বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চালু হয়েছে আজব এক বিনিময় প্রথা। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ২৭টি রুটে আসা ইয়াবা ও আইসের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে খাদ্য, ওষুধ, নির্মাণসামগ্রী এবং কৃষি উপকরণসহ ২৯ ধরনের পণ্য। অবৈধ এ লেনদেনের মাধ্যমে মাদক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এক বিশাল চোরাচালান চক্র পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
সীমান্ত এলাকায় মাদক নিয়ে গবেষণাকারী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল (উত্তর ও দক্ষিণ) উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর মাদক পাচারের অর্থ বিনিময়ের পুরোনো ধারায় এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে ইয়াবা ও আইসের বিনিময় হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে নানান ধরনের পণ্য। এটি আমাদের নজরে আসার পর কাজ শুরু করেছি।
সাবেক কূটনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অপ্রচলিত বিনিময় প্রথা চালু হওয়া অবশ্যই দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা ও আইসের চালান কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলার কমপক্ষে ২৭টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলায় ২০টি এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রয়েছে ৭টি পয়েন্ট।
আগে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা ও আইসের বিনিময় হতো ডলার, সোনা কিংবা বার্মিজ টাকা। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর পরিবর্তন এসেছে বিনিময় প্রথার। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে সেখানে খাদ্য, ওষুধ, ভোগ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রী এবং কৃষি উপকরণের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্যের অবৈধ চাহিদা তৈরি হয়েছে। তাই ইয়াবা ও আইসের বিনিময় হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ২৯ ধরনের পণ্য পাচার হয় মিয়ানমারের রাখাইনে।
পাচার খাদ্যদ্রব্য ও কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, সার, জ্বালানি ও ভোজ্য তেল, ফল, পিঁয়াজ, রসুন, লবণ, জিরা, শুঁটকি, চিংড়ি পোনা, কফি, চকলেট এবং ফুচকা। নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, টিন, কাঠ, টাইলস, বালু। পোশাক ও বস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিস, কম্বলসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে কসমেটিকস, ইমিটেশন গহনা, মোবাইল ফোন ও সরঞ্জাম, সানগ্লাস এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যও পাচার হয়ে থাকে। এ ছাড়াও রয়েছে সোনা ও রুপাসহ নানান ধরনের দ্রব্য।
গত ৩ জুলাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ জয়নাল আবেদীন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তিনি জানান- তিনি মূলত কাপড় ব্যবসায়ী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে কাপড় সরবরাহ করে আসছিলেন। ২৪ লাখ টাকার সমমূল্যের কাপড় দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে তিনি ইয়াবার চালান সংগ্রহ করেন। চালান নিয়ে চট্টগ্রামে আসার পথে তিনি গ্রেপ্তার হন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025