মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৪২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

পাউবো’র কাছে প্রত্যাশা এবং নদখোলা ব্রিজ ও একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৪১১ বার পড়া হয়েছে
ভাঙ্গনের কবলে মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়ার বাড়ী এবং একটু দূরেই ঝুঁকির মুখে নদখোলা ব্রিজ।

বাংলা৭১নিউজ রিপোর্ট: টাঙ্গাইল বাংলাদেশের অন্যতম একটি জেলা। বারটি উপজেলা নিয়ে এই জেলার সীমানা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি সব মিলিয়ে এই জেলার একটি স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট রয়েছে। এখানকার তাঁত শিল্প, বঙ্গবন্ধু সেতু, ঐতিহাসিক অসংখ্য স্থাপনা যেমন এই জেলাকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে; তেমনি কৃষি খাতে এই জেলার অবদান জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখছে। এই জেলার একদিকে রয়েছে বনাঞ্চল; অন্যদিকে যমুনা, ধলেশ্বরী, বংশাই,সাপাই, ঝিনাই, প্রকাশ ফটিকজানী, লাঙ্গুনিয়া, পুংলি ও লৌহজং নদী।

এখানকার সবগুলো উপজেলাই নদী পরিবেষ্টিত হওয়ায় বছর জুড়েই অত্র এলাকার মানুষগুলো নদীর সাথে সংগ্রাম করেই টিকে থাকে। সেকারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর কর্মকান্ডও এখানে অনেক বেশি। টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমি এবং বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষায় পাউবো এখানে বছর জুড়েই কাজ করে। তবে টাঙ্গাইলে পাউবো’র আলোচিত প্রকল্পগুলোর অন্যতম একটি ছিল ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম)’ প্রকল্প।

যার লক্ষ্য ছিল ২২৬ কিলোমিটার নৌপথ খনন করে যমুনা থেকে পানি এনে দূষণ-দখলে মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো। এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও প্রকল্প কাজ এগোয়নি। ২০০৮ সালে এর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হয়। উচ্চাভিলাসী এই পরিকল্পনার পেছনে কয়েক’শ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্ত সুফল আসেনি। এই ব্যর্থতার বড় একটি কারণ সঠিক সময়ে চাহিদা মত অর্থের যোগান দিতে না পারা।

তবে এমন উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনায় স্থবিরতা দেখা দিলেও টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার পুংলি নদীটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেই আলোচিত। কারণ, যমুনার উৎস মুখ নতুন ধলেশ্বরী খনন করে এই পুংলী নদীর মধ্যে দিয়েই বুড়িগঙ্গায় পানি আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এলক্ষ্যে একাধিকবার পুংলি নদী খনন করা হয়েছে। সেজন্যই বারবার এই নদীটির নাম আলোচনায় এসেছে।

পুংলি নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় নদখোলা এলাকায় আপদকালীন ১৪০ মিটার কাজের অংশ বিশেষ।

মূলত শুস্ক মৌসুমে পুংলি নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলেও, বর্ষায় একেবারে উল্টো চিত্র। তীব্র পানির স্রোত এবং দু’কূল উপচিয়ে উঠা ঢেউয়ে এখানকার বাড়ী-ঘর, স্থাপনা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এই ভাঙ্গনরোধে পাউবো পুংলি নদীর উভয় তীরে জরুরি কাজ সহ স্থায়ী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্ত বর্ষায় পুংলি এতটাই খরস্রোতা হয় যে, একে ঠেকিয়ে রাখা অনেক কঠিন হয়ে যায়। এখানকার ভাঙ্গনকবলিত এলাকার একটি হচ্ছে- বাসাইল উপজেলার কাশিলি ইউনিয়ন পরিষদের নদখোলা গ্রাম। এবারের বন্যা অনেকটা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এবং পানির বেগ অনেক বেশি থাকায় ভাঙ্গনটাও অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি।

