বাংলা৭১নিউজ,(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদতাগের পর হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এরআগে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তিনি মাদরাসার মুহতামিম পদ ছেড়ে দেন।
গত দুই দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এসময় মাদরাসায় অবস্থান করা আহমদ শফী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত হাটহাজারী খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও হেফাজত নেতাকর্মীরা কঠোর অবস্থানে ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মাদ্রাসা কার্যালয়ে রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলা মজলিসের শুরা কমিটির বৈঠকে আহমদ শফী তার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আল্লামা সালাউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা নোমান ফয়েজি, মাওলানা সোহায়েদ নোমানী, মহিবুল্লা বাবুনগরী, মুফতী নুর আহম্মদ, মাওলানা দিদার, মাওলানা কবির আহম্মদ ও মাওলানা ফোরহান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিন্ধান্ত অনুসারে আহমদ শফীকে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে। অপরদিকে মাদ্রাসার এক শিক্ষক মাওলানা নুরুল ইসলাম কক্সবাজারিকে সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আল্লামা শাহ আহমদ শফী মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নিলেও পরবর্তী মহাপরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে কোনো সিন্ধান্ত বৈঠকে হয়নি।
বৈঠক শেষে শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা সালাউদ্দীন নানুপুরী এসব সিদ্ধান্তের কথা মাইকে পাঠ করে শুনান।
এর আগে আরোপিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় একইদিন সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ হতে একটি আদেশ জারি করা হয়। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য এবং আরোপিত শর্ত যথাযথভাবে পালন না করায় এ মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণার কথা আদেশে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, কওমী মাদ্রাসা সমূহের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট কতিপয় শর্তসাপেক্ষে (স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত) কওমি মাদ্রাসা সমূহের কিতাব বিভাগের কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি আরোপিত শর্ত ভঙ্গ করায় কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মাদ্রাসাটি বন্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
এদিকে এ মাদ্রাসায় আন্দোলনকারী ছাত্ররা গতকালও বিক্ষোভ করেছেন। মাদ্রাসার ভিতরে বিভিন্ন কক্ষ ভাংচুরের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তীতে মাদ্রাসার ভিতর থেকে মাইকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদ্রাসা ফটকে অবস্থান নেয়।
হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা খ্যাত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় পাঁচ দফা দাবিতে মাদ্রাসার কয়েক হাজার ছাত্র আন্দোলন শুরু করেন গত বুধবার। ছাত্রদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওইদিন রাতে শূরা কমিটির বৈঠকে পাঁচ দফা দাবির দুই দাবি মেনে নেয়া হয়। উক্ত বৈঠকে ৫ দফার দাবির দুইটি দাবি যথাক্রমে মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার ও শিক্ষার্থীদের কোনো ধরণের হয়রানির শিকার করা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন বৈঠকে উপস্থিত শূরা সদস্যরা।
শনিবার শূরা কমিটি পুনরায় বৈঠকে মিলিত হয়ে অন্যান্য দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন মর্মে আশ্বস্ত করলে বিক্ষোভকারীরা সে রাতে আন্দোলন বন্ধ করার ঘোষনা দেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষনা দেয়া হলে বিক্ষোভকারীরা পুনরায় জড়ো হন এবং মাদ্রাসার প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মাদ্রাসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ভাংচুর করেন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা মসজিদের মাইকে মাদ্রাসার ভেতরে ভাংচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে প্রচার করেন এবং বাইরে অপেক্ষমান উৎসূক জনতাকে শান্ত থাকার আহবান জানান। বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে গতরাত ৮টায় শূরা কমিটি জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে ‘মুহতামিম’ পদ থেকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী অব্যাহতি নেন। পরে ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ায় তারা মাইকে আন্দোলন সমাপ্তির ঘোষণা দেয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইবি