জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলার ঘটনা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল। চিরবৈরী দুই প্রতিবেশীর চলমান উত্তেজনায় পাকিস্তানে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা মাঝেই মঙ্গলবার সকালের দিকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ৪৮ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে ব্রিফ করেছেন অজিত দোভাল। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত্রুপক্ষের হামলায় বেসামরিক প্রতিরক্ষা কার্যকারিতা যাচাইয়ে আগামীকাল (বুধবার) দেশের সব রাজ্যকে মক-ড্রিল আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম সব রাজ্য সরকারকে ওই নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা মহড়ার একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত কয়েক দিনে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে পাকিস্তানের নিষিদ্ধ-ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার বিরুদ্ধে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।
এর আগের এক বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অজিত দোভাল ও জেনারেল চৌহানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ‘অভিযানের ধরন, লক্ষ্যবস্তু এবং সময় নির্ধারণে পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেন নরেন্দ্র মোদি।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। পেহেলগামে এই হামলার ঘটনাকে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে দাবি করা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতের বিজেপি সরকার বলছে, পেহেলগামে হামলার পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘ডিপ স্টেট’র প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে আগেও সীমান্ত পেরিয়ে হামলা সহায়তার অভিযোগ করেছে ভারত। যদিও পাকিস্তান সরকার পেহেলগাম হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার এবং নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছে।
পেহেলগামে হামলার ঘটনার পরপরই ভারতের সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের সব ধরনের ভিসা বাতিল এবং ৬৫ বছর পুরোনো সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। সিন্ধু ও এর দুটি উপনদীর পানি ব্যবহার করে পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধুর পানি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ভারত অতিরিক্ত জলাধার নির্মাণ করতে পারতো না। কিন্তু চুক্তিটি স্থগিত করায় ভারত নতুন বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।
নয়াদিল্লির এসব পদক্ষেপের জবাবে ভারতের সঙ্গে ভিসা ও ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করে পাকিস্তান। একই সঙ্গে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা হলে তা ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হবে বলে জানিয়ে দেয় ইসলামাবাদ। চলমান উত্তেজনায় উভয় দেশই সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