ইসলামিক স্টেট (খোরাসান) সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে ‘অসাধারণ অংশীদার’ হিসেবে পাকিস্তানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক সেনা কর্মকর্তা।
এরই মাঝে, ভারত যার বক্তব্যকে ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরে রক্তক্ষয়ী হামলার উস্কানি হিসেবে দোষারোপ করেছে, সেই পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আগামী ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী দিবসে অংশ নিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড।
এদিকে, কানাডায় অনুষ্ঠেয় জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগদানের কয়েকদিন আগে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইঙ্গিত দিয়েছে—কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যস্থতার আগ্রহ ওয়াশিংটনের এখনো রয়েছে, যদিও নয়াদিল্লি বরাবরই বলে আসছে এটি একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়, এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের ভূমিকার প্রশ্নই ওঠে না।
মার্কিন সেনাবাহিনীর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কমান্ড (সেন্টকম)-এর প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন সেনেটের সশস্ত্র পরিষদ কমিটির সামনে বক্তব্য রাখার সময় বলেন, ‘তারা (পাকিস্তান) বর্তমানে সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই চালাচ্ছে, এবং এই ক্ষেত্রে তারা এক অসাধারণ অংশীদার।’
তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন আইএস-কে সন্ত্রাসীদের ধরার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে পরিচালিত অভিযানের জন্য।
জেনারেল কুরিল্লা উল্লেখ করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্প্রতি আইএস-কে-র সিনিয়র অপারেশনাল কমান্ডার মোহাম্মদ শরিফুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে, যিনি ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটে আত্মঘাতী বোমা হামলার মূল পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। সেই হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা ও ১৬৯ জন আফগান নাগরিক নিহত হন।
‘এ কারণেই আমাদের পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা দরকার,’ বলেন জেনারেল কুরিল্লা। ‘আমি মনে করি না বিষয়টি এমন যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা যাবে না। সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলোর ভিত্তিতে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেন্ট্রাল এবং সাউথ এশিয়া অঞ্চলে আমাদের জন্য সুযোগ রয়েছে, যেখানে আমরা পাকিস্তান ও অন্যান্য মধ্য এশীয় অংশীদারদের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত করতে পারি।’
এদিকে, পাকিস্তান সেনাপ্রধান মুনির ১৬ এপ্রিল ইসলামাবাদে প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সম্মেলনে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবনরেখা’ বলে মন্তব্য করেন এবং ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’কে সমর্থন করে বলেন— মুসলমানদের উচিত তাদের সন্তানদের হিন্দুদের থেকে নিজেদের পার্থক্য বোঝানো।
ভারতের অভিযোগ, তার এই সাম্প্রদায়িক বক্তব্যই ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওর কাছে বৈসারানে পর্যটকদের ওপর চালানো সন্ত্রাসী হামলার পেছনে প্ররোচনার ভূমিকা রেখেছে। সেই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক।
ভারতের ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত অঞ্চলে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলার পর, পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালে সীমান্তে চারদিন ধরে চলা সংঘর্ষ ১০ মে শেষ হয়। এর কিছুদিন পরই আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার।
‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছে কংগ্রেস
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তান সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানোকে বড় ধরনের ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘এই ব্যক্তিই (আসিম মুনির) পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার ঠিক আগেই এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র আদতে কী করতে চাচ্ছে’?
তিনি আরও বলেন, এটি ভারতের জন্য আরেকটি বড় কূটনৈতিক বিপর্যয়।
এদিকে ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ থামাতে তার প্রশাসন মধ্যস্থতা করেছিল এবং সেই সংঘাত ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ-এ রূপ নিতে পারত।
কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা প্রস্তাবের জবাবে নয়াদিল্লি বারবার স্পষ্ট করে বলেছে, এটি একান্তই দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার সুযোগ নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সবাই জানি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিটি পদক্ষেপই নেন দশকব্যাপী বৈরিতা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য। কাজেই, কাশ্মীর ইস্যুতে তিনি যদি ভূমিকা নিতে চান, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই’।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস