শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

নামী বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্ররা যেভাবে জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিচ্ছে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০১৬
  • ২৩২ বার পড়া হয়েছে
গুলশান হামলায় অংশ নেয়া নর্থ-সাউথের ছাত্র নিবরাস ইসলাম

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় জড়িতদের পরিচয় যখন প্রথম প্রকাশ পেল, তখন তা স্তম্ভিত করেছিল বাংলাদেশকে। পাঁচ হামলাকারীর তিনজনই ঢাকার উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকার নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় ধাক্কাটি এলো কয়েকদিন পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া তিন জঙ্গির এক ভিডিও দেখে। এদের একজনের চেহারা ঢাকার টেলিভিশনের জনপ্রিয় এক অনুষ্ঠানে অনেকেই দেখেছেন। গান পাগল তরুণটি কিভাবে জঙ্গিতে পরিণত হলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন গ্রামীণ ফোনে তারই এক সাবেক সহকর্মী।

শোলাকিয়ায় হামলাকারীদের একজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। হামলার সময় নিহত এই তরুণ ছিল ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মাদ্রাসাগুলোই ইসলামি জঙ্গিদের আখড়া বলে যারা ধরে নিয়েছিলেন, তাদের জন্য আবারো একটা বড় ধাক্কা।

বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব পীস এন্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান যেমনটি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্ররাই বুঝি শুধু জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হয়। কিন্তু এখন আমরা দেখছি উল্টো চিত্র। সমাজের উঁচু স্তরের পরিবারের সন্তান বা নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যেই এ ধরনের উগ্র মতবাদের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।’

বাংলাদেশে যে ব্লগারকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালে জঙ্গিরা নতুন শক্তিতে এবং নতুন মাত্রায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে, সেই আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কয়েকজন ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র।
এরপর আরো কিছু সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাতেও এরকম নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদের যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার বিত্তবান এবং ক্ষমতাবান পরিবারের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সচেতনভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা ছিল শুরু থেকে। কিন্তু সেখানে পড়তে আসা সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণির তরুণরাই কেন ঝুঁকে পড়ছে সন্ত্রাসবাদের দিকে?

জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, এর অনেক কারণ রয়েছে। এজন্যে প্রথমত তিনি দায়ী করছেন বাংলাদেশের সমাজে বিদ্যমান অস্থিরতাকে। তিনি বলেন, ‘সমাজে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বাংলাদেশ এখন এক রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে তরুণরা কোন রোল মডেল খুঁজে পাচ্ছে না তাদের জীবনের জন্য। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে এখন মুক্তভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথও আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে আসছে।’

কিন্তু যে তরুণরা উগ্রবাদী কাজে জড়িত হওয়ার জন্য ঘর ছেড়েছে, তারা যে সমাজ-রাজনীতি নিয়ে সিরিয়াস চিন্তা-ভাবনা করতেন, সেরকমটি তাদের পরিচিতজনদের কেউ বলছেন না। দু-একজন বাদে এদের বেশিরভাগের আগের জীবনের যে আভাস তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইনে দেখা গেছে, তাকে এক ধরনের আমুদে এবং ভোগ-বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত বলেই মনে হচ্ছে।

এর ব্যাখ্যা তাহলে কি?

জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, যারা এধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় ব্যক্তিগত জীবনে তাদের কোন একটা হতাশার জায়গা আছে। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে রিক্রুটাররা।

জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলেন, জঙ্গিবাদে এদের যারা দীক্ষা দিচ্ছে, সেই রিক্রুটাররা যখন এদের হতাশার জায়গাটা চিহ্ণিত করতে পারে, তখন সেই দুর্বলতাকে তারা এক্সপ্লয়েট করতে শুরু করে এবং একটা পর্যায়ে তাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। এটা হালকা ব্যাপার নয়, খুবই টেকনিক্যাল একটা ব্যাপার।’

কিন্তু তরুণরা যে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এরকম জঙ্গিবাদের সংস্পর্শে আসছে, এরকম কোন প্রমাণ এখনো নেই। কিভাবে তাহলে এরা এরকম উগ্র মতাদর্শে জড়িয়ে পড়ছে?

তিনি বলেন, ‘এদের র্যাখডিক্যালাইজেশনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বড় ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিক যোগাযোগটা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই হচ্ছে, সেটা দেশে হোক বা বিদেশে হোক।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বসুন্ধরা ক্যামপাস

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বসুন্ধরা ক্যামপাস

গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে যতটুকু তথ্য এ পর্যন্ত জানা গেছে, তার ভিত্তিতে জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলছিলেন, ‘এরা সম্ভবত ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ স্থাপন করেছে কোন হ্যান্ডলারের সাথে। এই হ্যান্ডলারের মাধ্যমেই হয়তো তারা একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে এবং আস্তে আস্তে তারা একটা সেল গড়ে তুলেছে।’

ইসলামিক স্টেট যখন কয়েক বছর আগে ইরাক এবং সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিয়ে সেখানে তাদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, তখন ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে অনেক মুসলিম তরুণ সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ব্রিটেন থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সিরিয়ায় যাওয়া এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণদের যোগাযোগের সম্ভাবনা কতটা? জেনারেল মুনীরুজ্জামান এরকম সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

তিনি বলছিলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যাওয়া তরুণরা যে ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে, যে ধরণের নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের এই তরুণদের সম্পর্ক থাকতে পারে। একটা পিয়ার-টু-পিয়ার কমিউনিকেশনের চ্যানেলগুলো এখানে উন্মুক্ত আছে।’

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে যারা হামলা করেছিল, তাদের অনেকেই আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। একজন হামলাকারীর বাবা জানিয়েছেন, নিজের সন্তানের খোঁজ করতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, ঢাকার আরো বহু পরিবারের সন্তানেরা এভাবে পালিয়ে গেছে।

জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, এই নিখোঁজ তরুণদের হদিস খুঁজে বের করা খুবই জরুরি।

‘এদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদেরকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখা বা ‘ডি-র্যা ডিকেলাইজেশনের’ জন্যে বিভিন্ন স্তরে কার্যক্রম চালাতে হবে। এই কার্যক্রম একেকটা স্তরে একেক রকম হবে। শহরের তরুণদের জন্য একরকম, গ্রামের তরুণদের জন্য একরকম।’

কিন্তু সেরকম কোন জাতীয় উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:বিবিসি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com