বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: যেকোনভাবে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। যারা পরিবহন বন্ধের মধ্যেও দু’দফা ঢাকায় ও তার আশপাশের জেলাগুলোতে এসে কাজে যোগ দিয়েছেল, তাদের মধ্যেই আবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পরিবহন বন্ধ যেনেও এরা বিকণ্পভাবে ছুটছে ঈদ করতে গ্রামের দিকে। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুশিশ (ডিএমপি) এর কঠোর নির্দেশনার পরও এসব মানুষগুলো গ্রামমুখি হচ্ছে। এতে করে করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাবতলী, আমিনবাজার, সাভার, চন্দ্রা, যাত্রাবাড়ী, সাইদাবাদ, মহাখালী, টঙ্গী, সর্বত্রই ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর চাপ বাড়ছে। এসব এলাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, আমিনবাজার সেতুর আগে কিছু যানবাহনের জটলা, সেগুলো ঘিরে মানুষের ভিড়। তাতেই পথ আটকে যানজট তৈরি হয়েছে। জটলায় রয়েছে বেশ কিছু প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা আর কয়েকটি পিকআপ। ভিড় করা মানুষ এসব যানবাহনে ঢাকা ছাড়তে চান। দরদাম চলছে। মহামারির স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গাদাগাদি করে যে যেভাবে পারেন, গাড়িতে উঠছেন। গাবতলী ছাড়াও একই রকম অবস্থা দেখা যায় যাত্রাবাড়ী এলাকাতেও।
গতকাল ডিএমপি’র পক্ষ থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে না পারেন- এমন নির্দে শনা জারি করা হয়। পুশিশ বলছে, তারা নির্দেশনা পেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে শুরু করেছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পাশাপাশি গণপরিবহন, নৌযান ও অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে পণ্যবাহী পরিবহন চালু ছিল। গত ২৬ এপ্রিল সরকার সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা চালু করার ঘোষণা দেয়। বাস না থাকায় কাজে যোগ দিতে তখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশা, এমনকি হেঁটেও স্রোতের মতো মানুষ ঢাকার দিকে আসে। গতকাল এই স্রোত ছিল উল্টোমুখী। কাজ না থাকায় ও ঈদের কারণে বহু মানুষ ঢাকা ছাড়েন।
গাবতলীতে দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিশৃঙ্খলভাবে যানবাহনে সওয়ার হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। সিএনজি অটোরিকশার চালক দুলাল মিয়ার মুখে মাস্ক, হাতে দস্তানা কিছুই নেই। পাঁচ যাত্রী নিয়ে তিনি চলেছেন নবাবগঞ্জের বান্দুরার দিকে। এই চালক বলেন, ‘অনেক দিন ধইর্যা বসা। পেট আর চলে না। তাই কয়েক দিন অইল বাসা থেকে বাইর অইছি।’
ওই অটোরিকশার যাত্রী আমিনউদ্দিন বলেন, তিনি কসমেটিকস ব্যবসায়ী। অনেক দিন বন্ধের পর মার্কেট খোলায় মাল কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আগে তো সংসার বাঁচুক। তারপর না নিজে বাঁচার কথা ভাবব।’
অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল চালাতেন আবদুর রহমান। সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি এখন দূরপাল্লার যাত্রী বহন করেন। গতকাল গাবতলী থেকে ধামরাইয়ে যেতে একজন তাঁকে ভাড়া করেন।
গাবতলীতে তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) থাকলেও তাতে পুলিশ দেখা যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ গতকাল বলেন, চেকপোস্টে তো পুলিশ থাকার কথা। তবে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির অধিকাংশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের সংখ্যা কমে গেছে। গতকালই দাঙ্গা দমন বিভাগ থেকে চাহিদামতো পুলিশ সদস্য পাওয়া গেছে। তাঁরা এখন থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাচৌকিতে দায়িত্ব পালন করবেন এবং পণ্যবাহী কোনো যানে মানুষ ঢাকা থেকে বের হতে কিংবা ঢুকতে দেবেন না।
গতকাল ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা পেয়ে বেলা দুইটা থেকে তৎপর হতে শুরু করে পুলিশ। দুইটার দিকে একটি পিকআপে ১০–১২ জন দিনাজপুরে যাচ্ছিলেন। এ সময় আমিনবাজার সেতুতে পুলিশ ওই পিকআপ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। যাত্রী রবিউল আলম বলেন, তিনি দিনমজুর। অনেক দিন ধরে ঢাকায় কাজ বন্ধ। চলার মতো টাকাও নেই। তাই বাড়িতে যেতে পিকআপে উঠেছিলেন। কিন্তু পুলিশ নামিয়ে দিল।
আমিনবাজার সেতুর ওপারেই সাভার থানা- পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি। সেখানেও ছোট যানগুলোতে গাদাগাদি করে থাকা মানুষকে ঠেকানোর কোনো চেষ্টা করছিল না পুলিশ। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য আবুল কালাম বলেন, কিছু যাত্রীকে অটোরিকশা থেকে নামিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে ভ্যাপসা গরমে রোজা রেখে অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে তাঁদের। এ সুযোগে কিছু যানবাহন যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী
গতকাল দুপুরে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও শনির আখড়ার সড়কগুলোতেও শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল যানবাহনের আশায়। বিভিন্ন জায়গায় অটোরিকশা, ইজিবাইক, পিকআপ আর রিকশার জটলা। এখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।
কুমিল্লার আলামিন হোসেন রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য গতকাল দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আসেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে বসেন আলামিনসহ ছয় যাত্রী। তার আগে আলামিন বলেন, রাস্তায় বাস বাদে বাকি সব ধরনের পরিবহন চলছে। বহু মানুষ মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও পিকআপে চড়ে যাতায়াত করছেন। সেই সাহসে তিনিও বাড়ির পথে বেরিয়েছেন।
যাত্রাবাড়ীর মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কনস্টেবল মাহাবুবুর রহমান বলেন, করোনার প্রথমদিকে মানুষ কথা শুনত। দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর থেকে আর কাউকে আটকানো যাচ্ছে না। বাস ছাড়া আর সব গাড়ি চলছে। যাত্রাবাড়ীর মোড়ে মাঝেমধ্যে যানজটও হয়।
ফুটপাতগুলোতে হকারদেরও দেখা গেল। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ফল আর কাপড়।
প্রাইভেট কারের চালক নূর হোসেন যাত্রাবাড়ী মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি জানালেন, কয়েক দিন থেকে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লায় যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করছেন। আরও বহু কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ এভাবে যাত্রী টানছে।
এসব নিয়ে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে আমরা বহুভাবে নিষেধ করা সত্ত্বেও লোকজন কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে আমি নিজে গাড়ি আটক করেছি। তারপরও রাস্তায় অনেক গাড়ি।’
বাংলা৭১নিউজ/এবি