ভাঙ্গনের কারণে বাসাইলের নদখোলা ব্রিজটিও হুমকির মুখে রয়েছে। তদুপরি পুংলি নদীর দু’পারের মানুষগুলোর কষ্টের যেন শেষ নেই। পাউবো সেখানে জরুরিভিত্তিকে ভাঙ্গনরোধে জিওব্যাগ ফেলে প্রায় ১৫০ মিটার কাজ করেছে। এলাকাবাসীর দাবি জিও ব্যাগ ফেলে আরও অন্তত ১০০ মিটার কাজ করা হোক। তবে স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ জানায়, এলাকাবাসীর সুবিধার্থে তারা ভাঙ্গনপ্রতিরোধে অস্থায়ীভাবে আরও ৫০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলবে। মূলত এই কাজটি করা হবে- সেখানকার একজন মুক্তিযোদ্ধার বসত বাড়ী নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার স্বার্থে। এলাকাবাসী পাউবো’র এই উদ্যোগকে একটি মহৎ পরিকল্পনা হিসাবেই দেখছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাসাইলের নদখোলা এলাকায় পুংলি নদীর উভয় তীর ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। এখানে পাউবো চলমান বন্যায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ১৫০ মিটার কাজ করেছে। কিন্ত যেভাবে নদী ভাঙ্গছে- এতে করে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে মাত্র ৫শ’ মিটার দূরে অবস্থিত নদখোলা ব্রিজটি ব্যাপক ঝুঁকির কবলে রয়েছে। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়ার বাড়ীটি জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে রক্ষা করা গেলেও এখানে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে নদী তীর রক্ষা কাজ করা না হলে আগামী বর্ষায় পুরো বাড়িটিই নদী গর্বে বিলিন হয়ে যাবে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির দাবি, তাদের বাড়িটির আশপাশে যে ভাঙ্গন রয়েছে তা প্রতিরোধ করা না হলে এই বাড়িটি রক্ষা পাবে না। এজন্য পাউবো অবশ্য আরও ৫০ মিটার আপদকালীন কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে এবং আগামী সপ্তাহেই এই কাজ শুরু হবে। এতে ১২৫ কেজি বালু ধারণক্ষমতা সম্বলিত আরও প্রায় ৫ হাজার জিও ব্যাগের প্রয়োজন হবে।

ভাঙ্গনের কবলে পরে ঝুঁকির মুখে নদখোলা ব্রিজ।

এ ব্যপারে স্থানীয় মো: ফজর মিয়া (৫৫) জানান, চলতি বন্যায় পাউবো আপদকালীন এই কাজ না করলে তাদের বাড়ীঘর এবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত। ইতোমধ্যেই তাদের অনেক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর নিজের বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ার শোক সইতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীর ৬০ শতাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাউবো আপদকালীন কাজ করে বাকিটা ঠেকিয়ে রেখেছে। তবে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির মধ্যে থেকে ভাঙ্গন আতঙ্ক কাটেনি।

এ ব্যপারে মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়ার ভাই সাবেক ইউপি মেম্বার মো: সেলিম মিয়া জানান, চোখের সামনে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে জীবনের শেষ সম্বল বসতবাড়ীটুকু নদী গর্ভে চলে যেতে দেখে মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া এখন মৃত্যু শয্যায় হাসপাতালে ভর্তি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এই বাড়ীটি এবং নদখোলা ব্রিজটি রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পাউবো কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

এ ব্যপারে পাউবো’র কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মতিন সরকার বলেন, চলমান বন্যায় পাউবো নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে অনেক কাজ করেছে। যার ফলে তার আওতাধীন এলাকাসমূহের অনেক গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা, ফসলী জমি, ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, নদখোলা ব্রিজ এবং মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়ার বাড়ীটি রক্ষার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ সেভাবেই কাজ করছে।

টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুংলী নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে আমরা আপদকালীন কাজ করেছি। শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে করে নদখোলা ব্রিজ এবং মুক্তিযোদ্ধ মজনু মিয়ার বাড়ীটি ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও এখানে ভাঙ্গনকবলিত আরও ৫০ মিটার এলাকায় আপদকালীন কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি।

উল্লেখ্য, বাসাইল উপজেলাজুড়ে রয়েছে অনেক নদী, খাল, বিল, পুকুর ও জলাশয়।  বর্ষায় এসব পানিপথ হিসাবে এবং শুষ্ক মৌসুমে এখানকার পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এই উপজেলায় মোট জলাশয়ের পরিমাণ-৪৩০ হেক্টর। এখানকার প্রধান নদী বংশী বা বংশাই, লৌহজং, পুংলি ও ঝিনাই। খালের মধ্যে রয়েছে কুচিয়ামারার খাল, নয়ার খাল, মইষাখালীর খাল, ময়থার খাল, বেংড়া খাল, খসরুখালির খাল প্রভৃতি।

তবে এসব খাল প্রায় ক্ষেত্রেই নদীর শাখা রূপে সৃষ্টি হয়ে আবার নদীতেই মিশেছে। বিলের মধ্যে বালিয়া বিল, কাউলজানী বিল, ডুবাইল বিল আকারে কিছুটা বড়। এছাড়া আরো ছোট ও মাঝারি আকারের বিল রয়েছে। যেমন- চাপড়া বিল, দেও বিল,পদ্ম বিল, চাটাই বিল, বারকাটি বিল, বার্থা বিল ইত্যাদি।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com