সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল চুক্তিতে অগ্রগতি, খসড়া চূড়ান্ত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে যুবদলের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেশের ১০টি ইকোনমিক জোন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সাড়ে ৯ একর জমি জব্দ, ২৮ কোটির সম্পদ অবরুদ্ধ ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড গত ১৬ বছর নববর্ষে দলীয় ও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল: সারজিস বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা চায় এনবিআর দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু ২৩ এপ্রিল থেকে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ফুলবাড়ীতে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল সম্প্রীতি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী সব করতে প্রস্তুত: সেনাপ্রধান আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়লো ১০ টাকা বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

কাঠপরানের দ্রোহ: দেশবিরোধী চেতনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী উচ্চারণ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ২৬৬ বার পড়া হয়েছে

আনোয়ার কামাল : কাঠপরাণের দ্রোহ গল্পলেখক রিপনচন্দ্র মল্লিকের একটি ছোটগল্প। গল্পকার রিপনচন্দ্র মল্লিক তার এ গল্পটি শব্দগাঁথুনিতে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে গেছেন পাঠককে। গল্পে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সমসাময়িক বাস্তবতার নিরিখে তার এ গল্পের প্লট রচিত হয়েছে। শুধু শব্দের গাঁথুনিই নয়; ঘটনার বাস্তবতা গল্পে চরিত্রগুলোকে আরো বেগবান করে মূর্ত করে তুলেছে। গল্পের মধ্যে গল্পকার পাঠককে কখন যে এক চরম সত্য সন্ধানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন তা পাঠক হয়তো টেরই পায়নি। এমন করে নয়, বলতে হবে গল্প বলার কৌশলী রিপনচন্দ্র মল্লিক পাঠককে বুঝে ওঠার আগেই নিয়ে গেছেন তার মূল গল্পের জমিনে। যেখানে রোপন করেছেন সবুজ এক অরণ্য ঘেরা গ্রামীণ জনপদ, মাটি আর মানুষের সাথে মিশে থাকা সেই জনপদের সারল্য আখ্যান এর মাঝে সাংঘাতিকভাবে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প রোপিত হচ্ছে দিনের পর দিন। ‘কাঠপরানের দ্রোহ’ গল্পটিতে এসবই তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সরল মানুষের কাছে এ ছোট গল্পটি যেন ‘এন্টি বাংলাদেশবাদী চেতনার সহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক দ্রোহের উচ্চারণ।’

আউলিয়াপুর গ্রামের ছোটবেলায় বাবা হারানো প্রতিবন্ধী আলম মাকে হারায় যখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কাজেই তার জীবন সংগ্রাম তখন থেকেই শুরু। গল্প শুরু হয়েছে গ্রামের সেই সহজ সরল জীবন সংগ্রামী খোঁড়া আলম এর সংগ্রামী জীবন নিয়ে। আউলিয়াপুর গ্রাম কীভাবে দ্রুত গ্রাম থেকে যেন শহরমুখী পরিবেশে ফিরে যাচ্ছে। তারও বর্ণনা দেয়া হয়েছে গল্পে। কারণ দেশের গ্রামগুলো তার গ্রামীণ চরিত্র হারিয়ে শহরের সাথে পাল্লা দিতে চাচ্ছে। কারণ, আউলিয়াপুর গ্রামটি একটি বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও এই বাজারকে কেন্দ্র করে বাহারী নকশাময় মসজিদ গড়ে উঠেছে। আর সেখানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি গোষ্ঠী কীভাবে শকিড় গড়েে বসছে তারও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এখানে। প্রতিবন্ধী হিসাবে মাদ্রাসায় পিওনের চাকরি যোগাড় করে কোন মতে সে সংসার চালায়।

