ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার জেরে মিছিলে-স্লোগানে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার রাতে হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট (বাম সংগঠনগুলোর জোট)। তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন। সাম্য হত্যার বিচার না হলে প্রয়োজনে অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সাম্যের বাবার অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইই আর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহত হন।
ঘটনার পর পুলিশ সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ময়নাতদন্তের পর সাম্যের লাশ গতকাল সকালে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এরপর তার লাশ সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সাম্যের মৃত্যুতে আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাবিতে শোক দিবস পালন করা হবে। এদিন অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাম্যের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক মিছিল করে ছাত্রদল। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করলে উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান শিক্ষার্থীদের শান্ত করার জন্য উপস্থিত হন। সেখানে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের ওপর চড়াও হলে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
পরে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনে যান এবং সেখানে শিক্ষার্থীরা ভাসমান দোকানে ভাঙচুর ও নেশাদ্রব্য গ্রহণ করছে এমন লোকদের ধরে প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাড়াও নিউমার্কেট থানা, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা।
এ সময় তারা ‘এক দুই তিন চার, ভিসি তুই গদি ছাড়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। এই সমাবেশে সাংবাদিকদের হেনস্তারও অভিযোগ ওঠে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
এই ইস্যুতে উপাচার্য প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক (উত্তর) সারজিস আলম। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া।
অথচ এই উদ্যান সংলগ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং অফিস থাকা সত্ত্বেও তারা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন না নিয়ে এসবের ভাগীদার হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের অনেক ভাই বোনকে বিপথে যেতে দেখেছি, একাধিক প্রাণনাশের ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল সাম্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখেছি।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক আর বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে নিয়মিত সাঁড়াশি অভিযান চালানো হোক, উদ্যান এলাকা সম্পূর্ণ নজরদারিতে আনা হোক, অপ্রয়োজনীয় ইট পাথরের অবকাঠামোগুলোকে ভেঙে প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
সারজিস আলমের বক্তব্যের অনুরূপ মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আবদুল কাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় সংগঠনটি।
তদন্ত কমিটি : এ ঘটনার তদন্ত এবং এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে লিগ্যাল নোটিস : শাহরিয়ার সাম্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন, প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।
গতকাল (বুধবার) ইমেইলে সংশ্লিষ্টদের এ নোটিস পাঠানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজিপি ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবের ডিজিকে ইমেইলে এ নোটিস পাঠানো হয়।
নোটিসদাতারা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাইম সরদার (অয়ন) ও অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী। নোটিস পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত : বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রমনা পার্কের মতো পরিচালনা করার পরিকল্পনা চলছে। যেখানে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে। যেমন রাত ৮টা বা সাড়ে ৮টার পর বন্ধ করে দেওয়া, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।
বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ-কালকের মধ্যে আপনারা এটি বন্ধ দেখতে পাবেন। গেটসংশ্লিষ্ট যে ভাসমান দোকানগুলো রয়েছে, সেগুলো স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ হবে। এটি দেখাশোনার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটা মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025