দেশের অপরাধজগৎ দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর দখলে ছিল, যাদের প্রভাব রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের অনেকে বহু বছর ধরে দেশের বাইরে পালিয়ে থাকলেও দেশে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ঘটনায় ঘুরেফিরে আলোচনায় উঠে আসেন তারা।
মঙ্গলবার সকালে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আলোচনায় এসেছে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদের নাম। তাকেও গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে তিন ঘণ্টাব্যাপী এক গোপন অভিযান শেষে গ্রেফতার করা হয় সুব্রত বাইন ও তার এক সহযোগীকে। ঘটনাটি ঘটে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে, সোনার বাংলা মসজিদ সড়কের মীর মহিউদ্দিনের তিনতলা বাড়িতে। সেনাসদস্যরা ভোরে চারটি গাড়ি নিয়ে অভিযান চালিয়ে ভবন ঘিরে ফেলেন এবং নিচতলা থেকে দুজনকে আটক করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে মুখ না খুললেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে আসে আতঙ্ক ও চমকে ওঠার চিত্র। বাড়ির নিচতলায় প্রায় দেড় মাস ধরে ভাড়া থাকা দুজনের পরিচয় জানার পর এলাকায় ভয় ও উৎকণ্ঠার আবহ ছড়িয়ে পড়ে।
সুব্রত বাইনের সঙ্গে আলোচনায় আসা আরেক নাম মোল্লা মাসুদ। মতিঝিল-গোপীবাগের ত্রাস হিসেবে একসময় পরিচিত এই সন্ত্রাসী বহু বছর ধরে ভারতের মাটিতে আত্মগোপনে ছিলেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশের র্যাব ও ডিবির বরাত অনুযায়ী, মাসুদ কলকাতায় বসবাস করতেন ‘আবু রাসেল মো. মাসুদ’ নামে এবং এক ভারতীয় নাগরিক রিজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করে দীর্ঘদিন সেখানে অবস্থান করছিলেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস) তাকে গ্রেফতার করে। ব্যারাকপুর থানা-পুলিশ ও কলকাতার সিআইডি যৌথভাবে তাকে দুই দফায় ১৮ দিনের রিমান্ডে নেয়। তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ভাগ করে নেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
মোল্লা মাসুদের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ৩০টিরও বেশি মামলা। এর মধ্যে রয়েছে—বিএনপি নেতা কামাল মজুমদারের ভাগনে মামুন হত্যা, পুরান ঢাকার ‘মুরগি মিলন’ হত্যাকাণ্ড, খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় ট্রিপল মার্ডার এবং রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির অসংখ্য অভিযোগ।
তিনি মূলত ঢাকার বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করতেন এবং সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পৌঁছে যেত।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মগবাজারের একটি বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এমনকি ঈদ মৌসুমে পশুর হাট পর্যন্ত তার নিয়ন্ত্রণে থাকত।
সুব্রত বাইন ও মাসুদের সম্পর্ক
ঢাকার অপরাধজগতের একসময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ছিলেন মোল্লা মাসুদের ‘গুরু’। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঘোষিত ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন ছিলেন সুব্রত বাইন। তার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। অনেক আগেই ধর্ম পরিবর্তন করে তিনি ভারতে গা ঢাকা দেন। ভারতের একটি কারাগারে বর্তমানে তার অবস্থান বলে জানানো হয়।
অপরদিকে মাসুদও সরকারের ঘোষিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের একজন। এমন পরিস্থিতিতে সুব্রত বাইনের গ্রেফতারের পর পরই মাসুদের নাম নতুন করে আলোচনায় আসায় জল্পনা তৈরি হয়েছে—তাকে কি বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, নাকি এই গ্রেফতারের পেছনে রয়েছে আরও বড় কোনো সমঝোতা বা আন্তর্জাতিক সহায়তা?
শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কে কোথায়
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে, দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের শিষ্যদের মাধ্যমে এখনো রাজধানীতে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো—বিদ্যুৎ, কাওসার, জামাই শাহিন, রানা, ময়না, ফিরোজ, নান্টু, ভাগিনা জুয়েল, গালকাটা বিল্লাল, সুইপার মুন্না, মানিক, মাহবুব, রুমেল, মাহমুদ, আজিজ, মাতুয়াইলের তুহিন প্রমুখ। তাদের কার্যক্রম মূলত ঈদকেন্দ্রিক চাঁদাবাজিতে বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025