পরে তার পারিবাবিক জীবনের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলেখ্য এ গল্পের প্রধান চরিত্র। তার সামান্য আয়ের মধ্যে দুই মেয়েকেই কলেজে পড়াচ্ছেন। ভবিষ্যতে তাদের বিয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই আলম গাছ লাগায়। বউকে জানায় চিন্তার কারণ নেই। মেয়েদের বিয়ের সময় এই গাছই তাকে টাকার যোগান দেবে। গাছগুলো বড় হলে মেয়েদের বিয়ের সময় তা বিক্রি করে বিয়ের খরচ যোগান দেবে। মেয়েদের আলম স্কুল কলেজে পড়ান। তার এ স্বপ্নেই তিনি বিভোর থাকেন। প্রায় প্রতিদিন গাছের আত্তি যত্ন করেন। গাছের সাথে আলম একাকী নীরবে নিভৃতে কথা বলে। গাছ ও যেন আলমের কথায় সায় দিয়ে তর তর করে আসমান ছুঁতে চায়। গাছের সাথে আলমের একটা আত্মীক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

গল্পের পরস্পরায় দেখা যায়, আলম গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে বসে মওলানা সাহেবের লোকজনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে। আর মনে মনে নিজেই নিজের সাথে কথা বলে এই সব রাজাকারী কায় কারবারের। মাওলানার সাথে তাদের লোকজনের কথাবার্তায় আলম বিরক্ত হন, শঙ্কিতও হন। মসজিদ আর মাদ্রাসাকেন্দ্রীক গ্রামটি মৌলবাদীদের আখড়ায় পরিণত হয়। গ্রামে রাজনৈতিকভাবে মৌলবাদীদের আস্ফালন কতটা প্রকটভাবে বিরাজ করছে, তা এ গল্পে বড় হুজুরের বর্ণনায় স্থানীয় জামায়াতের আমির তার কথাবার্তায় তুলে ধরেছেন।

এদিকে বড় মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। পাত্র দুবাই থাকা ছেলে। আলম ও তার বৌ জেসমিনের মনে আনন্দ আর ধরে না। তাদের সেই গাছও বেশ বড় হয়েছে। তা বেচেইতো বিয়ের খরচ হয়ে যাবে। এমন সময় রাতের বেলা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে জামাত-শিবির গাড়ি পোড়াচ্ছে, মানুষ মারছে। এসবই সে রাতের বেলা টিভিতে দেখতে থাকে। হঠাৎ করে তার চোখে পড়ে টিভির নিচের স্ক্রলে দেখাচ্ছে ‘আউলিয়াপুর বাজারে শিবির কর্মীদের সড়ক অবরোধ, পুলিশের সাথে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া।’ সারা রাত আলম ঘুমাতে পারে না। রাতভর সে শুধুই গ-গোলের আওয়াজ শুনেছে।

সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েই আলম রাস্তায় এসে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চারপাশের থমথমে পরিবেশ। রাস্তার মাঝে মাঝে গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে। যেখানে সেখানে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। আলম দ্রুত তার ভিটায় চলে যায়। তার গাছ! তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কেউ তাকে থামাতে পারে না। আলমের কান্না কিছুতেই থামে না। তিনি শুনতে পান, রাস্তায় মৃত লাশের মতো পড়ে থাকা স্বপ্নময় গাছগুলোর পরাণ ডুকরে কেঁদে ওঠছে। আর গাছগুলোর সাথে আলম কথা বলে, ‘ওঠ। ওঠ। উঠে দাঁড়া। উঠে ওদের বিরুদ্ধে দাঁড়া।’

একথা বলে গল্পকার চোখে আঙ্গুল দিয়ে সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছেন। গাছ আমাদের বন্ধু, গাছই আমাদের জীবন জীবিকার আশ্রয়। আর সেই গাছকে অবিবেচনায় দেদারসে কেটে সাবাড় করা হয়েছে মৌলবাদীদের রুদ্র আস্ফালনে। যা অতি সাম্প্রতিক কালের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ঐতিহাসিক ফাঁসির সময়ে তাদের অনুসারীদের বাংলাদেশে যে নারকীয় সহিংসতা করে সাধারণ মানুষের যে স্বপ্ন ভঙ্গ করেছে, এই গল্পটি সেই সব বাস্তব ঘটনা এক অন্য দলিলে আবার পাঠককে সচেতনভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন গল্পকার। গল্পটি একটি সার্থক বলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। পাঠক বারবার পড়লেও অরুচি হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

আনোয়ার কামাল: কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।

[email protected]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com