মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন শিগগির যুদ্ধবিরতি এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু করবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপ শেষে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।
এই ফোনালাপকে ট্রাম্প খুবই ফলপ্রসূ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, শান্তি আলোচনার শর্তগুলো দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে। ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্প আশাবাদী হলেও এখনি যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
তবে ভবিষ্যতে একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া কাজ করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন পুতিন। অন্যদিকে জেলেনস্কিও একে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এই আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে না থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুতিনের সঙ্গে আলাপ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও কবে বা কখন এই শান্তি আলোচনা শুরু হবে তা নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি ট্রাম্প। আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টও মার্কিন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির দাবি নিয়ে কিছু বলেননি।
ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত ফোনালাপের পর জেলেনস্কি ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ‘পরিপূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি’র প্রত্যাশার কথা বলেছেন। সতর্কতা উচ্চারণ করে তিনি এটাও বলেছেন যে, যদি এই আলোচনায় মস্কো প্রস্তুত না থাকে তাহলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়। কারণ এসব সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের নীতিগত বিষয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি সংক্রান্ত কোনো বিস্তারিত তথ্য তার কাছেও নেই। তবে রাশিয়া থেকে কোনো প্রস্তাব আসলে ইউক্রেন তখন তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে জানাবে।
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দুজনের আলাপ চমৎকার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, একটি যুদ্ধবিরতির জন্য শিগগির ইউক্রেন ও রাশিয়া আলোচনা শুরু করবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা এই যুদ্ধে ইতি টানবে।
তিনি আরও জানান, এই তথ্য তিনি জেলেনস্কিকে দ্বিতীয় একটি ফোনালাপে জানিয়েছেন, যেখানে অন্যান্য বিশ্বনেতারাও যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা হবে। কারণ অন্য যে কারও চেয়ে এ আলোচনার বিষয়ে ভালো জানে তারা।
জেলেনস্কি অবশ্য বলেছেন, আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিনিধিদের যথাযথ পর্যায়ে যুক্ত থাকা অবশ্যই জরুরি। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আলোচনার বাইরে সরে যায়, তাহলে কেবল একজনই উপকৃত হবে তিনি হলেন পুতিন।
দিনের শেষে হোয়াইট হাউজে এক অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে আসছে না। তবে তিনি নিজের মাথায় একটি লাল রেখা টেনে রেখেছেন যার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে কখন তিনি উভয় পক্ষকেই বলপ্রয়োগ করা বন্ধ করবেন।
গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প একাধিকার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, যদি মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে সরে আসবে। রাশিয়ার অবস্থান কী হতে পারে- এমন প্রশ্নে ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, পুতিন সম্ভবত যুদ্ধ নিয়ে ক্লান্ত এবং এর অবসান চান।
অন্যদিকে পুতিন যখন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ করেন তখন তিনি সোচি শহরের একটি মিউজিকের স্কুলে ছিলেন। তখন তিনি এই ফোনালাপকে অত্যন্ত খোলামেলা ও গঠনমূলক হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
তিনি আরও জানান, দুই পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছালে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হতে পারে এবং একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে সঠিক পথে রয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, যুদ্ধবিরতির সময়সীমার বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। যদিও ট্রাম্প অবশ্য এ বিষয়ে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর জেলেনস্কি দ্বিতীয়বার ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই আলোচনায় ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডের নেতারাও যুক্ত ছিলেন।
ভন ডের লেইন বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি আনার জন্য তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, শান্তি আলোচনার সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে পোপ লিওর প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য নেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে পুতিন তুরস্কে জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে নতুন পোপ ভ্যাটিকানকে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার স্থান হিসেবে প্রস্তাব দেন।
কিয়েভ আগে অবশ্য বলেছিল, পুতিনের শান্তিচুক্তির আহ্বানগুলো আসলে ফাঁপা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের শীর্ষ সহযোগী আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেন, পুতিন যুদ্ধই চায়। গত রোববার রাশিয়া ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালানোর পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ইউক্রেন জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে রাশিয়ার হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে একটি বেসামরিক মিনিবাসে হামলায় মারা গেছে ৯ জন। আর রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের ড্রোন হামলা প্রতিহত করেছে।
ট্রাম্প এই আলোচনার ভেন্যু হিসেবে তুরস্কে যেতে চেয়েছিলেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট এই প্রস্তাবে রাজি হননি। এর আগেও রাশিয়া অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল গত ৮ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় উদযাপন উপলক্ষেই ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু কিয়েভ এতে সম্মত হয়নি।
তখন ইউক্রেন রাশিয়ার ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। বরং তারা চেয়েছিল অন্তত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি। ইস্টার সানডে উপলক্ষে ক্রেমলিন ৩০ ঘণ্টার একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। তখন দুই পক্ষই লড়াই কমেছে বলে জানালেও একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকেই যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025