চিরনিদ্রায় ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। আজ (১০ মে) শনিবার দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে দাফন করা হয়েছে তাকে। ওই কবর-ফলকে লেখা রয়েছে বাবা আব্বাসউদ্দিন আহমদের সেই বিখ্যাত গানের কলি – ‘কি ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে / কোন্ দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে’।
এর আগে বেলা ১টায় রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যু ও দাফনের হালনাগাদ তথ্য নিশ্চিত করেন শিল্পীর স্নেহধন্য গীতিকার-সুরকার ও সংগ্রাহক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক।
উপমহাদেশের স্বনামধন্য এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি নিজেও ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বাবা আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন পল্লিগীতির সম্রাট। বাংলার পল্লীসংগীতকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তার চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী।
তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। তার বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের অন্যতম খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী। আব্বাসীর মেয়ে নাশিদ কামাল নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবে শ্রোতাদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। তার স্ত্রী আসমা আব্বাসী একজন শিক্ষক ও লেখিকা, যিনি গত বছর প্রয়াত হন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কুচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতায় তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ, এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এ শিল্পী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সংগ্রহে কয়েক হাজার লোকগান রয়েছে। তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, নজরুলগীতি পরিবেশন করে এদেশের সংগীতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ইউনেসকোর বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি, নজরুল ও আব্বাসউদ্দীনের ইংরেজি জীবনী লেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত গবেষক।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘আমার ঠিকানা’, ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আপন ভুবন’সহ কয়েকটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা লাভ করে। শুধু সংগীতচর্চা ও লেখালেখিতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমাজসেবায়ও সক্রিয় ছিলেন আব্বাসী। রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে অনেক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বরেণ্য এই শিল্পী। সংগীত ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য একুশে পদকসহ দেশ-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’, ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025