চট্টগ্রামের শুঁটকির জনপ্রিয়তা সারা দেশে। আর এখন শুঁটকির মৌসুম। তাই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে চলছে শুঁটকি তৈরি। ধুম পড়েছে নানা প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদনের। প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শ্রমিকরা। আঞ্চলিক সীমা ছাড়িয়ে এসব শুঁটকি চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। শীতকালে বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়। চাহিদাও এই সময় বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা ।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এই শুঁটকি। তাই প্রতি বছর হালকা শীতে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়ে চট্টগ্রামের সাগরপাড়ে। চট্টগ্রামের শুঁটকি পল্লীগুলোতে দিনভর চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। এর মধ্যে নগরীর কর্ণফুলী নদীর উত্তর-দক্ষিণ তীরঘেঁষা বাকলিয়া, ইছানগর, ডাঙ্গারচর, কর্ণফুলী ঘাট, ফিসারি ঘাট, চাক্তাই ও রাজাখাল তীরগুলোতে বৃহৎ পরিসরে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে।
প্রতিদিন সূর্যের তাপে এসব এলাকার শতাধিক স্পটে ছোট-বড় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। নভেম্বরের শুরুতে কদর বেশি থাকে ছোট জাতের শুঁটকির। আর বড় শুঁটকির মৌসুম শুরু হবে বেশি শীতে। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় দ্রুত শুকায় শুঁটকি। এজন্য বছরের এ সময়ে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে শুরু হয় শুঁটকি তৈরির উৎসব।একটু বড় আকারের শুঁটকির জন্য বাঁশ দিয়ে ‘চাঙ’ সাজানো হয়।
আর ছোট জাতের শুঁটকি শুকাতে তৈরি করা হয় মাচাঙ। চট্টগ্রামের শুঁটকির সুখ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশজুড়ে। বছরের ১০ মাস শুঁটকি উৎপাদন হলেও নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুঁটকিপল্লীতে শুঁটকি শুকানো হচ্ছে কয়েক ধাপে। প্রথমে মাছের পেট থেকে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে একটি দল। আরেক দল পেট কাটা মাছ ধুয়ে নিচ্ছে পানিতে। কেউ সেই ধোয়া মাছ শুকাচ্ছে কেউবা হালকা শুকানো মাছে লাগাচ্ছে লবণ।
এরপর শুঁটকি শুকাতে দেয়া হয় চাঙে। প্রকারভেদে শুঁটকি শুকাতে সময় লাগে এক থেকে তিন সপ্তাহ। শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এখানে কোনও প্রকার ফরমালিন ও মেডিসিন ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। স্বাদের মতো নামেও বৈচিত্র্য আছে এখানকার শুঁটকির।এখন যেসব মাছের শুঁটকি বেশি তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে আছে ছুরি, ফাঁইস্যা, লইট্টা, লাক্ষ্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া ও ছোট-বড় মিশালি জাতের শুঁটকি। চট্টগ্রাম শুটকি উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আজগর হোসেন বলেন, প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি।
করোনাভাইরাসের কারণে টানা কয়েক মাস বিক্রি বন্ধ থাকায় এবারের শীতে বাড়তি শুঁটকি বিক্রি হওয়ার আশায় আছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে শুঁটকিপল্লী গড়ে দিলে তাদের সুবিধা হতো।শুঁটকি উৎপাদক মোহাম্মদ এনাম বলেন, কোনও প্রকার ফরমালিন ছাড়াই এখানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন হয় বলে জানান তিনি।
শুঁটকি উৎপাদনে জড়িত রকিব নামে এক শ্রমিক বলেন, চার বছর ধরে শুঁটকি শুকানোর কাজ করছেন তিনি। যা বেতন পান তা দিয়ে সংসার চলে যাচ্ছে।চাক্তাইয়ের শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. শরীফ উদ্দিন আরটিভি নিউজকে বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শুঁটকির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাই উৎপাদনের মৌসুম হওয়ায় শুঁটকির দাম কিছুটা কম।
বাংলা৭১নিউজ/এআর