্রতিষ্ঠান বদলেছেন সুমন। এখন মাস শেষে মোটামুটি ভালো বেতন পান। ছোট ভাই প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে। আর বোন পড়ছেন কলেজে। ভালো আছেন মাও। এরপরও মনের মধ্যে চাপা-দুঃখ সুমনের।
যে মা, ভাই-বোনের জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে সঙ্গে রাখতে পারছেন না। কাজের চাপে বাড়িতেও খুব একটা যাওয়া হয় না। বছরের দুই ঈদসহ মাঝে মধ্যে দু-একবার মা, ভাই-বোনদের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ পান। এ নিয়ে মা, ভাই-বোনের অভিযোগের শেষ নেই।
ভাই-বোনের মুখ থেকে ‘তুমি পাষণ্ড’ এমন কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য পেতে তার মনও যে সারাক্ষণ কাঁদে-এ কথাটি কখনো কাউকে বুঝতে দেননি। কাজের দোহায় দিয়ে মা, ভাই-বোনকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছেন।
দীর্ঘদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর আবারো মা, ভাই-বোনের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে সুমনকে। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে অনেক কষ্ট করে জোগাড় করেছেন ট্রেনের টিকিট। ট্রেন ধরতে নির্ধারিত সময়ের আগেই শনিবার সকালে ছুটে আসেন বিমানবন্দর ট্রেন স্টেশনে। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় । কর্মজীবন ও পরিবারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘টাকার জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে এই যান্ত্রিক শহরে পড়ে আছি। যান্ত্রিকতার মধ্যে থেকে আমাদের মনটাও যান্ত্রিক হয়ে গেছে। প্রথম যখন ঢাকায় আসি মা, ভাই-বোনদের ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো। আস্তে আস্তে এখন সবকিছু মানিয়ে নিয়েছি। কষ্টগুলো নিজের মধ্যে চেপে রেখে ভালো থাকার চেষ্টা করি। মা, ভাই-বোনদের ভালো রাখতে পেরেছি এতেই আমি খুশি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। বাড়িতে মা, ভাই-বোন সবাই আমার পথ চেয়ে আছে। বাড়িতে যাব-এই আনন্দে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। সাহরি খেয়ে বালিশে মাথা রেখেছি। কিন্তু ঘুমাতে পারিনি। সারাক্ষণ শুধু ছটফট করেছি। কখন ট্রেনে উঠব? কখন বাড়ি পৌঁছাব-এই চিন্তায়।’
শুধু সুমন মাহবুব নয়, পরিবার ছেড়ে জীবিকার তাগিদে যারা ঢাকা শহরে থিতু হয়েছেন তাদের প্রায় সকলের জীবনের বাস্তব চিত্র এটি। কাজের চাপে অনেকটা যন্ত্রে পরিণত হওয়া ঢাকাবাসীর একটি বড় অংশ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে ফেরেন। আর যেদিন ঢাকা ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন, তার আগের রাত নির্ঘুম কাটান অনেকেই।
উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খুলনার গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, বন্ধু সবাই আছে। আমি জীবিকার তাগিদে এই ঢাকা শহরে পড়ে আছি। সারাক্ষণ গ্রামের বাড়ির জন্য মন কাঁদে। কিন্তু কিছু করার নেই। নীরবে সবকিছু মেনে নিয়ে ভালো থাকার আশায় যান্ত্রিক শহরে পড়ে আছি।’
শহিদুল বলেন, ‘বাড়িতে যাওয়ার জন্য সুন্দরবন ট্রেনের টিকিট কেটেছি। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে এখান থেকে ট্রেন ছাড়ার কথা। ৬টার আগেই স্টেশনে চলে এসেছি। কিন্তু স্টেশনে এসে শুনি ট্রেন আসতে লেট হবে। সাড়ে ৮টা বেজে গেছে, কিন্তু এখনো ট্রেন আসেনি। কয়টায় আসবে বুঝতে পারছি না। ট্রেনে উঠে বাড়িতে না যাওয়া পর্যন্ত মনে শান্তি লাগছে না।’
বাংলা৭১নিউজ/আইএম