বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছে কি না তা দেখার জন্য উদ্ভাবিত একটি পরীক্ষা পদ্ধতি ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অনুমোদন পেয়েছে।ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগ পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড বলেছে সুইজারল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানি রোশ এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা পদ্ধতি তৈরি করেছে এবং তারা বলছে এটি “খুবই ইতিবাচক অগ্রগতি”।
এতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হবে কারো শরীরে ইতোমধ্যেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না যার ফলে তার এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে।
এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বলছিলেন এই পরীক্ষা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য নয়।
শোনা যাচ্ছিল ব্রিটেনের সরকার ইতোমধ্যে এক কোটি ৬০ লক্ষ পাউন্ড খরচ করে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সরঞ্জাম কিনেছে যা শেষ পর্যন্ত অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়।
এখন বিভিন্ন সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে রোশের উদ্ভাবিত পরীক্ষা পদ্ধতি এ যাবৎ প্রথম সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পরীক্ষা পদ্ধতি।
মানুষের শরীরের যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে সেটা অ্যান্টিবডি তৈরি করে যে অ্যান্টিবডি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিজেকে তৈরি রাখে।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম এমন অ্যান্টিবডি শরীরে পাওয়ার মানে হল ওই ব্যক্তি ইতোমধ্যেই এই জীবাণুতে সংক্রমিত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তার লড়তে সেটা সক্ষম কি না সেটা প্রমাণিত নয়।
ব্রিটেনের সরকারি গবেষণাগারে গত সপ্তাহে রোশের এই পরীক্ষা পদ্ধতির মান ও কার্যকারিতা যাচাই করা হয় বলে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড জানিয়েছে। তাদের মত হল এই পদ্ধতি “খুবই সুনির্দিষ্ট”।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন এটা প্রথমে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার স্বাস্থ্যকর্মী ও সামাজিক কেয়ার ব্যবস্থার কর্মীদের ব্যবহারের জন্য দেয়া হবে।
যুক্তরাজ্যের করোনাভাইরাস টেস্টিং কর্মসূচির জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক জন নিউটন বলেছেন, “এটা খুবই ইতিবাচক অগ্রগতি কারণ সংক্রমণের পর খুবই সুনির্দিষ্টভাবে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষার সম্ভাবনা এই রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে একটা আস্থার জায়গা তৈরি করবে।”
“এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যাপারে এই পরীক্ষা একটা দিক নির্দেশনা দেবে, যদিও সেই প্রতিরোধ সক্ষমতা কতটা দৃঢ় হবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার চিকিৎসা নিয়ন্ত্রকরাও ইতোমধ্যেই রোশের এই পরীক্ষা পদ্ধতি অনুমোদন করেছে।
বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার ব্যাখ্যা করেছেন অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কত মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তা নিরূপণ করা।
তিনি বলছেন এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব এই ভাইরাস কতটা ছড়িয়েছে এবং কত সহজে তা ছড়িয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ভাইরাসের মারণক্ষমতা কতটা তীব্র।
তবে এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে লকডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত কি না তা নিয়ে বড়ধরনের বিতর্ক আছে।
কারণ মি. গ্যালাহার বলছেন, এই অ্যান্টিবডি শরীরে থাকার মানে এই নয় যে আপনার আর সংক্রমণের আশংকা নেই অথবা আপনার শরীরে থাকা এই ভাইরাস আপনার আশেপাশে আর কাউকে সংক্রমিত করবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন ইমিউনিটি থাকলেই কোন ব্যক্তির যে কাউকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি নেই সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার দুটো পদ্ধতি আছে:
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন এই পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য বলে ইউরোপ ও আমেরিকার বিজ্ঞানীদের অনুমোদন পেলেও এই পরীক্ষা এখনও এটা নিশ্চিত করছে না যে যার শরীরে অ্যান্টিবডি আছে সে আর কখনই আক্রান্ত হবে না বা কাউকে সংক্রমিত করবে না।
তবে যুক্তরাজ্যের সরকার বলছে একটা নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা পদ্ধতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের যে একটা অংশ হয়ে উঠতে পারে, সেটা অবশ্যই একটা আশার খবর।
বাংলা৭১নিউজ/খবর: বিবিসি অনলাইন