প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ২০, ২০২৫, ৯:৩১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৩১, ২০২৫, ১:৪০ পি.এম
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় রবিবার
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দলটির আপিলে রবিবার (আজ) রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য আপিল বিভাগের রবিবারের (আজকের) কার্যতালিকার এক নম্বরে রাখা হয়েছে মামলাটি। গত ১৪ মে রায়ের এই দিন ধার্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।আদালতে এদিন জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, ইমরান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
ইসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। আইনজীবী শিশির মনির পরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এবং সংসদীয় রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী এদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে কয়টা সংসদ হয়েছে, সঠিকভাবে নির্বাচন হয়েছে, সব নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছে এমনকি সরকারেও অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো ২০০৮ সালে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশন একটি নিবন্ধন ইস্যু করে।
কিন্তু হাইকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই নিবন্ধনটি বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছিলাম, আপিল মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। পহেলা জুন এই মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।’রায়ে প্রতীক নিয়ে নির্দশনা থাকবে, আশা জামায়াতের শুনানিতে দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে এই আইনজীবী আরও বলেছিলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করার মধ্যদিয়ে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্যদিয়ে পলিটিসাইজেশন অব জুডিশিয়ারি (বিচার বিভাগের রাজনীতিকীকরণ) করা হয়েছে।
যারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিলেন, তারা মূলত বাংলাদেশের উচ্চ আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। আমাদের এই যুক্তি আদালত (আপিল বিভাগ) অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আমারা প্রত্যাশা করবো আমাদের এই যুক্তির ভিত্তিতে ইনশাল্লাহ, জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফেরত পাবে।’ জামায়াতের প্রতীক বাতিলের বিষয়টিও আপিল শুনানিতে তুলে ধরেছিলেন আইনজীবীরা।এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য কী ছিল, জানতে চাইলে শিশির মনির বলেছিলেন, ‘২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার একটি সিদ্ধান্ত আছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণেই নির্বাচন কমিশন একটি পদক্ষেপ (প্রতীক বাতিলের) নিয়েছে। আমরা আদালতের কাছে একটি নির্দেশনা চেয়েছিলাম আদালতের কাছে। প্রতীক তো আর আদালত বরাদ্দ করতে পারেন না। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। আদালত যেন এই বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেন, যেন নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
আমরা আশা করছি, পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই বিষয়ে একটি নির্দেশনা সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দেওয়া হবে।’ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন। সে সময় ৩৮টি দললে নিবন্ধন দেওয়া হয়।এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও ছিল। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়। নিবন্ধন দেওয়ার পরের বছরই অর্থাৎ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- জানতে চাওয়া হয় রুলে। রুল জারির পর নিবন্ধন বাঁচাতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে জামায়াত।
কিন্তু চূড়ান্ত শুনানির পর সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। সংবিধানের সঙ্গে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয় ওই রায়ে। পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে জামায়াত। কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট সে আবেদন খারিজ করা হয়।
এরপর ওই বছর ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী, যা পরে আপিল হিসেবে গণ্য করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের পর দশম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
গত বছল ৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত এক আদেশে দলটির আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য ১২ নভেম্বর তারিখ রাখেন। এদিন জামায়াতের মনোনীত আইনজীবীর পক্ষে সময় চাইলে আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিলটি শুনানিতে ওঠে। সেদিন জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে জামায়াতের আইনজীবী প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে অন্য এক আইনজীবী সময় আবেদন নিয়ে দাঁড়ান।
আদালত ওই আবেদন না নিয়ে শুনানির সময় কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে দেন। কিন্তু পিছিয়ে দেওয়া সময়েও জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিলটি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবীত করার উদ্যোগ নেয় দলটি।
গত বছর ৩১ আগস্ট আপিল পুনরুজ্জীবীত (রিস্টোরেশন পিটিশন) করতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে জামায়াত। গত ২২ অক্টোবর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন সর্বোচ্চ আদলত। গত ৩ ডিসেম্বর থেকে শুনানি শুরু হয়। এর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে একটি আবেদন করেছিল জামায়াত। গত ১৪ মে চূড়ান্ত শুনানির পর সেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলেন জামায়াতের আইনজীবী।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025